মেঘে ঢাকা পূর্ণিমার চাঁদ
বাবার সাথে পান বরজে দিন মজুরের কাজ ও ডোবা-নালায় মাছ ধরে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া মেধাবী রাকিব হাসানের কলেজে ভর্তি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ভর্তির মেধা তালিকায় ঝিনাইদহ সরকারী কেসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্থান পেয়েও টাকার অভাবে হয়তো ভর্তি হতে পারবে না। এমন আশংকার কথা জানালেন রাকিবের দিনমজুর বাবা নাসির উদ্দীন বকুল। আর রাকিব হাসানের পড়ালেখা ও শোবার ঘরটি পল্লী কবি জসিম উদ্দীনের “বাড়ি তো নয় পাখির বাসা, ভেন্না পাতার সানি, একটু খানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি” কবিতার লাইনের মতোই সদা সত্য।
ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার আদর্শ আন্দুলিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে তাহেরহুদা গ্রামের নাসির উদ্দিন বকুলের ছেলে রাকিব হাসান। বাবা মা ও দুই ভাইয়ের সংসারে রাকিব হাসান বড়। ছোট ভাই সাকিব হাসান পড়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে। সহায় সম্পিত্তির মধ্যে বাবার আছে কেবল ভিটে বাড়ি। সেই ভিটেই রয়েছে ভাঙ্গাচোরা চাটাই দিয়ে ঘেরা একটি নড়বড়ে ঘর।
সেই কুড়ে ঘরেই মেধার আলো ছড়িয়েছে রাকিব হাসান। তার এই কৃতিত্বে গ্রামের মানুষ হতবাক। যে ছেলেটি খালে বিলে ডোবা নালায় বাবার সাথে মাছ ধরেতা সেই কিনা গ্রামের মুখ উজ্জল করলো ? বিস্ময়ের সাথে জানালেন এলাকার ইউপি মেম্বর সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, শীত আর ঝড় বৃষ্টিতে এমন ঘরে পড়ালেখা ও বসবাস করা সম্ভব না। একটু বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় রাকিবদের ভাঙ্গাচোরা ঘরখানি। মা রিতা খাতুন জানান, রাকিবের বাবা মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে বন্ধ হয়ে যায় আমাদের খাওয়া দাওয়া। অনেক সময় না খেয়ে দিন পর করতে হয়।
কান্না ভেজা কন্ঠে রিতা খাতুন বলেন, রাকিব আমাদের মেঘে ঢাকা পূর্ণিমার চাঁদ। চরম অর্থকষ্টের মধ্যেও ওর ভালো রেজাল্টে খুশি হওয়ার পাশাপাশি কষ্টে বুক ফেটে যায়।
এবার এসএসসিতে রাকিব বানিজ্য বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেলেও টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি করতে পারছি না। রাকিব হাসানের বাবা নাসির উদ্দিন বকুল জানান, ছেলে আর আমি দিন মজুরের কাজ করে প্রতি মাসে দুই থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করি।
এই টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে দুই ছেলের পড়ালেখার খরচ চালানো আমার জন্য দুঃসাধ্য। তারপরও বাধ্য হয়েই ধার দেনা আর সুদের টাকা নিয়ে করতে হচ্ছে। তাহেরহুদা গ্রামের রিনা ফার্মেসির মালিক সজল ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুস জানান, রাকিব হাসান প্রচন্ড মেধাবী ও বুদ্ধিমান।
ছোট কাল থেকেই লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল ইচ্ছা। তার পড়ালেখার জন্য সমাজের বিত্তবানদের পাশে দাড়ানো উচিৎ। আদর্শ আন্দুলিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদুল হক টিটু জানান, রাকিব হাসান আমাদের স্কুলের মুখ উজ্জল করেছে। তার বাড়িতে আমি গিয়ে হতবাক হয়েছি। ভাঙ্গাচোরা ঘরে মেধাবী ছাত্র রাকিব পড়ালেখা করে। প্রধান শিক্ষক জানান, দেশ-বিদেশের হৃদয়বান ব্যক্তিরা অসহায় রাকিবের পাশে দাড়ালে আমার বিশ্বাস সে একদিন অনেক বড় হতে পারবে। মেধাবী ছাত্র রাকিব বলেন, দিনের বেলা বাবার সাথে পান বরজে দিনমজুরের কাজ করতাম। সময় পেলে খালে বিলেও মাছ ধরতাম।
সেই মাছ বিক্রি করে বাবা সংসার চালান। কিন্তু পড়ালেখা বন্ধ করিনি। দিনের বেলা দিন মজুরের কাজ করতে হতো বলে রাতে ও ভোর বেলা পড়তাম। বাবা কলেজে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে পারছে না ভেবে রাকিব হাসানের মন খারাপ। মেধাবী ছাত্র রাকিব হাসানের সহায়তার জন্য বাবা নাসির উদ্দিন বকুল বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড শাহীনকে ধরতে ডিবির পরিকল্পনা
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ধারণা, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমবিস্তারিত পড়ুন
তৃতীয়বার আনারকে মনোনয়ন দিয়েছি জনপ্রিয়তা দেখে: কাদের
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) স্বর্ণ চোরাচালানকারীবিস্তারিত পড়ুন
মাস্টারমাইন্ড শাহীনের অগাধ রহস্য
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতের কলকাতায় হত্যাকাণ্ডেবিস্তারিত পড়ুন