রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুফল ভোগ করছে দেশের অর্থনীতি: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন,সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অর্থনীতি তার সরাসরি সুফল ভোগ করছে। সোমবার সংসদের বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বাজেটের অগ্রগতি প্রতিবেদন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান উত্থাপন করেন। এর আগে বিকেল পাঁচটায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯ এর ১৫(৪) ধারা অনুযায়ী ‘বাজেট ২০১৬-১৭: দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এতে তিনি বলেন, ‘দিন বদলের সনদ বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মুদ্রা বিনিময় হারসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালকসমূহের অবস্থান সন্তোষজনক। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি স্থিতি ও সহনীয় পর্যায়ে থাকায় জনজীবনে স্বস্তি নেমে এসেছে ।’
অর্থমন্ত্রীবলেন, ‘জনজীবনে স্বস্তি বজায় রাখতে মূল্যস্ফীতিকে আমরা সহনীয় পর্যায়ে রেখেছি। এক্ষেত্রে আমাদের রয়েছে বিরাট সাফল্য। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়লেও মূলত খাদ্য মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমেছে। সন্তোষজনক কৃষি উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের স্থিতিশীল এবং সর্বোপরি স্থিতিশীল পরিবেশে দেশব্যাপী পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বিধায় ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি আর বাড়বে না।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদের হার ব্যবধান কমাতে সব ব্যাংক সামনভাবে দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেনি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর সাফল্য বেশি। খাতভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বৃহৎ শিল্প ও সেবাখাতে সুদের হার ব্যবধান বর্তমানে কমে এসেছে।’
আমদানি ও রফতানি পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি গতিশীল না হওয়ায় বিশ্বে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। আমাদের প্রধান দুটি রফতানিবাজার আমেরিকা ও ইউরোপে বিগত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। তবে আমাদের রফতানি আয় সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রফতানি বেড়েছে বিগত অর্থ বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৪৪ ভাগ।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ভোগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ছে। বিগত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৮ দশমিক ১৮ ভাগ।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে জুন ২০১৬ সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবাসী নিয়োগ হলেও প্রবাসী আয়ে গতিশীলতা আসেনি। বিগত বছরের তুলনায় প্রবাস আয়ের প্রবাহ কমেছে ১৭ দশমিক ৬৪ ভাগ।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এলক্ষ্য অর্জনের পথে আগের অর্থবছরের তুলনায় কর রাজস্ব আদায় ১৭ দশমিক এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট রাজস্ব আয় বেড়েছে ৮৮ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। মোট সরকারি ব্যয় ৭৬ হাজার ৬২১ কোটি টাকা হতে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৫ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়ন বিগত অর্থবছরে দ্বিতীয় প্রান্তিকের ১৭ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা থেকে ২৭ দশমিক ৭ ভাগ বেড়ে হয়েছে ২২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। আইএমইডি’র তথ্য অনুযায়ী এই সময়ে এডিপি ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা (নিজস্ব অর্থায়ন ব্যতীত)।রফতানি আয় বিগত অর্থবছরে প্রথমার্ধের ১৬ হাজার ৮৪ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৬ হাজার ৭৯৮ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর নাগাদ মুদ্রার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৩ ভাগ। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম। মূলত সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হয়েছে। ফলে, ব্যাপক মুদ্রা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সময়ানুগ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ স্বাভাবিক হবে এবং বছর শেষে মুদ্রা সরবরাহ ও অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের গতিশীল অগ্রযাত্রায় ২০১৬-১৭ একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে সকল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশে বর্তমানে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনীতি তার সুফল সরাসরি ভোগ করছে। উন্নয়নের এই মহাআয়োজনে প্রয়োজন আমাদের সকলের কার্যকর অংশগ্রহণ। বিশ্বসভ্যতা ও জাতীয় উন্নয়নের প্রধান আশঙ্কা জঙ্গিবাদ ও উগ্রপন্থী মনোভাব। সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার দুষ্ট প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে সরকারের নেওয়া প্রতিটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব, আর দেশের মানুষের নিরলস প্রচেষ্টায় অচিরেই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ করে ‘শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা পাবে। আর এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমরা প্রতিষ্ঠিত করবোই।’’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন