যে কম্বল দেয় তা দিয়া ঠাণ্ডা কাটে না বাহে
‘গ্যালো বছর এক খান কম্বল পাছুনুং। এক দুপুর বসি থাকি যে কম্বল দিছে তা দিয়া ঠাণ্ডা কাটে না বাহে। যদি কায়ো কম্বল দিবার চায় তাক কন, য্যান ভাল এক খান কম্বল দেয় এবার।’ কথাগুলো বলছিলেন রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের দিনমজুর সোলেমান আলী (৬৫)।
প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মে ভোরের কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ আর ঘাসের ওপর পড়ে থাকা শিশির বিন্দু জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীতে প্রতি বছরই দুর্ভোগে পড়েন সোলেমানের মতো উত্তর জনপদের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের হাজারো মানুষ। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না শীতের এই সময়টায়।
সরকারি ও বেসরকারিভাবে অসহায়দের মাঝে যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয় তা পর্যাপ্ত নয়। সময় মত শীত বস্ত্র না পাওয়া এবং পেলেও নিম্নমানের এসব বস্ত্রে প্রকৃত অর্থে শীত নিবারণ করাও কষ্টকর হয়ে ওঠে শীতার্তদের।
অসহায় শীতার্তদের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোলেমানের মত আক্ষেপ নিয়ে শহরের মুলাটোল এলাকার জোবেদা বেওয়া (৭০) বলেন, ‘যখন ঠাণ্ডা আসি চাপি ধরে তখন খ্যাতা-কম্বল কিছুই থাকে না। গ্যালো বছর ঠাণ্ডা শ্যাষত একখান কম্বল দিছিল স্যারেরা। যে পাতলা কম্বল দিছে তাক দিয়া কিছুই হয় না।’
একই অভিমত ব্যক্ত করেন কাউনিয়া উপজেলার ৭৫ বয়সী বৃদ্ধা মজিরন নেছা বলেন, শীত আইলে কষ্ট বাড়ে। কেউ খবর নেয় না।
চন্দপাট এলাকার অঞ্জলী রানী (৪৫) জানান, অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে হয়। একদিন কাজ না করলে খাবার জোটে না। শীত আসছে তাই দুর্ভোগের বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলছে।
সোলেমান-জোবেদার মত হাজারো অসহায়ের আকুতি শীতবস্ত্র বিতরণে যেন আরো আন্তরিক হয়ে ওঠেন সংশ্লিষ্টরা।
সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঝে মাঝে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এ অঞ্চলের জনজীবন। এসময় শৈতপ্রবাহও দেখা দেয়। ফলে দিনমজুরসহ ছিন্নমূল মানুষদের দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। হাতে কাজ না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন পাড়ি দিতে হয় তাদের।
ইতোমধ্যে লেপ-তোশকের দোকানে জমে উঠেছে ভিড়। ব্যস্ত সময় পার করছেন ধুনকররা। বিত্তশালীরা অর্থ খরচ করে লেপ-তোশক তৈরি করতে পারলেও গরিব ও দুস্থরা অপেক্ষায় থাকেন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সহায়তার আশায়।
হাড়িপট্ট্রি রোডের লেপ-তোশক বিক্রেতা এনামুল হক জানান, শীত জেঁকে না বসলেও আগাম প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিদিনেই কাজের অর্ডার পাচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে পুরনো লেপ-তোশক সংস্কার করে নতুনভাবে তৈরি করছেন কেউ কেউ।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী জানান, দিনে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও রাতে তা কমে আসছে। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রংপুরে সর্বনিম্ন ২২ দশমিক শূণ্য ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সম্প্রতি সাগরে নিম্নচাপের কারণে গত বছরের তুলনায় এই সময়টাতে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করেছে। এ মাসের শেষের দিকে তাপমাত্রা অনেকটাই কমে আসবে বলে তিনি ধারণা করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক বলেন, এবার শীত মোকাবেলায় সরকারিভাবে আগাম ১৮ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে, যা সংশ্লিষ্ট আট উপজেলায় ভাগ করে পাঠানো হয়েছে। খবর জাগো নিউজ
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আরতদাড়ের সাথে বিরোধ, রহনপুর বাজারে আম বিক্রি বন্ধ
আম চাষিরা আমের মণ সর্বোচ্চ ৪৮ কেজি করার দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
মূল্য ৭ কোটি: পঞ্চগড়ে কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকাল পৌনে ৬টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দেবীগঞ্জবিস্তারিত পড়ুন
রংপুরে ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু, পালাল চিকিৎসক
রংপুরে ভুল চিকিৎসায় মেধা (২) নামে এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন