যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ
আজ বাংলাদেশ আইসিসির ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের ছয় নম্বর দল। ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত পরাশক্তি ও দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাও র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পেছনে। সেই দল আইসিসি র্যাংকিংয়ের প্রথম আট দলের প্রতিযোগিতা ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি’ খেলবে- এটাই তো স্বাভাবিক। তাই নয় কি?
বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিয়ে প্রশ্ন তোলার এখন আর অবকাশ আছে কি? এক কথায় উত্তর দিতে গেলে বলতে হবে ‘না’। আচ্ছা বাংলাদেশ কি যোগ্যতা দিয়ে বা যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামছে? এখন এমন প্রশ্নকর্তা অনিবার্যভাবেই নিগৃহীত হবেন। সবাই বলবেন, এ আবার কেমন প্রশ্ন?
যে দল র্যাংকিংয়ে সেরা ছয় দলের মাঝে আছে, সেই দল সেরা আট দলের আসরে থাকবে- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা তো অবান্তর। তা ঠিক। এখন এ প্রশ্নটা অবান্তর, ভিত্তিহীন ও অসাড় মনে হতে পারে; কিন্তু একটু পেছনে ফিরে তাকালে তা মনে হবে না।
একটা সময় এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ ছিল অনাহুত। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বশেষ দুই আসরে অংশ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। সেটা এমনি এমনি নয়। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য যে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি তৈরি করে দিয়েছিল, আগের দু’বার বাংলাদেশ ওই ক্যাটাগরিতেই পড়েনি।
সেই ক্যাটাগরি আর কিছুই না। আইসিসির ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সেরা আট দলের মধ্যে থাকতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তখন বাংলাদেশ আইসিসির ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সেরা আটে ছিল না বা শীর্ষ আট দলের ভিতরে জায়গা করে নিতে পারেনি। পারেনি বলেই ২০০৬ সালে ভারতের মাটিতে পঞ্চম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই শেষ। এরপর ২০০৯ আর ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা হয়নি বাংলাদেশের।
এটুকু শুনে আবার মনে হতে পারে, তাহলে বুঝি ২০০০ থেকে ২০০৬- এ দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ আইসিসির ওয়ানডে রর্যাংকিংয়ে শীর্ষ আট দলের মধ্যে ছিল! নাহ, তা ছিল না। বিষয়টা আসলে তেমন নয়। এবারই প্রথম। বাংলাদেশ আগে কখনোই আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সেরা আটে জায়গা করে নিতে পারেনি; কিন্তু তারপরও ২০০০ থেকে ২০০৬ এই চার আসরে বাংলাদেশ খেলেছে টেস্ট খেলুড়ে দেশের কোটায়। তখন সব টেস্ট খেলুড়ে দেশ সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পারত।
২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হওয়া চার আসরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফরম্যাট ছিল অনেকটাই বিশ্বকাপের আদলে তৈরি। সেখানে আইসিসির ১০ পূর্ণাঙ্গ সদস্য দেশ তথা সব টেস্ট খেলুড়ে দল এমনিতেই খেলতে পেরেছে। র্যাংকিংয়ের কোনো বাছবিচার ছিল না।
টেস্ট মর্যাদা পাওয়া ১০ দল সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলেছে। এর মধ্যে কোনো কোনো আসরে আইসিসির একাধিক সহযোগী সদস্য কেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্রও অংশ নিয়েছে। ২০০০ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশসহ ১১ দল অংশ নিয়েছিল।
ওই বছর ১০ নভেম্বর টেস্ট খেলা শুরুর ঠিক এক মাস আগে (৩-১৫ অক্টোবর) নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের নেতৃত্বে কেনিয়ায় প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যায় বাংলাদেশ। তারপর ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে বসা আসরে অংশ নেয় ১২ দল। তার মানে ১০ টেস্ট খেলুড়ে দলের বাইরে আরও দুটি দল। যার একটি কেনিয়া আর অন্যটি নেদারল্যান্ডস।
২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরের আসরেও প্রতিযোগী দল ছিল ১২টি। ১০ টেস্ট খেলুড়ে দেশের বাইরে আইসিসি সহযোগী সদস্য কেনিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র সেবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
২০০৬ সালে ভারতের মাটিতে হওয়া পঞ্চম আসরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নতুন রূপ নিতে শুরু করে। আগের তিনবারের নিয়ম ভেঙে সেবারই আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশসহ আইসিসির ১০ পূর্ণাঙ্গ সদস্য দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
বলে রাখা ভালো, সেই আসরে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম জয়ের মুখ দেখে। ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর জয়পুরের সাওয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে শাহরিয়ার নাফীসের উদ্ভাসিত ব্যাটিং নৈপুন্যে (অনবদ্য সেঞ্চুরিসহ অপরাজিত ১২৩) জিম্বাবুয়েকে ১০১ রানে হারায় টাইগাররা।
সেটাই শেষ। এরপর আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা হয়নি টাইগারদের। কি করে হবে? ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর থেকেই কথা উঠল, নাহ ঢালাওভাবে সব টেস্ট খেলুড়ে দলকে নিয়ে আর আয়োজন নয়। বিভাজন করতে হবে।
এখন থেকে যে আট দল র্যাংকিংয়ে সবার ওপরে থাকবে, তাদের নিয়েই হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। অর্থাৎ ২০০৬ সালের পর থেকে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেয়ার এক ও অভিন্ন শর্তই হয় আইসিসি র্যাংকিংয়ে প্রথম আট দলের মধ্যে থাকতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০০৭ থেকে ২০১৩- এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ বেশ কটি বড় দলকে হারালেও ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারেনি। যে কারণে র্যাংকিংয়ে সেরা আটে ওঠাও সম্ভব হয়নি। তাই ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা , ২০১৩ সালে ইংল্যান্ড আর ওয়েলশে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহদের দর্শক হয়েই থাকতে হলো।
এবার আর দর্শক নয়। প্রতিযোগী দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মাশরাফিরা। তাও আগের মতো শুধু টেস্ট খেলুড়ে দলের কোটায় নয়, প্রথমবারের মতো আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সেরা আট দলের মধ্যে জায়গা করে নিয়ে।
সেটা নিশ্চয়ই টেবিলে নয়। মাঠে ভালো খেলে। পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা এনে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গত তিন বছরে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো সময় কাটায় ২০১৫ সালে। ওই বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপে বড় দলের তকমাধারী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের ভীত কাঁপিয়েই মাশরাফি বাহিনী জানান দেয় আমরা উঠে আসছি।
তারপর ঘরের মাঠে ক্রিকেটের তিন বিশ্বশক্তি ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং র্যাংকিংয়ে নিচে থাকা জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ দিয়ে শুরু ওপরে ওঠা। র্যাংকিংয়ে উন্নতির পথে যাত্রা শুরু আসলে ২০১৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানকে তিন ম্যাচে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার মধ্য দিয়ে।
যে দলকে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর আর কখনো হারানোই সম্ভব হয়নি, সেই পাকিস্তানকে পর পর তিন ম্যাচে ৭৯ রান, ৭ উইকেট ও ৮ উইকেটে শোচনীয়ভাবে হারিয়ে দেয় টাইগাররা। ঠিক এরপর ভারতকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে আরও ওপরে ওঠা।
সেটা ২০১৫ সালের জুন মাসের কথা। শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পরাক্রমশালী ভারত খাবি খায় টাইগারদের দুর্দান্ত টিম পারফরম্যান্সের কাছে। ৭৯ রানের বড় জয়ে শুরু যাত্রা। তারপর বৃষ্টিভেঝা ম্যাচে ডিএল মেথডে ৬ উইকেটের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যায়। অবশ্য শেষ ম্যাচে গিয়ে আর জয়রথ সচল থাকেনি। ভারতীয়রা পায় সান্ত্বনার জয় (৭৭ রানে)।
২০১৫ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে উদিত হয় নতুন সূর্য। সেই মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দুর্দমনীয় দলও হার মানে টাইগারদের শৌর্য-বীর্যের কাছে। তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ এ বিজয়ী হয় মাশরাফির দল। সে সিরিজ জয়েই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা। প্রথমবারের মতো আইসিসি র্যাংকিংয়ে সেরা আট দলে জায়গা করে নেয়।
সেই আট দলের মধ্যে জায়গা করে নেয়ারও একটা ছোট্ট কাহিনি আছে। ১০ জুলাই শেরেবাংলায় প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়ারা ৮ উইকেটে অনায়াসে জিতে গেলে বাংলাদেশের হিসাব কঠিন হয়ে যায়। তখন পরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে হলে দ্বিতীয় ম্যাচে জয় অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।
বীরের মতো লড়াই করে ঠিক পরের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ১২ জুলাই শেরেবাংলায় ৭ উইকেটের জয়েই আসলে আট নম্বর স্থানে উঠে যায় বাংলাদেশ। আর তিনদিন পর ১৫ জুলাই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবালের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলিতে পাওয়া ৯ উইকেটের জয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে আট নম্বর স্থান নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। তাতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০১৭‘র টিকিট কনফার্ম। এরপর বাংলাদেশ পাকিস্তানকে টপকে চলে যায় র্যাংকিংয়ের সাত নম্বরে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত হওয়ার পর গত এক বছরে বাংলাদেশ একটি মাত্র ওয়ানডে সিরিজে ভালো খেলতে পারেনি, তাহলো নিউজিল্যান্ড সফর। গত বছর ডিসেম্বর ও চলতি বছর জানুয়ারিতে হওয়া ওই সিরিজে টাইগাররা ৩-০‘তে হারে। কিন্তু তার আগে ঘরের মাটিতে ইংলিশদের সাথে আর এই তো দুই মাস আগে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে লঙ্কানদের সাথে একটি করে ম্যাচ জিতে কক্ষপথে মাশরাফি, সাকিব-তামিমরা।
আর ইংল্যান্ডের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেয়ার সপ্তাহ খানেক আগে আরও ওপরে বাংলাদেশ। এই তো গত ২৪ মে টিম বাংলাদেশের দুর্দান্ত, দুরন্ত ও অনবদ্য পারফরম্যান্সের কাছে পর্যুদস্ত নিউজিল্যান্ড। ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের ৫ উইকেটে হারিয়ে র্যাংকিংয়ে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
ওই জয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ আইসিসি র্যাংকিংয়ে সাত থেকে এক ধাপ এগিয়ে ছয়ে উঠে এসেছে। কাজেই এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার, বাংলাদেশ মাঠের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দিনকে দিন শ্রেয় থেকে শ্রেয়তর পারফরম্যান্স দেখিয়ে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড , শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ডের মতো বড় শক্তিগুলোকে একের পর এক পরাজিত করে নিজ যোগ্যতা বলেই খেলছে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। জাগো নিউজ
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন