মৃত্যু চান বলে হাসপাতালে চিকিৎসা পেলেন না তরুণী!
আত্মহত্যা করতে চেয়েছেন পণের শিকার এক তরুণী৷ অথচ, তাঁকে বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল৷ কিন্তু, মরতে চান বলে ওই তরুণীর চিকিৎসা মিলল না সেখানে৷ যে কারণে, মৃত্যু হল ওই তরুণীর৷ চিকিৎসায় অবহেলার এমনই অভিযোগ৷ আর, এমন অভিযোগের জেরে ফের কাঠগড়ায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল৷
কলকাতার সরকারি এই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে উঠছে একের পর এক অভিযোগ৷ সোমবার ওই তরুণীর মৃত্যু হয়৷ আর, গত শনিবার রাতে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে সেখানে এক প্রসূতির মৃত্যু হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ ওই প্রসূতির মৃত্যুর আগে তাঁর গর্ভস্থ সন্তানেরও মৃত্যু হয়৷ শুধুমাত্র তাই নয়৷ ডেঙ্গিতে ওই মেডিক্যাল কলেজের-ই এক ডাক্তারি ছাত্রীর মৃত্যুর জেরেও, খোদ সেখানকার-ই ডাক্তারদের মধ্যে রাজনীতির অভিযোগও উঠেছে৷ অথচ, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণের ক্ষেত্রে এই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালকে-ই এক সময় ‘মডেল’ করেছে স্বাস্থ্য ভবন৷
মৃত ওই তরুণীর নাম শিবানী হালদার৷ বছর চব্বিশের ওই তরুণী নিউটাউনের গৌরাঙ্গনগরের নতুনপল্লির বাসিন্দা৷ সল্টলেক সেক্টর ফাইভের বেসরকারি এক সংস্থার কর্মী ছিলেন তিনি৷ তাঁর পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, পণের দাবিতে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ওই তরুণী৷ যদিও, এমন হওয়ার কথা নয়৷ কেননা, কিছু দিন আগে শিবানী হালদারের এক সহকর্মীর মাধ্যমে উত্তর ২৪ পরগনার গুমার এক যুবকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়৷ ওই বন্ধুত্ব থেকে প্রেম৷ আর তার পরে, দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০১৬-র ছয় মার্চ তাঁদের বিয়ের দিনও স্থির হয়৷ কিন্তু, প্রেমের সম্পর্ক বিয়ের পিঁড়িতে পৌঁছতে চাইলেও, বাধা হয়ে দাঁড়ায় পণ৷ ওই তরুণীর বাবা প্রফুল্ল হালদার জানিয়েছেন, নগদ ৫০ হাজার টাকা আর মোটরসাইকেল চেয়েছিল পাত্রপক্ষ৷ সে সবের ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু, দিন কয়েক হল নগদ দেড় লক্ষ টাকা আর কিছু সোনার গহনার জন্য চাপ বাড়াতে থাকে পাত্রপক্ষ৷ রবিবার রাতে শিবানী হালদার যখন তাঁর এক বান্ধবীর বাড়িতে ছিলেন, সেই সময় পাত্র ফোন করে জানান, তাঁদের দাবি মতো পণের ব্যবস্থা না করতে পারায় এই বিয়ে সম্ভব নয়৷
প্রেমের সম্পর্ক৷ অথচ, পাত্রপক্ষের এই ধরনের পণের দাবির জেরেই শিবানী হালদার আর বাঁচতে চাননি বলে জানা গিয়েছে৷ যে কারণে, ওই ধরনের মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে, উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য ব্যবহৃত ৬০-৬৫টি ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেন শিবানী হালদার৷ রবিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে৷ কিন্তু, অভিযোগ, তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা হয়নি৷ ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়ার পরেও বিনা চিকিৎসায় পেরিয়ে গিয়েছে সাত-আট ঘন্টা৷ অবজারভেশন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরেও স্যালাইন দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও চিকিৎসাও হয়নি৷ শুধুমাত্র তাই নয়৷ সকাল হয়ে গেলেও দেওয়া হয়নি মধ্য রাতে কিনে আনা ইঞ্জেকশনও৷ তার উপর, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন শিবানী হালদার৷ তাই, মেডিক্যাল সার্টিফিকেশনের জন্য ১০০ টাকার প্রয়োজন ছিল৷ কিন্তু, তাঁর পরিজনদের কাছে ছিল ১ হাজার টাকার নোট৷ যে কারণে, খুচরো না থাকার জন্য দীর্ঘ সময় শিবানী হালদারকে ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি বলেও অভিযোগ৷ আর, এ সবের জেরেই সোমবার সকালে ওই তরুণীর মৃত্যু হয় বলে উঠছে অভিযোগ৷ একই সঙ্গে অন্য অভিযোগ, শিবানী হালদারের মৃত্যুর পরেও তাঁর পরিবারকে জানানো হয়নি৷ দীর্ঘ সময় ওয়ার্ডের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর পরিজনরা৷ কিন্তু, এক সময় ওয়ার্ডের ভিতরে তাঁকে দেখতে গিয়ে পরিজনরা জানতে পারেন, মর্গে চলে গিয়েছে শিবানী হালদারের দেহ৷
এমন ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিবানী হালদারের পরিজন-পরিচিতরা৷ তাঁর মা কবিতা হালদারের এমনই অভিযোগ, বার বার বলার পরেও স্টমাক ওয়াশ করা হয়নি, ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়নি৷ জানতে চাইলে সেখানকার কর্ত্যবরত নার্সরা দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি বলেন, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে মানে মেয়ে তো মরতেই চায়৷ তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করে লাভ কী! গোটা ঘটনার জেরে শিবানী হালদারের ক্ষুব্ধ এবং উত্তেজিত পরিজন-সহকর্মী-পরিচিতদের সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হয় পুলিশকে৷ তাঁর সহকর্মীরা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে, অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী এসে তাঁদের উপর মৃদু লাঠিচার্জ করে বলেও অভিযোগ৷ তার জেরে আরও বেড়ে যায় উত্তেজনা৷ অভিযোগ, কোনও মহিলা পুলিশের উপস্থিতি ছাড়াই, পুরুষ পুলিশকর্মীদের হাতে মহিলা অথবা পুরুষ, যে কোনও বিক্ষোভকারীকেই মার খেতে হয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় বিকেলের পর৷ এই ঘটনায়, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সেখানকার ইমার্জেন্সির কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন শিবানী হালদারের পরিজনরা৷ এই প্রসঙ্গে ওই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি প্রবীর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এ দিকে, এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন৷
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন