রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকায় রোকেয়া হত্যায় তথ্য
রাজধানীর মিরপুর থানাধীন কল্যাণপুর এলাকায় রোকেয়া হত্যায় চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য বের হয়ে এসেছে। রোকেয়ার জা জেরিন নিজেই সাড়ে তিন লাখ টাকা চুক্তি করে হাসান ও তার আরো দুই সহযোগীকে দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। লাভ হিসেবে জেরিন দেবর রাকিবকে বিয়ে করবেন বলে ভেবেছিলেন। গত আট বছর ধরে এই পরিকল্পনা করেই জেরিন রাকিবের সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন।রাকিবও জেরিনের প্রতি অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। আর যেহেতু জেরিন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাই রাকিব, জেরিনের খালু সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাফর আহমেদ এবং রাকিবের বড় ভাই জাকির মিলে জেরিনকে বাঁচাতে লাশ উদ্ধার না করেই তড়িঘড়ি করে থানায় ডাকাতি মামলা করেন।
সোমবার গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ও মামলার দেখভালকারী কর্মকর্তা এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সহকারী কমিশনার জানান, মামলা করার পর মিরপুর মডেল থানার এসআই নাজমুল হুদা জেরিনকে নামছাম জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেন। তা ছাড়া বাদী নিজেও ওই মামলায় জেরিনকে আসামি করেননি। মামলাটি যেদিন ডিবিতে আসে, সেদিন থেকেই মনে করা হচ্ছিল এই হত্যার সঙ্গে জেরিন সরাসরি জড়িত রয়েছে। তাই গত কয়েক দিন আগে জেরিনকে ডিবিতে নিয়ে এসে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কাছ থেকে কিছু তথ্য বের হলে তাকে মিরপুর থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সহকারী কমিশনার জানান, রিমান্ডে জেরিন হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিন লাখ টাকা চুক্তির মাধ্যমে প্রেমিক হাসানকে দিয়ে রোকেয়াকে হত্যা করিয়েছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। ঘটনার দিন জেরিনই প্রথম দরজা খুলে দেন। এরপর হাসান বাসার ভেতরে প্রবেশ করেন। তারপর হাসানের আরো দুই সহযোগী ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে রোকেয়াকে সবাই মিলে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যার পর জেরিন হাসানদের বের করে দিয়ে নিজেও বের হয়ে যান। এরপর আবার নিজেই রাকিবকে ফোন করে ডেকে আনেন।
জেরিন জানিয়েছেন, আট বছর পূর্বে স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি রাকিবের সঙ্গেই বসবাস করে আসছিলেন। দীর্ঘদিন একই সঙ্গে থাকায় রাকিব ও জেরিনের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু রোকেয়া থাকায় তা বেশি দূর এগুতে পারেনি। এরই মধ্যে জেরিনের সঙ্গে তার অফিসের কলিগ হাসানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি শারীরিক সম্পর্কও হয় একাধিকবার। সম্পর্কের সুবাদে হাসান জেরিনের বাসায় যাতায়াতও শুরু করেন। সেই সুবাদে হাসান রোকেয়ার সঙ্গেও এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জেরিন আরো জানান, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর জমি-জমা নিয়ে এক ধরনের মনমালিন্যের সৃষ্টি হয়। রাকিব ও তার ভাইয়েরা মিলে তাকে জমি না দেওয়ার চিন্তা করেন। জেরিনের ধারণা, এক সময় তার ছেলেও সেই জমি থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তাই জেরিন চিন্তা করেন, রাকিবকে বিয়ে করতে পারলে এ ধরনের কোনো চিন্তা করতে হবে না। তা ছাড়া রাকিবকে বিয়ের পরও হাসানের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবেন।
রাকিবের সঙ্গে তার প্রেম কোন পর্যায়ের জানতে চাইলে জেরিন জানান, রাকিবের সঙ্গে একাধিকবার বিয়ের বিষয়ে কথা হযেছে। শারীরিক সম্পর্কও বেশ কিছুদিন হয়েছে। রাকিব বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি। পারেননি রোকেয়াকে ছাড়তে, পারেননি জেরিনকে আলাদা করে রাখতে।
গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার জানান, এতদিনে হাসানকে গ্রেফতার করা সম্ভব হতো। মামলার পর জেরিন পুলিশের হেফাজতে না থাকায় তার সঙ্গে হাসানের একাধিকবার কথা হয়েছে। ওই কথায় বারবার হাসানকে স্থান পরিবর্তন করতে বলেছেন জেরিন। তার কথা মতো হাসান ভারতের ভিসা দিয়ে ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ জন্য হাসান ভারতে গিয়ে একবার ঘুরেও এসেছেন। ভারতে নাকি তিনি ভিসাও করতে দিয়ে এসেছেন। এরই মধ্যে হাসানের গ্রামের বাড়িতে মিরপুর থানা পুলিশ গিয়ে গণ্ডগোল পাকিয়ে দিয়েছে। নাহলে হাসান গ্রেফতার হয়ে যেত। তারপরেও খুব শিগগিরই হাসান গ্রেফতার হবে বলে দাবি করেন গোযেন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
রোকেয়া হত্যায় স্বামী রাকিব জড়িত কি না জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, রাকিব যেহেতু ভাবির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করেছেন, তাই তাকে একাধিকবার বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। আবার তড়িঘড়ি করে ডাকাতি মামলা করেছেন থানায় গিয়ে। তাই তদন্তের স্বার্থে রাকিবকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া রাকিবের ভাই জাকির, জেরিনের ছেলে সুয়াদ এবং জেরিনের খালু জাফর আহমেদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
কাজের মেয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা জানান, প্রথম দিকে জেরিন বলেছিলেন, তিনি কিছুই জানেন না। কাজের মেয়েকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জেরিন হত্যা সম্পর্কে সত্য বলতে শুরু করেন। হত্যায় জড়িত সব আসামিদের না ধরা এবং হত্যার সকল ক্লু উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিহতের ভাই অ্যাডভোকেট হাবীবুর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, রোকেয়া হত্যায় হাসান নামের একজনকে জড়ানো হয়েছে। আদৌ হাসান নামের কেউ রোকেয়াকে হত্যা করতে এসেছিলেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। রাকিব ও জেরিন মিলেই রোকেয়াকে হত্যা করে হাসানের নাম চালিয়ে দিতে পারেন।
থানা পুলিশ বাসার কেয়ারটেকারকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করেনি? হাসানের অফিসের ঠিকানা কল্যাণপুরের আরবান হেলথ সোসাইটিতে কেন খোঁজ নেয়নি পুলিশ? আর কেনইবা রাকিব মামলায় একজনকেই জড়ালেন? তাও আবার ডাকাতির মামলায়? অথচ কিছুদিন আগেও জেরিন রোকেয়াকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। এসব প্রশ্নই বলে দেয়, রোকেয়া হত্যার সঙ্গে জেরিন ও রাকিব উভয়ই জড়িত।
উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে কল্যাণপুর প্রাইমারি স্কুল রোড সংলগ্ন ১৯/১ নম্বর বাসায় স্কচটেপ দিযে মুখমণ্ডল পেঁচানো রোকেয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেলা ৩টার দিকে খবর পেয়ে ওই বাসায় যায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লাশের প্রাথমিক সুরতহালের প্রতিবেদনকারী কনস্টেবল জানান, জেরিনের ভাষ্য মতে বেলা ১১টার দিকে রাকিবকে মোবাইল করে বাসায় ডেকে আনা হয়। তাহলে বেলা ১১টার দিকে রাকিব বাসায় এসে স্ত্রীর লাশ দেখার পরও কেন এত দেরিতে বিকেল ৩টার দিকে পুলিশকে জানানো হয়?
কনস্টেবল আরো জানান, ওই দিন ঘটনাস্থল থেকে প্রথমে পুলিশ জেরিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায়। লাশের আলামত সংগ্রহের কাজ করছিল পুলিশ। এমন সময় রাকিবের ফোনে একটি কল আসে। এরপর রাকিব থানায় যেতে চান আর বলেন, ‘জেরিনকে চালান করে দেবেন, আমি থানা যাচ্ছি।’
‘আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হয়ে গেছে। জেরিনকে আজ চালান করা যাবে না। তাকে থানাতেই রাখা হবে। আপনি এখানেই থাকেন। লাশ থানায় নেওয়া হলে তখন সঙ্গে গেলেও হবে’, উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা রাকিবকে এমন কথা বললেও রাকিব লাশ রেখেই থানায় চলে যান এবং মামলা দায়ের করেন। এরপর জেরিনকে পুলিশ নিয়ে যায়।
মামলার পর তদন্তে নামে পুলিশ। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তদন্তে অগ্রগতি না আসায় ঊর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে গত ২৭ মে মামলাটি গোয়েন্দা বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মশিউর রহমান। এ ছাড়া মামলাটির ছায়া তদন্ত করছেন সিআইডির পরিদর্শক মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি চৌ্কশ দল।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রাজধানীতে আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন
ঢাকা মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৬ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েনবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ২৩
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, মহিলা আওয়ামী লীগবিস্তারিত পড়ুন