যে আচরন সে আমার সাথে করল। আমি অাত্মহত্যা করতে চাই !

“প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে লিখছি। জীবনটাকে অর্থহীন মনে হচ্ছে। হয়তো অনেক বড় হয়ে যাবে লিখাটা। তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। শুরু থেকেই বলি… জীবনে কখনও প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াতে চাইনি। HSC তে যখন পড়ি, সব বান্ধবীরা প্রেম করত, কেউ সিরিয়াস হয়ে, আবার কেউবা মজা করে। ফোনও ব্যবহার করতাম না। টেস্ট পরীক্ষার পর পড়াশোনার কারণে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে একটা সাধারণ ফোন কিনি। ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে একদিন একটি কল পাই । তারপর পরিচয় হয়। আমার ১ ব্যাচ সিনিয়র একজনের সাথে। ছোট ছিলাম, তেমন বুঝতাম না। কীভাবে যেন সম্পর্কে জড়িয়ে যাই তার সাথে। দিন যেতে না যেতে খুব বেশী দূর্বল হয়ে পড়ি তার উপর আমি। একই শহরে থাকতাম। তাই প্রায়ই দেখা হত। তার আসল রূপটা জানতাম না তখন। ১ বছর পর জানতে পারি সে আসলে একটা প্লে বয়। মেয়েদের সাথে মজা করা তার স্বভাব। এমনকি তথনও আমি ছাড়াও তার আরোও ২-৩ জন প্রেমিকা ছিল। অগনিত মেয়ের সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক ছিল।
এসব জেনে এতটা আপসেট হয়ে যাই, সুইসাইড করতে ইচ্ছে হল।। কয়েকবার চেষ্টাও করি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে যাই। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি আমি। বাবা মা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখায়। চিকিৎসা চলে অনেকদিন। এতকিছুর মাঝে ভাল কোথাও ভর্তি হতে পারিনি। তবুও ভাগ্যের জোরে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই।
পোড়া কপাল যদি এখানেই শেষ হত, খুব ভাল হত। কিন্তু না। এই ইউনিভার্সিটিতে এক পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে একটি ছেলের সাথে পরিচয় হয়। খুব ভাল মানুষ মনে হয়েছে আমার কাছে। তখন দ্বিতীয় বারের মত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি জন্য কোচিং এ ভর্তি হই। আমরা দুজন একই ব্যাচ। পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক সাহায্য করতে চাইত সে আমাকে। কিন্তু মানসিক ভাবে ঠিক ছিলাম না, তাই পড়ার ব্যাপারে ছিলাম উদাসীন। আমাদের প্রতিদিনই কথা হত, কিন্তু পুরোটাই পড়ার ব্যাপারে। সে আমার ব্যাপারে সব জানত। একদিন আমাকে প্রোপোজ করে বসে। আমি রাজি হই না।
কিন্তু সে বলত, আমার তাকে ভালবাসতে হবে না। সে একাই আমাকে ভালোবাসবে। আমাকে সব ধরনের সাপোর্ট দিবে। দিয়েছিলও তাই। আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্ব থেকে কবে যেন প্রেমে রূপ নিল, বুঝতেই পারলাম না। তখন আমার মনে হত, সে আমার জীবনে সত্যিই একটি ভালো মানুষ হয়ে এসেছে। পুরোনো কষ্ট আমি অনেকটাই ভুলে গেছি। ওর উপর খুব বেশি ভরসা আর বিশ্বাস করে ফেলেছি। ক্লাসের ফাঁকে অনেক আড্ডাও জমিয়েছি। অবশেষে ২য় বছরও সে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি। আমি রাজশাহীতে চান্স পেয়ে ভর্তি হয়ে যাই। সে থেকে যায় ঢাকায় চলমান প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতেই। ফলে ২-৩ মাসে একবার দেখা হয়। সম্পর্কটা তখনো ভালো ছিল।
আমি ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকি। কিন্তু বিধি বাম। একদিন তাকে না জানিয়ে ঢাকায় আসি। শহরের এক রাস্তা দিয়ে রিক্সা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখতে পাই আমার প্রিয় মানুষটি অন্য এক মেয়ের সাথে আরেকটি রিক্সায় করে ফুট তুলিয়ে হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে। অামার হাত পা বন্ধ হয়ে যায়। আমি যেন আর বসে থাকতে পারছিলামনা। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যাই।
এতটা কষ্ট, এতটা কান্না ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এতকিছুর পরও বিষয়গুলো আমার বিশ্বাস হচ্ছিলনা। এতটা বিশ্বাস করেছি আমি তাকে। বাস্তবে আমি কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর। তারপরও সে আমার সাথে এমন করতে পারে না। অত:পর আমি তাকে একদিন জানিয়ে দেই আমি তার সাথে আমি আর সম্পরক রাখব না। ২-৩ দিন পর হঠাৎ একদিন সে আমার সাথে দেখা করে রাজশাহিতে। সে আমাকে অনেক কথা বলে ভুলিয়ে ফেলে। আমি আবার রাজি হয়ে যাই। মনে হচ্ছিল, কষ্টের দিনগুলি এবার বুঝি শেষ হল। বলে রাখি এখানে ভালো সম্মানীতে দুটো টিউশনি করি। মাস শেষে যা পাই সব টাকাই ওর জন্য খরচ করি। সেদিন আমার হাত ধরে বলেছে, আমার উপর ভরসা রাখ, কোনদিন কষ্ট পাবে না। আমার শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। তার এই কথা শুনে আবার তাকে বিশ্বাস করি, তার উপর সব রাগ ক্ষোভ দুর হয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার আমি দেখলাম সে অন্য একটি মেয়ের সাথে…..।
সে যাই হোক। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারি না। অনেক চেষ্টা করছি। এমনকি একসময় সম্পর্ক রাখার জন্য পায়ে পড়েছি। আমি পাগলের মত হয়ে গেছি। একলা রুমে দরজা বন্ধ করে পাগলের মত চিৎকার করি, বুক চাপড়াই, যন্ত্রনায় সারা গায়ে আঁচড় কাটি। নিজের গলা টিপে ধরি। আমি পারছি না ওকে ছাড়তে। আমি সত্যিই আর বাঁচতে চাই না। যে আচরন সে আমার সাথে করল। আমি অাত্মহত্যা করতে চাই। আমার জীবনের বিপর্যয় কি শেষ হবে না কোনদিন। কোন পড়াশোনাই হচ্ছে না। বলুন না, কী করব এখন আমি? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। এত কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না।”
পরামর্শ:
আপু, আপনার চিঠি পড়ে আমার যেমন কষ্ট হচ্ছে, তেমন রাগও লাগছে। এটা একটা কাজ করছেন আপনি? প্রতারকের জন্য কেউ আত্মহত্যা করতে যায়? যে ছেলে আপনাকে ধোঁকা দিয়ে, আপনার ক্ষতি করে চলে গেলো… সেই ছেলের জন্য মা বাবাকে কষ্ট দিয়ে আত্মহত্যা করবেন? মা বাবা যে জন্ম দিল, বুকে আগলে লালন পালন করলো, তাঁদের বুঝি কোন দাম নেই?
দেখুন আপু, মানুষের জীবন ভুল হতেই পারে। বিশেষ করে আপনি মানুষ চিন্তে ভুল করেন। দুইবারই দুজন মানুষকে বেছে নিয়েছেন, যারা ভালো মানুষ নয়। একটা সত্য কি আপু, ভালবাসা কোন চিরকালের ব্যাপার নয় যে আজীবন থাকবে। ভালোবাসা বদলে যেতেই পারে। আজ একজনকে ভালো লাগছে, কাল আরেকজনকে ভালো লাগে অনেকের কাছেই। কিন্তু একজন মানুষের জন্য আপনি মরে যেতে চাইবেন। এটা নিতান্তই নির্বুদ্ধিতা। আপনার কি কোন দাম নেই? কোন আত্মসম্মান নেই? সেই ছেলের মূল্য কি আপনার চাইতে বেশী যে তার জন্য আপনি মরে যেতে পারেন?
দেখুন, আপনার বর্তমান প্রেমিক আপনাকে হয়তো ভালোবাসতো। কিন্তু সেটা অতীত। এখন ছেলেটির আসল চেহারা প্রকাশ পেয়ে গেছে। এখন আপনিই আমাকে বলুন, এমন মানসিকতার ছেলের সাথে কি আসলেই আপনি সম্পর্ক রাখতে চান ? যে অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক রাখে আর আপনাকে কেবল টাকার উৎস হিসাবে ব্যবহার করে? বিষয়গুলোকে আপনি ভেবে নিন এক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মানুষের জীবনে বিচ্ছিন্ন সব ঘটনা অআছে বলেই এত বৈচিত্র। আপনি আপনার নিজস্ব টেলেন্টকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যান। পড়াশুনায় মনোযোগি হন। অন্য একজনকে বন্ধু হিসাবে খুজে নিন। কেবল বন্ধু হিসাবে। ভালোবাসার মানুষ হিসাবে নয়। শেয়ার করুন জীবনের বৈচিত্র অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে পজিটিভলি। বই পড়ুন বেশী করে। ছবি দেখুন। বন্ধুদের সাথে বেড়াতে বের হয়ে যান। সব ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।
আর আপনার মানসিক কষ্ট ও আত্মহত্যা প্রবণতা দূর করতে পারবেন একজন চিকিৎসক। আপনি অবিলম্বে ভালো কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখান। যে কোন বড় হাসপাতালে গেলেই এই সেবা পাবেন। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার মানসিক অবস্থা অনেকটাই ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন

চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন

ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন