রাজন হত্যায় অভিযুক্ত কামরুল সৌদি আরবে আটক
সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চোর অপবাদে শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত কামরুল ইসলামকে সৌদি আরবে আটক করা হয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় তাকে আটক করা হয়। স্বরাষ্ট্র্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শিশু রাজন হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম সৌদি আরবে আটক হওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি।’কামরুল সৌদি আরবে আটক হওয়ার বিষয়ে সেদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, প্রবাসী বংলাদেশিদের সহায়তায় সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে জেদ্দায় তাকে আটক করা হয়। এরপর তাকে সৌদি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ টেলিফোনে আরো বলেন, রাজন হত্যায় অভিযুক্ত কামরুল ১১ জুলাই রাতে সৌদি আরবে পৌঁছেন। তিনি জেদ্দার হাইল রবি এলাকায় এক সৌদি নাগরিকের গাড়ি চালকের কাজ করতেন। কামরুল যেখানে থাকেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় সেই এলাকায় অভিযান চালিকে তাকে আটক করা হয় জানান তিনি।
তিনি বলেন, কামরুল আটক হওয়ার বিষয়টি এরইমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী শিগগিরই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
গত বুধবার কুমারগাঁও বাসস্টেশন সংলগ্ন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে ১৩ বছরের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে চুরির অপবাদ দিয়ে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।
হত্যার পর তার মরদেহ মাইক্রোবাসে করে কুমারগাঁও গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি খালি মাঠে মরদেহটি রাখার সময় স্থানীয় লোকজনের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে। তারা মরদেহ রাখতে যাওয়া কয়েকজনকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে জনতা মুহিত আলম নামে একজনকে আটক করলেও পালিয়ে যায় অন্যরা।
পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে ঘটনার বর্ণনা দেয় মুহিত। ঘটনার একদিন পর লাশ দেখে পরিবারের লোকজন শনাক্ত করেন রাজনকে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। মামলায় রাজনের লাশ ফেলার সময় হাতেনাতে আটক মুহিত ও তার ভাই কামরুল ইসলাম (সৌদি প্রবাসী) তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে আসামি করা হয়।
রাজন হত্যার পর গত শনিবার রাতে ফেসবুকে একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। ২৮ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে ফুটে উঠেছে শিশু রাজনকে বর্বর নির্যাতনের চিত্র। ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, চোর সন্দেহে রাজনকে কুমারগাঁও বাসস্টেশনের একটি দোকানঘরের বারান্দার খুঁটিতে বেঁধে রাখা। এতে তিন-চারজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও ভিডিওতে দুজনের চেহারা দেখা যায়।
ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, রাজনকে চোর অপবাদ দিয়ে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করতে। প্রায় ১৭ মিনিট রাজনকে অনেকটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রোল দিয়ে পেটানো হয় এবং নানা প্রশ্ন করা হয়। একপর্যায়ে মাটিতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে পানি খাওয়ার আকুতি জানায় রাজন। কিন্তু পানির বদলে ‘ঘাম খা’ বলে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
কয়েক মিনিটের জন্য রাজনকে হাতের বাঁধন খুলে রশি লাগিয়ে হাঁটতে দেওয়া হয়। ‘হাড়গোড় তো দেখি সব ঠিক আছে’ এই বলে রাজনের বাঁ হাত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে কয়েক দফা পেটানো হয়।
ভিডিওচিত্র ধারণ করার সময় যে সময় উল্লেখ রয়েছে তাতে দেখা গেছে সকাল ৭টা। একদিকে রাজনের মুখে আর্তচিৎকার, অন্যদিকে নির্যাতনকারীদের মুখে অট্টহাসি ও নানা কটূক্তি। ভিডিও চিত্রে রাজনের নখে, মাথা ও পেটে রোল দিয়ে আঘাত করে এক সময় বাঁ হাত ও ডান পা ধরে মোচড়াতেও দেখা যায়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে শিশু রাজন।
বেওয়ারিশ হিসাবে একদিন রাজনের মরদেহ রাখা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। সেখানে রাজনের পরিবারের সদস্যরা তাকে শনাক্ত করেন।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন বলেন, নির্যাতন ভিডিওচিত্রে ধারণ করার বিষয়টি দেখেছি। যারা দেখেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথাও হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে মামলার আসামি চারজনই সম্পৃক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর দুজন থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, ভিডিওচিত্র ধারণসহ পুরো ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুহিতকে আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। এ মামলার অন্যতম আসামি সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলামের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কামরুল যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানবন্ধন করেছে এলাকাবাসী। রোববার দুপুরে রাজনের বাসার সামনে এলাকাবাসী মানবন্ধন করে। এতে শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু অংশ নিয়ে রাজনের খুনিদের ফাঁসি দাবি জানায়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া প্রতিবাদী নারী পুরুষদের কণ্ঠে ছিল ঘাতকদের প্রতি ঘৃণা ও নিহত রাজনের প্রতি সমবেদনা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন