মৌলানা পাস দিয়েছিলেন তারেক মাসুদ
চলচ্চিত্রের মানুষ প্রয়াত তারেক মাসুদ। একাধারে তিনি ছিলেন পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক ও গীতিকার। আজ এই বহু প্রতিভাধর মানুষটির জন্মদিন। ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মশিউর রহমান মাসুদ এবং মা নুরুন নাহার মাসুদ।
ভাঙ্গা ঈদগাহ মাদ্রাসা থেকে তারেক মাসুদের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এর পর তিনি ভর্তি হন ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসায়। সেখানে থেকেই পরে মৌলানা পাস করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। পরে ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
১৯৮২ সাল। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন তারেক মাসুদ। প্রায় ২০ বছর তিনি এ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর পর ঢুকে পড়েন ছবি নির্মাণের কাজে। ২০০২ সালে তার নির্মিত প্রথম ছবি ‘মাটির ময়না’ মুক্তি পায়। ছবিটি তার শৈশবের মাদ্রাসা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত হয়েছিল। যেটি ওই বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল।
এর পর তিনি ‘আদম সুরত’, ‘মুক্তির গান’, ‘অন্তর্যাত্রা’ ও ‘রানওয়ে’সহ বেশ কয়েকটি ছবি নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার ও চ্যানেল আই চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ফিল্ম সাউথ এশিয়া, কান চলচ্চিত্র উৎসব, মারাকেচ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, থ্রি কন্টিনেন্টন উৎসব, ভারতীয় আন্তর্জাতিক ভিডিও উৎসব, কারা চলচ্চিত্র উৎসব, ডিরেক্টরস গিল্ড অব গ্রেট ব্রিটেন, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব বাংলাদেশ অনুষ্ঠানগুলোতেও পুরস্কৃত হন।
তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। এই দম্পতির ‘বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিশাদ’ নামে এক ছেলে রয়েছে। স্ত্রী ক্যাথরিন এবং তারেক মাসুদ মিলে ঢাকায় অডিওভিশন নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়াও তারেক মাসুদের লোকসঙ্গীত এবং লোকজ ধারায় বেশ আগ্রহ ছিল।
যেভাবে মারা গিয়েছিলেন তারেক মাসুদ
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট।‘কাগজের ফুল’ নামের একটি ছবির শুটিংয়ের লোকেশন চিত্রায়ন করার জন্য তারেক মাসুদ তার সহকর্মীদের নিয়ে পাবনার ইছামতী নদীর তীরে যান। লোকেশন নির্বাচন শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে তিনি গাড়িবহর নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
পথে ঘিওরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে তারেক মাসুদকে বহনকারী মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সেসময় তারেক মাসুদের সঙ্গে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী সাংবাদিক ও বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর।তিনিও একই দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের সাথে মারা যান। ওই ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর ছাড়াও মৃত্যু হয় আরো তিন জনের।
তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর ২০১২ সালে বিভিন্ন সময়ে লেখা তার চলচ্চিত্র সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলোকে একত্র করে একটি বই প্রকাশিত হয়। যেটির নাম দেয়া হয় ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’। বইটিতে ভূমিকা লিখেছেন তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। লেখক হওয়ার একটা টান সবসময়ই তারেক মাসুদের মাঝে ছিল। তাইতো তিনি বলেছিলেন, ‘চলচ্চিত্রকার না হলে লেখক হওয়ার চেষ্টা করতাম।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন