মায়ের মাটি কাটার টাকায় ডাক্তার হওয়া সেই রিপন এবার মায়ের নামে যা করতে চান..!!
দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে সংবাদটি স্থান করে নেয় বিদেশেও। এরপর দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য হৃদয়বান ব্যক্তি ফোন করে তার লেখাপড়াসহ সার্বিক সহযোগিতার প্রস্তাব দেন মায়ের সেই সন্তানকে।
ওই নিউজের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্যও করেছিলেন। লিখেছিলেন, ‘মা যে সন্তানের জন্য এত কিছু করছে শেষ পর্যন্ত সন্তান মাকে দেখবে তো’। আরো অনেক মন্তব্য। তবে এসবের সাবলীল জবাব দিয়েছেন সন্তান রিপন বিশ্বাস।
যখন থেকেই গ্রীণলাইফে ভর্তি হয়েছেন কলেজের যেকোনো অনুষ্ঠান হলেই মাকে সবার সামনের আসনে বসান এবং কখনো নিজের পরিচয় দিতে কৃপণতা করেননি যে তিনি গরিব ঘরের সন্তান। গর্বের সঙ্গে তিনি তার মাকে পরিচয় করে দেন তার বন্ধুদের সঙ্গে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন অনেক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান।
গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে পারছে না অনেক ছাত্রছাত্রীর পরিবার। এসব সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর এগিয়ে এসেছেন দেশের অসংখ্য হৃদয়বান। তারা আর্থিক সহযোগিতা করায় ভর্তির সুযোগ হয়েছে তাদের।
সাহায্যকারী এসব মানুষের কৃতজ্ঞতা কি মনে থাকবে হতদরিদ্র পরিবারের ওই সন্তানদের? নাকি পড়ালেখার ব্যবস্থায় ভুলে যাবেন তারা। সাধারণ মানুষের এসব উদারতা থেকে
কি কোনো শিক্ষা নেবেন তারা? এমন প্রশ্ন জন্মতেই পারে যে কারো মনে।
এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় মানিকগঞ্জের সেই মায়ের সন্তান রিপন বিশ্বাসের সঙ্গে। যিনি অসংখ্য মানুষের সহযোগিতায় রাজধানীর গ্রীণলাইফ হাসপাতালে ডাক্তারি পড়ছেন।
মনে রেখেছেন ওইসব মানুষকে, যারা সাহায্য করেছেন তাকে। আর এজন্য প্রতিনিয়ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ওই মানুষগুলো।
সেই হৃদয়বান মানুষগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রিপন লিখেছেন, ‘তার গায়ের চামড়া দিয়ে তাদের জুতো বানিয়ে দিলেও ঋণ পরিশোধ হবে না।’
“আমাদের কণ্ঠস্বর’এর পাঠকের জন্য নিউজ পোর্টালটিকে পাঠানো রিপন বিশ্বাসের সেই লেখাটি হুবহু প্রকাশ করা হলো।
“আমি মো. রিপন বিশ্বাস। বর্তমানে আমি গ্রীণলাইফ মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। এই পর্যায়ে আসতে পারবো তা কখনো আমি কল্পনাও করিনি।
কিন্তু ধৈর্য, সততা আর ভাগ্য আমাকে নিয়ে এসেছে। আমি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কিন্তু পরিশ্রম আর ভাগ্য আমাকে আমার স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। এক সময় পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য অনেক মানুষের সাহায্য পেয়েছি। তারা আমার কাছে ভগবানতুল্য।
পাঁচ বছর বয়সে আমার বাবা মারা যান। তারপরও বাবার মতো আদর ভালোবাসা দিয়ে যিনি আমাকে সাহায্য করেছেন, তিনি আমার আদর্শ, যার ঋণ আমার গায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলেও শোধ করা সম্ভব নয়। তিনি হলেন প্রথম আলোর সাংবাদিক অরূপ রায়।
আমি পড়াশুনা সম্পর্কে যখন বুঝতে শিখেছি তখন আমার বয়স ছিল ১০ বছর। সবকিছু মিলিয়ে আমি অথৈ সমুদ্রে পড়ে গিয়েছিলাম।
মেডিকেলে পড়া তো কখনো ভাবতেও পারিনি। আর তাই যারা মেডিকেলে পড়তে ইচ্ছুক তাদের সার্বিক নির্দেশনার জন্য নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছি ‘আরবিসি একাডেমি’ যেখানে একজন মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী তার সঠিক নির্দেশনা পাবে।
তাছাড়াও আমাকে আরো যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের কথা আমি কোনো দিনও ভুলতে পারবো না। তাদের কাছে আমি চিরঋণী।
তারা হলেন- অ্যাডভোকেট চাঁন মিয়া, প্রফেসর মাহফুজা খানম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ (আইনমন্ত্রী), ডা. আ ফ ম রুহুল হক
(স্বাস্থ্যমন্ত্রী) ও এ বি এম. আনোয়ারুল হক (সাবেক সংসদ সদস্য মানিকগঞ্জ-১), ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম (এডুকেশন ফর অল),
মিসেস বি. দাস (জোবেদা রহমান স্টাইপেন্ড ফান্ড), অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক (জজকোর্ট মানিকগঞ্জ), সাখাওয়াত স্যার, লিপি
ম্যাডাম (সাংবাদিক প্রথম আলো), বি.এম. খোরশেদ (সাংবাদিক জাগোনিউজ), আখতারুজ্জামান মাসুদ (ইউপি চেয়ারম্যান) ও রঞ্জিত
সরকার, ডা. খালেদা বেগম (সভাপতি, বঙ্গবন্ধু মহিলা পরিষদ)। এছাড়াও আমার ভর্তির পরে মেডিকেল কলেজের শিক্ষকবৃন্দ ও বন্ধুবান্ধব।
এক সময় আমি সবার কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে আজ এ পর্যন্ত এসেছি। যারা আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণের সময় সাহায্য করেছেন হয়তো তারা আমার কাছে বিনিময়ে কিছুই চায় না।
কিন্তু তাদের আদর্শ বুকে নিয়ে আমি অন্য মানুষের পাশে দাঁড়াবো। সবকিছু ঠিক থাকলে পাস করার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমার মায়ের নামে একটা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবো।
যেখান থেকে গরিব ও দুস্থ মানুষ বিনা পয়সায় সেবা পাবেন। পূরণ হবে মায়ের স্বপ্ন।”
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন