মা আমাদেরকে চায়নি, কারণ আমরা দেখতে ভালো নই…
“জানি না কেন এসব লিখতে বসলাম। আমি যা লিখবো তা আদৌ কোন সমস্যা কিনা, সে ব্যাপারেও আমি সন্দিহান। তবুও মনে হলো কথাগুলো কাউকে না বলতে পারলে আমি মরেই যাবো।
আমার বাড়ি ঢাকা। আমি খুব শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে। আমাদের পরিবারে এমন এক পরিবেশ বজায় থাকে যেখানে জীবনের জন্য পড়াশোনা নয়, পড়াশোনার জন্য জীবন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি ভালো ছাত্রী ছিলাম না। তাই নিয়ে আমার বাসার লোকজনের হতাশার অন্ত ছিলো না। আর আমার আম্মু এমন একজন মানুষ যে কিনা ছেলে বলতে অজ্ঞান। আমরা তিন বোন। আমার ছোট দুই বোন এই ছেলের আশাতেই নেয়া। আপু, আমাদের পরিবার শিক্ষিত হলে কী হবে, এতে তাদের মনমানসিকতার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। আমার মা আমাদেরকে পছন্দ করেন না খুব একটা, কারণ আমরা মেয়ে আর আমার মায়ের ছেলে দরকার ছিলো। আমার বাবার এমন কোন মনোভাব আজ পর্যন্ত পাই নি। আমার মা আমাদেরকে প্রচুর মানসিক যন্ত্রণা দিতো, কারণ আমরা দেখতে সুন্দর নই। উনি আমার সাথে খুব কম সময়ই কালি আর খাটো এইসব উপাধি না দিয়ে কথা বলেছে। আর আপু আমার মা ভয়াবহ রকমের ধর্মান্ধ। সে ঘরের মধ্যেই আমাদের পারলে বোরকা পরিয়ে রাখে, আর সবসময় মনে করিয়ে দিতো যে সে ছেলে চেয়েছিলো আমাদের চায়নি।
আর আমার আব্বা আবার অন্য রকম। তিন মেয়ে বলতে সে অজ্ঞান, এতোটাই যে আমাদেরকে সে অতিরিক্ত কেয়ার করে। ভর্তি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত আমার জীবনের কোন সিদ্ধান্ত, এমনকি আমি কোন বেলা কী খাবো, তা পর্যন্ত ঠিক করতে পারিনি। আমার বাবা সবসময় আমাকে ছোট বাচ্চার মতো কেয়ার করতো, অথচ আম্মু যে এতো কষ্ট দিতো তা নিয়ে কিছুই বলতো না। আপু এগুলো কি শুনতে লেইম লাগছে? হয়তো। কিন্তু অনেক ছোট ছোট ঘটনা যখন দিনের পর দিন আপনার সাথে ঘটতে থাকবে তখন তা আর ছোট ঘটনা থাকে না। আমি তখন ছোট ছিলাম, প্রতিনিয়ত দুই মেরুর আচরণে আমার অস্থির অবস্থা। তাই আমি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকার বাইরে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চলে আসি। ভেবেছিলাম পরিবার থেকে দূরে থাকি, পরিবারের সাথে ও সম্পর্ক ভালো থাকবে, আমিও নিজের মতো করে নিজেকে গুছিয়ে নিবো।
এখানে আসার কিছুদিন পরেই আমার প্রেম হয়। প্রথম প্রথম সবকিছু খুব সুন্দর আর স্বপ্নের মতো ছিলো। কিন্তু প্রথম টার্ম এর রেজাল্ট ভালো হওয়ার পরে থেকে সব বদলে যায়, আমার চারপাশের বন্ধু বান্ধবীরা এতো পরিমাণে চক্রান্ত আর পলিটিক্স শুরু করে যে আমি হতভম্ব। এখন দেড় বছর পরে আমার এখানে আমার প্রেমিক ছাড়া আর একটা মানুষ নেই যার সাথে কথা বলতে আমার রুচি হয়। আমার প্রেমিক আমার বড়, ওর এখন ফাইনাল ইয়ার চলছে। ফলে ও আমাকে খুব একটা সময় দিতে পারে না স্বাভাবিকভাবেই। তবু যতটুকু সময় পায় আমাকে দেয়, কারণ ও ছাড়া আমার এখানে আর কেউ নেই। আমাকে অনেক বলে যে আমার ক্লাসমেটদের সাথে মিশতে, এভাবে আমি নিজের ক্ষতি করছি। কিন্তু আমি পারি না। ওরা সবাই এমনই, পুরা ভার্সিটির সবাই। বুকে জড়িয়ে ধরে পেটে ছুড়ি মেরে বসবে। যাকে আমি মন থেকে পছন্দ করি না তার সাথে ঘুরাফেরা করার মতো ভনিতা আমার হয় না। কিন্তু এভাবে দিনের পর দিন একা থাকতে থাকতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমার আজকাল কাউকে বিশ্বাস হয় না, মানুষ দেখলেই ভয় করে। রেজাল্ট ভালো হওয়া শুরু করার পরে থেকে আমার বাসার যাবতীয় সমস্যা অধিকাংশ দূর হয়ে গেছে। কিন্তু আমি দিনদিন কেমন বদলে যাচ্ছি। আজকাল কেউ কিছু ভালো কথা বললেও সন্দেহ হয় যে কোন মতলবে বলছে না তো?
দিনের পর দিন একা একা থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত বিরক্ত ক্ষুব্ধ। আমার নিজেকেই এখন নিজের সহ্য হয় না। মনে হয় আমারি সমস্যা নয়তো আমার কোন বন্ধু থাকবে না কেন? আমি জানিনা এটা কোন সমস্যার মধ্যে পড়ে কিনা। তবুও লিখলাম কারণ আমার মনের একান্ত কথাগুলো শোনার মতো কেউ নেই। আমার কি করা উচিৎ বলবেন কি?”
পরামর্শ:
আপু, প্রথমেই বলি আপনি যে মনে করছেন বিষয়টি কোন সমস্যা নয়, এটা মারাত্মক ভুল ধারণা। আপনার এই ব্যাপারটি মারাত্মক একটি সমস্যা। সারা পৃথিবীর সবাইকে খারাপ মনে করা, সবাই পিঠে ছুরি মারবে এমনটা মনে করা, সবাইকে সন্দেহ করা, সবার কাজের পেছনে উদ্দেশ্য খোঁজা… এগুলো আসলে মানসিক বিপর্যয়ের লক্ষণ। ইনফ্যাকট, বড় কোন মানসিক রোগেরও লক্ষণ হতে পারে। দীর্ঘদিন মানসিক চাপে বড় হতে হতে এমনটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই আপু, আপনি অতি অবশ্যই একজন ভাল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবেন। আপনার জন্য এটাই সবচাইতে উচিত কাজ হবে।
আমি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নই। তারপরও কিছু কথা বলছি, দেখুন যদি ভালো লাগে। আপনার মা আপনাদের সাথে যা করেছেন, সেটা সাধারণত আমাদের সমাজের বাবারা করে থাকেন। কোনকিছু অতিরিক্ত আসলে যে কোন মানুষেরই চোখ অন্ধ করে দেয়। আপনার আম্মার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাঁর কোন ধারণাই নেই যে ধর্ম কন্যাদের সাথে খারাপ ব্যবহারের অনুমতি দেয় না। কিন্তু আপু, মায়ের এই ধারণা একদিন পরিবর্তিত হবে। জীবনের শেষ পর্যায়ে কন্যারা যখন তাঁর অবলম্বন হয়ে উঠবে, তখন তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারবেন, তার আগে নয়। মা তো, মন থেকে মাফ করে দিন। আর সেই চেষ্টা করুন যেন একদিন মাকে দেখিয়ে দিতে পারেন যে আপনারা বোনেরা ছেলেদের চাইতে কোন অংশে কম না।
আর আপু নিজেকে কেন এত অসহায় ভাবছেন বলুন তো? মানুষের চেহারাই কি সব? চেহারা সর্বস্ব মানুষ হলে আপনি নিজেই কি ভালো থাকতেন? আপনার এমন অনেক কিছু আছে, যা বেশিরভাগ মানুষেরই থাকে না। ভার্সিটির ভালো রেজাল্ট আছে, একজন ভালো মনের ভালোবাসার মানুষ আছে, একজন স্নেহ প্রবণ পিতা আছে। আর কি চাই আপনার? সবচাইতে বড় সত্য এই যে, পৃথিবীতে খুব কাছের বন্ধু ২/১ একজনই হতে পারে। কারো কারো খুব কাছের কোন বন্ধুই হয় না। সেটা নিয়ে দুঃখ পাবার কিছু নেই। সমাজে চলতে গেলে সবার সাথেই মিশতে হয়। কিন্তু সেই মেশার অর্থ এই নয় যে নিজের সমস্ত গোপন কথা তাঁকে বলে দিতে হবে। আপনি যদি কাউকে নিজের গোপন কিছু নাই বা বলেন, সে আপনার ক্ষতি করবে কীভাবে?
দেখুন আপু, আপনার প্রেমিকই আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড। আরও আছে আপনার বোনেরা। বাইরে কারো মাঝে গভীর বন্ধুত্ব খোঁজা নিয়ে প্লিজ মন খারাপ করবেন না। জীবনে খুব বেশি মানুষের ভিড় আসলে মোটেও ভালো কিছু নয়। এতে অহেতুক সমস্যাই বাড়ে শুধু। যদি জীবনে শান্তিতে ও স্বস্তিতে থাকতে চান, তাহলে খুব অল্প কিছু একেন্ত মানুষের বাইরে বেশি মানুষের সংস্পর্শ না থাকাই ভালো। বিশেষ করে আপনার মত চাপা স্বভাবের মানুষের জন্য।
তাই আপু, নিজের জীবনে যা নেই তা নিয়ে হা হুতাশ করবেন না। বরং জীবনের ভালো দিকগুলো তাকিয়ে দেখুন। দেখবেন আস্তে আস্তে সব বদলে যাচ্ছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন