মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

বনশ্রীতে ভাই-বোন হত্যা

মা মাহফুজার মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন

রাজধানী রামপুরার বনশ্রীতে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নুসরাত আমান অরণী (১২) ও আলভী আমান (৭) নামে দুই ভাই-বোনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতদের মা মাহফুজা মালেক জেসমিন জড়িত, এমনটিই দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমন দাবি কোনভাবেই মানতে পারছে না মাহফুজার পরিবার।

এ অবস্থায় মাহফুজার সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তিনি মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে মনোবিজ্ঞানীদের মতে মানসিক অসুস্থতা হত্যায় প্ররোচিত করে। মানসিক বৈকল্যে ভোগা একজনের পক্ষে কাউকে হত্যা করা অস্বাভাবিক নয়। কেউ মানসিকভাবে বিকার বা বিষাদগ্রস্ত থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো অস্বাভাবিক কিছু নয়।

মাহফুজার ভাই জাকির হোসেন সরকার জানান, আমার বোন সন্তানদের অনেক ভালবাসতো। সে কাউকে হত্যা করতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন দাবি করলেও আমার বোন তো নিজ মুখে সবার সামনে বলেনি যে সে তার সন্তানদের হত্যা করেছে।

একই কথা সাংবাদিকদের বলেছেন মাহফুজার ছোট বোন আফরোজা মালেক মিলা। তিনি বলেন, আপার কোনো মানসিক সমস্যা ছিল বলে আমার জানা নেই। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা কাল্পনিক। দুশ্চিন্তার কারণে সে নিজের বাচ্চাদের মেরে ফেলবে এটা হতে পারে না। আপার মেয়েটাও ভালো ছাত্রী ছিল। সন্তানদের নিয়ে সে যে খুব দুশ্চিন্তা করতো তা কিন্তু না।

‘আমার মেয়েটা গতবার ক্লাসে সেকেন্ড হয়েছিল, এবার ফোর্থ হয়েছে। তখন আপা আমাকে বললো ‘ও যেভাবে পড়াশোনা করছে, সেভাবেই করুক। যা রেজাল্ট হচ্ছে হোক, তুই ওকে কোনো চাপ দিস না’ যোগ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়্যারম্যান ড. জিয়া রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, সমাজে এমন মানুষের জন্য মনোবিজ্ঞান- মনোবিজ্ঞানী খুবই জরুরি। যেমনটা বিদেশে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়াটাকেও অনেকেই লজ্জার বিষয় বলে মনে করেন। এই ঘটনায় আরও গভীরে তদন্ত হওয়া দরকার। পরিবারের লোকজন সচেতন হলে এ ধরনের ঘটনা কখনোই ঘটতো না।

অন্যদিকে মাহফুজা মালেক জেসমিন মানসিক অসুস্থতা থেকেই দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন তার স্বামী আমান উল্লাহ। ঘটনার পর মাহফুজা আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন এবং দুশ্চিন্তা থেকে মাথায় যন্ত্রণার কারণেই তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন এমনটিই আমানউল্লাহ এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

এজাহারে লেখা হয়, আসামি মাহফুজা মালেক জেসমিন ছেলে ও মেয়ের স্কুলের পড়ালেখার রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় মানসিকভাবে টেনশন করে। টেনশনে তার মাথায় যন্ত্রণা হয়। সে জানায়, ছেলেমেয়ে না থাকলে টেনশন হতো না। মাথার যন্ত্রণার কারণে জেসমিন আমার ছেলে ও মেয়েকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। আমার সামনে র‌্যাবকে সে জানিয়েছে, ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে জেসমিন হঠাৎ করে আমার মেয়ে অরণীকে খাট থেকে টেনে হিঁচড়ে ফ্লোরে নামিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর একইভাবে খাটে ঘুমিয়ে থাকা আমার ছেলে আলভীকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তবে অতীতে এসব টেনশনের কথা কখনও তার স্ত্রী তাকে বলেননি। টেনশনের বিষয়টি প্রকাশও করেনি। দুই সন্তানকে হত্যার পর জেসমিন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল বলে আমার সামনেই র‌্যাবকে জানিয়েছে।

এজাহারে আরও উল্লেখ রয়েছে, ২৯ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিদিনের মত আমার বর্তমান কর্মস্থল উত্তর বাড্ডা পূর্বাঞ্চল এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে যাই। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমার স্ত্রী তার মোবাইল ফোন থেকে আমাকে ফোন দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, আমার মেয়ে ও ছেলে খুবই অসুস্থ। তাদের হাসপাতালে নিতে হবে। দ্রুত আমাকে বাসায় আসতে বলে। সে আরও জানায়, আমার শ্যালিকা আফরোজা মালেক মিলাকে বাসায় আসার জন্য বলেছে। আমি তাৎক্ষণিক বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করি। রাস্তায় গাড়ি জ্যামে থাকায় আমার ফোন থেকে রামপুরা মেরাদিয়ায় আমার বন্ধু জাহিদকে ফোনে বাসায় যেতে বলি। জাহিদ তাৎক্ষণিক আরেক বন্ধু হীরাকে নিয়ে আমার বাসায় আসে। জাহিদ, হীরা ও শ্যালিকা মিলা বাসায় এসে দেখে, আমার মেয়ে মেঝেতে পড়ে আছে এবং ছেলে খাটে নিথর হয়ে পড়ে আছে। তারা দুই সন্তানকে লিফটে করে নামিয়ে বনশ্রীর আল রাজী হাসপাতালে নিয়ে আসে। ইতোমধ্যে আমিও আল রাজী হাসপাতালে পৌঁছে যাই। আল রাজী হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার মেয়ে ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তাদের মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর বিষয়ে আমার স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে যে খাবার নিয়ে আসা হয়েছিল, তা গরম করে খাওয়ানোর কারণে বিষক্রিয়া হয়ে দুই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা তার কথায় আস্থা না রেখে ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্ত শেষে জানতে পারি তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন জানান, কেউ বিষাদগ্রস্ত বা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত থাকলে এমন নির্মম ঘটনা ঘটানো সম্ভব। আমার মনে হয় ওই মা যখন ঘটনাটি ঘটালেন তখন তিনি সাইকোলজিক্যালি অসুস্থ ছিলেন। সাইকোলজির ভাষায়, এটি ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার। এ টার্মের মুড নিচে নামলে হোমিসাইড বা সুইসাইড হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হোমিসাইড ডেভেলপ করলে যে কাউকে হত্যা করা সম্ভব।

আমান উল্লাহর বন্ধু জাহিদুল ইসলাম জানান, আমানের সঙ্গে আমার ১২ বছরের বন্ধুত্ব। যতটুকু চিনি তিনি (মাহফুজা) খুবই সহজ-সরল আর ভালো মানুষ। ঝগড়াটে বা উগ্র স্বভাবের ছিলেন না। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে মা-বাবা দুশ্চিন্তা করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এ জন্য ভাবির মতো মানুষ নিজের সন্তানদের মেরে ফেলবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমানের মুখে কখনো শুনিনি তাদের বৈবাহিক জীবনে কোন সমস্যা ছিল অথবা পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল।

তিনি আরও জানান, ভাবির মানসিক সমস্যা আছে বলে আমার জানা নেই। তাকে সব সময় সুস্থই মনে হয়েছে। তবে গতকাল কয়েকটি চ্যানেলে ভাবির বোনের ভাষ্য শুনলাম। সেখানে তিনি জানিয়েছেন ভাবির মার নাকি ‘মানসিক সমস্যা’ ছিল।

ঢাকার হাকিম আদালতে শুক্রবার হাজির করানোর পর চুপচাপ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মাহফুজাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। শুনানির সময় তিনি কোনো কথা বলেননি। এজলাসে আনা নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নেরও জবাব দেননি। আদালতে আসামির আইনজীবী মো. শাফায়েত আলী জামিনের আবেদন করে বলেন, মাহফুজার মানসিক চিকিৎসা দরকার, তিনি অসুস্থ। রিমান্ডে নিলে তা হবে না। রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

এদিকে, বৃহস্পতিবার র‌্যাব সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মোটামুটি সুখী ও স্বচ্ছল পরিবারই ছিল তাদের। নুসরাত আমান অরণী ভিকারুন্নেছা নূন স্কুলের ৫ম শ্রেণীতে এবং ছোট ভাই আলভি আমান হলি ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের নার্সারীতে অধ্যয়নরত ছিল। সন্তানদের স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় থাকতেন মা মাহফুজা। তার ধারণা ছিল, তার সন্তানেরা বড় হয়ে কিছুই করতে পারবে না। তাই তিনি নিজের ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন সন্তানদের। ক্যারিয়ারের দুশ্চিন্তা থেকেই নিজের দুই সন্তানকে খুন করেছে মা মাহফুজা। ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রথমে অরণীকে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে একপর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে উভয়েই বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে যায়। কিছু সময় পর মেয়ের শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে তিনি তার ছোট ছেলে আলভিকে খাটের উপর ঘুমন্ত অবস্থায় একইভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি লাশ দুটির সামনে কিছু সময় ধরে কান্নাকাটি করেন। পরে খাবারের বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে সকলকে অবহিত করেন।

সন্তানদের ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা ছাড়া অন্য কোনো কারণ ছিল কিনা জানতে চাইলে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মাহফুজা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। তিনি ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করেছেন। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটি কলেজে শিক্ষাকতাও করেছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে তিনি সব সময় উদ্বিগ্ন ছিলেন। আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ঘটনার আরও তদন্ত হবে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে আরও কোনো কারণ ছিল কি না।

জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে শনিবার সন্ধ্যায় তিনি জানান, মাহফুজা বার বার লেখাপড়ার বিষয়টিই বলছেন। কিন্তু আমরা আরো জিজ্ঞাসাবাদ করবো। সব কিছু খতিয়ে দেখবো। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। খাবারও ঠিকভাবে খাচ্ছেন।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন

জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে ‍সুবিধা পাওয়া যাবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন

ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন

  • শাকিব: আমার ক্যারিয়ারের সব বিগ হিট সিনেমা ঈদ ছাড়াই এসেছে
  • এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১% মানুষ, সংস্কার শেষে ৬৫.৯%
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুপক্ষের সংঘর্ষ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ১০ মৃত্যু
  • জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করার পরামর্শ কমিশনের
  • দেশের সংকটে যে সমাধান দেখছেন তারেক রহমান
  • যে কারণে প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • ‘হেফাজতের আপত্তির মুখে’ নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা বন্ধ
  • স্বর্ণের দামে ফের বড় লাফ, এগোচ্ছে নতুন রেকর্ডের দিকে
  • টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
  • রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
  • যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা