যেভাবে গির্জা থেকে মসজিদ, মসজিদ থেকে জাদুঘরে রূপান্তরিত হলো, শুনুন সেই কাহিনি
আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ১৯৩৪ সালে হাজিয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে পরিবর্তিত করেন৷১৯৮৫ সালে হাজিয়া সোফিয়া ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনার তালিকায় স্থান পায়৷
স্থাপত্যশিল্পে ‘মাইলফলক’
৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ান কনস্ট্যান্টিনোপলের অধিবাসীদের জন্য এমন একটি গির্জা নির্মাণের নির্দেশ দেন, যেটি আগে কখনো নির্মাণ হয়নি, এমনকি ভবিষ্যতেও হবে না৷ গির্জাটি নির্মাণে কাজ করেছিল ১০ হাজার কর্মী৷ অন্তত এক হাজার বছর ধরে বসফরাস ব্যাসিলিকাই ছিল খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় চার্চ৷
বাইজেন্টাইনদের অভিষেক স্থল
হাজিয়া সোফিয়ার নিমার্ণে জাস্টিনিয়ান প্রায় ১৫০ টন স্বর্ণ বিনিয়োগ করেছিলেন৷ এরপরও ভবনটির কিছু সংস্কার প্রয়োজন ছিল৷ কেননা গম্বুজটা ছিল একেবারে সমতল এবং ভূমিকম্পের কারণে যা কিছুটা বেঁকে গিয়েছিল৷ নির্মাণের পর থেকে হাজিয়া সোফিয়া রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হত৷ সপ্তম শতক থেকে সব বাইজেন্টাইন সম্রাটদের অভিষেক হত এখানে৷
গির্জা থেকে মসজিদে রূপান্তর
১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে কনস্ট্যান্টিনোপলে বাইজেন্টাইনদের রাজত্ব শেষ হয়৷ এর দখল নেন অটোমান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সুলতান মোহাম্মদ এবং তখন হাজিয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করেন৷ প্রথমে একটি মিনার নির্মাণের মাধ্যমে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়৷ এরপর ক্রস, ঘণ্টা এবং চিত্রকর্মের পরিবর্তন করা হয়৷
মসজিদ থেকে জাদুঘর
আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ১৯৩৪ সালে হাজিয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে পরিবর্তিত করেন৷ সংস্কারের সময় পুরোনো বাইজেন্টাইন স্থাপত্য মোজাইক খুঁড়ে বের করা হয়৷ তবে খুব সতর্কতার সাথে এটা করা হয়েছে, যাতে পরবর্তীতে ইসলামিক যে নিদর্শনগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়৷
ইসলাম ও খ্রিষ্ট ধর্মের সহাবস্থান
হাজিয়া সোফিয়ার ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো যেন এর মধ্য দিয়েই প্রতিফলিত হয়েছে৷ একপাশে মোহাম্মদ, অন্যদিকে আল্লাহ লেখা আবার মাদার মেরীর কোলে যীশু খ্রিষ্ট সবই আছে এখানে৷ সেই সাথে গম্বুজে ৪০টি জানালা দিয়ে আলো এসে এটিকে যেন অতিপ্রাকৃত করে তোলে৷
বাইজেন্টাইন আইকন
হাজিয়া সোফিয়ার সবচেয়ে সুন্দর শিল্পকর্মের একটি এটি৷ হাজিয়া সোফিয়া খুঁড়ে ১৪ শতকের এই নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা গ্যালারিতে রাখা আছে৷
প্রার্থনার জায়গা নেই
হাজিয়া সোফিয়াতে বর্তমানে প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ৷ ২০০৬ সালে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট যখন হাজিয়া সোফিয়াতে গিয়েছিলেন, তখন এই ব্যবস্থাপনাকে সম্মান জানিয়েছিলেন৷ তবে তুরস্কের মানুষ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল৷
প্রতীকি মূল্য
হাজিয়া সোফিয়ার পাশেই অবস্থিত সুলতান আহমেদ মসজিদ যা ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ হিসেবে বেশি পরিচিত৷ তুরস্কবাসী চান যাতে হাজিয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করা হয় এবং সেখানে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়৷
খ্রিষ্টানদের দাবি
কনস্ট্যান্টিনোপলে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান যাজক প্রথম বার্থোলোমায়সও হাজিয়া সোফিয়া তাঁদের বলে দাবি করেছেন৷ বহু বছর ধরে তিনি এর পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এটাকে গির্জা হিসেবে ব্যবহারের আবেদন জানিয়েছেন তিনি৷
সিন্ধান্ত হয়নি
হাজিয়া সোফিয়ার ভবিষ্যত এখনো অনিশ্চিত৷ বিরোধী দল এমএইচটি এটিকে মসজিদে রূপান্তরের জন্য এখনও দাবি জানাচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত পার্লামেন্টে দুটি আবেদন করেছে তারা, যা নাকচ হয়েছে৷ ১৯৮৫ সালে হাজিয়া সোফিয়া ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনার তালিকায় স্থান পায়৷
প্রতিবেদন: ক্লাউস ডাহমান।-ডিডব্লিউ
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন