রাজশাহীতে হোটেলে জোড়া লাশ
মিজান ও সুমাইয়াকে পরিকল্পিত হত্যা, আটক ৪
রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার এলাকার নাইস ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রছাত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে পারে কয়েকজন। হোটেলের কক্ষের পরিবেশ এবং দুজনের দেহের জখমের ধরন দেখে এমনটিই মনে করে পুলিশ।
আজ শুক্রবার দুপুরে নাইস ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে দুই ছাত্রছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের মধ্যে মিজানুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে এবং সুমাইয়া নাসরিন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়তেন।
হোটেলে পূরণ করা ফরমে লেখা আছে, নিহত মিজানুরের (২৩) বাবার নাম ওমেদ আলী এবং সুমাইয়া নাসরিনের (২০) বাবার নাম আবদুল করিম। হোটেল রেজিস্টারে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে তাঁরা পাবনার রাধানগর এলাকার নাম উল্লেখ করেছেন। স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার দবিরগঞ্জের পাঠানপাড়া এলাকা। পেশা হিসেবে তাঁরা চাকরির কথা উল্লেখ করেছিলেন।
হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, মিজানুর ও সুমাইয়া ২০ এপ্রিল রাত ১০টার পরপর হোটেলের রিসিপশনে আসেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন খান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে তাঁদের খুন করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজও পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেলটির সুপারভাইজারসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। এঁরা হলেন হোটেলের সুপারভাইজার রবিউল ইসলাম (৩৫), হোটেল বয় নয়ন হোসেন (২৫), ফয়সাল আহম্মেদ (২৬) ও বখতিয়ার হোসেন (৩০)। আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হোটেল থেকে তাঁদের আটক করা হয়।
হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, ২০ এপ্রিল রাত ১০টার পরপরই মিজানুর ও নাসরিন স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেলে ওঠেন। হোটেলের তিনতলার ৩০৩ নম্বর কক্ষ তাঁদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল বয় ফয়সাল ওই কক্ষে খবরের কাগজ দিতে যান। এ সময় কক্ষটির দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। ফয়সাল তাঁদের অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাননি। পরে ওই কক্ষের টেলিফোনে বারবার ফোন করা হলেও কেউ ফোন ধরছিল না। তখন বিষয়টি বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ওই কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে দুজনের মৃতদেহ পায়।
ওসি শাহাদাত হোসেন খান জানান, নিহতদের মধ্যে মিজানুর রহমানের মরদেহ মেয়েটির ওড়না দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। তাঁর হাত বাঁধা ছিল। ঝুলন্ত অবস্থায় পরনের প্যান্ট খুলে পায়ের গোড়ালিতে আটকে ছিল। সুমাইয়ার মরদেহ মুখে বালিশচাপা দেওয়া অবস্থায় পড়ে ছিল বিছানার ওপর।
ওসি আরো জানান, নিহত সুমাইয়ার মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাতের চিহ্ন আছে। আঘাতের পর বালিশচাপা দিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত।
শাহাদাত হোসেন খান জানান, ধারণা করা হচ্ছে তাঁদের দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর বাইরে থেকে স্বয়ংক্রিয় তালা আটকে দিয়ে হত্যাকারীরা চলে গেছে। তবে কী কারণে এবং কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ওসি জানান, নিহত সুমাইয়া নাসরিনের বাড়ি বগুড়া শহরে। তিনি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। সেই সুবাদে পাবনা সদর থানার রাধানগর এলাকায় থাকতেন। তাঁর বাবা আবদুল করিম গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই)। তিনি বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা ডিবিতে কর্মরত রয়েছেন। নিহত মিজানুর রহমান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পাঠানপাড়া গ্রামের উমেদ আলীর ছেলে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানার সহকারী কমিশনার গোলাম সাকলাইন জানান, আলামত দেখে প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে মনে হচ্ছে না। সিআইডিসহ পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে। মহানগর পুলিশ এবং র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সন্ধ্যার পর মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
মিজানের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন
এদিকে নিহত মিজানুর রহমানের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২২ এপ্রিল রাত ১টা ৪৬ মিনিটে ‘মিজান খান’ নামের আইডিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমার থাকার ম্যচে কিছু খাবার টাকা পাইতে পারে* উনু খাঁ, শিশিরদের দোকানে ২৫ টাকা পাবে* কালিকাপুরের আরিফ বন্ধু ১০০ টাকা পাবে সিম না বলে নিছিলাম তার জন্য*। টাকাগুলো যেন বাসা থেকে প্রদান করে। এ ছাড়া আমার পাওনা নেই। সবাই আমাকে মাফ করবেন, আমি পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি।’
ফেসবুকের এ স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, খুনিরা হত্যাকাণ্ডের আগে এ ধরনের স্ট্যাটাস জোর করে লেখাতে পারে। তদন্তে বিস্তারিত বিষয় খুঁটিয়ে দেখা হবে।
মিজানের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আমতলীতে তৃতীয়বার মেয়র হলেন মতিয়ার রহমান
বরগুনার আমতলী পৌরসভা নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগেরবিস্তারিত পড়ুন
বরগুনায় কোটি টাকা মূল্যের তক্ষক উদ্ধার
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ঘুটাবাছা এলাকা থেকে কোটি টাকা মূল্যের ৩টিবিস্তারিত পড়ুন
পটুয়াখালী-৩: বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে হাসান
একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানা উসিলা আর উপলক্ষে নির্বাচনীবিস্তারিত পড়ুন