যে গ্রামের নারীরা পুরুষ হত্যা করত
সময়টা ছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে। হাঙ্গেরির নাগিরেভ গ্রামটিতে প্রতিদিনই মানুষ মরছে। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এরা সবাই পুরুষ। তবে কী কারণে তাদের মৃত্যু হচ্ছে, প্রাথমিক অবস্থায় তা বোঝার কোনো উপায়ই ছিল না। অপরাধীরা শেষ পর্যন্ত অবশ্য ধরা পড়েছে। তবে ততোদিনে প্রাণ হারিয়েছে ৩০০ পুরুষ। আর তাও তাদের স্ত্রীদের হাতে।
১৯১১ সালে নাগিরেভ গ্রামে আসেন সুসানা ফাজেকাস ও তার স্বামী জুলিয়াস ফাজেকাস। অবৈধ গর্ভপাতে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯১১ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত এই দশ বছরে ১০ বার কারাগারে যেতে হয়েছে সুসানাকে। তবে বিচারকরা গর্ভপাতের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় প্রতিবারই খালাস পেয়েছেন সুসানা। এরই মাঝে কোনো কারণ ছাড়াই রহস্যময়ভাবে উধাও হয়ে যায় সুসানা ফাজেকাসের স্বামী।
আমরা যে সময়টার কথা বলছি, সে সময়ে হাঙ্গেরির সমাজে কিশোরী বধূর স্বামী তার পরিবারের লোকজনই পছন্দ করতো। একই সঙ্গে মেয়েদের নিজের পছন্দে বিয়ে করার কোনো সুযোগই ছিল না। এমনকি স্বামী যদি মাদকাসক্ত কিংবা নির্যাতকও হয়, তাহলেও তালাক দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হাঙ্গেরির সমর্থ্যবান পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়েছিল। এ কারণে নাগিরেভ গ্রামের ঘর-বাড়ি ছেড়ে ছুটতে হয়েছে রণক্ষেত্রে। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তের কাছে হওয়ায় নাগেরিভ ছিল যুদ্ধবন্দীদের রাখার আদর্শ স্থান। দীর্ঘ সময় বাড়িতে স্বামীদের অনুপস্থিতির সুবাদে ভিনদেশী যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে গ্রামের অনেক নারীরই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যুদ্ধের পর বাড়ি ফেরার পর স্ত্রীদের এ সম্পর্কে বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে নাগিরেভের পুরুষরা। অনেকে স্ত্রীদের তাড়িয়ে উদ্যত হলেও কেউ কেউ আবার নমনীয়ও হয়েছিলেন। তবে শর্ত হিসেবে সাবেক প্রেমিকদের সঙ্গে সম্পর্কশ্ছেদ করার নির্দেশ দিলেন তারা। কিন্তু নাগিরেভের নারীরা বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। ওই সংকটপূর্ণ অবস্থায় তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন ‘জ্ঞানী নারী’ হিসেবে পরিচিত সুসানা ফাজেকাস। এসব নারীদের প্রেমের পথে যারাই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের হত্যা করতে তিনি তাদের হাতে আর্সেনিক তুলে দিলেন। খাবারের সঙ্গে আর্সেনিক মিশিয়ে কেউ কেউ হত্যা করলো তাদের অভিভাবককে, কেউবা তার স্বামীকে, আবার কেউবা প্রেমের প্রতিবন্ধক বিবেচনা করে তাদের সন্তানদের হত্যা করলো। অনেকে আবার প্রেমের জ্বালা ভুলতে প্রেমিককেই হত্যা করে বসলো।
গ্রামটিতে একের পর এক মৃত্যু সবাইকে ভাবিয়ে তুললেও স্থানীয় কর্মকর্তারা এর রহস্য উন্মোচন করতে পারছিলেন না। ওই সময় নাগিরেভের মতো প্রত্যন্ত গ্রামের সঙ্গে শহরের যোগাযোগের দূরত্ব এবং স্থানীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় লাশের ময়নাতদন্তও হচ্ছিল না। নাগিরেভের এই হত্যারহস্য উদঘাটনের পেছনে তিনটি তত্ত্ব পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, যাবো নামে এক গৃহিনীকে খাবারে আর্সেনিক মেশানোর সময় হাতেনাতে ধরে ফলে বাড়িতে আসা দুই মেহমান। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আটক করা হয় সুসানাকে। আরেকটি তত্ত্বে বলা হয়, একদিন নাগিরেভের প্রতিবেশী শহরে নদীর তীর ধরে একটি লাশ ভেসে আসে। একটি মেডিক্যাল শিক্ষার্থী সেই লাশটি নিয়ে ময়নাতদন্তে করলে মৃতদেহে আর্সেনিকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর জের ধরে খুঁজতে খুঁজতেই নাগিরেভের পুরুষদের হত্যা রহস্যের সমাধান মেলে। তৃতীয় তত্ত্বটিতে বলা হয়েছে, ১৯২৯ সালে হত্যারহস্যটি জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়। ওই সময় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি স্থানীয় একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকের কাছে লেখা চিঠিতে জানায়, নাগিরেভে এক নারী বিষপ্রয়োগে তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে। এরপর তদন্তে নামতে যেয়ে পুরো হত্যারহস্যটি প্রকাশ হয়ে পড়ে।
ঘটনা যেভাবেই প্রকাশিত হোক না কেন, এ ঘটনার পর আটক করা হয় সুসানাকে। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের বিষপ্রয়োগে হত্যার অভিযোগে আটক করা হয় আরো ৩৪ নারী ও এক পুরুষকে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন