রা:বি: শিক্ষক সম্পর্কে একি কি বললেন সাবেক ছাত্রী !
আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী ছিলাম। আজ যখন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক আখতার জাহান জলির আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে অনেক বড় বড় মানুষ অনেক কথা বলছেন, তখন নিজের কিছু কথা না লিখে পারলাম না। কারণ মানুষের ভণ্ডরূপ কতক্ষণই বা মেনে নেয়া যায়? বহুদিন ধরে এসব অন্যায় অবিচার দেখেছি। কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি, আজ আর চুপ থাকতে পারছি না।
আমার মত আরো অনেকেই ফেসবুকেই অনেক না বলা কথা বলা শুরু করেছেন। আমরা সবাই চাই কিছু অন্যায়, কিছু ভণ্ডামি প্রকাশ হোক। আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগটি এর জন্মলগ্ন থেকে কয়েকজন ভণ্ড শিক্ষকের হাতে জিম্মি ছিল, আজো আছে। আমরা যখন নবীন শিক্ষার্থী, তখন এ সমাজের কিছু জ্ঞানী, অতি স্মার্ট শিক্ষক এসে বিভাগে যোগ দিলেন। তারা এত জ্ঞানী ছিলেন যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে তারা ‘মাদ্রাসা’ বলে বাইরে হাসাহাসি করতেন।
আসলেই তাই। আমরা মফস্বলের ছেলেমেয়ে, তাদের মত স্মার্ট আসলেই ছিলাম না। যাই হোক, এইসব শিক্ষকদের মধ্যে দুই প্রগতিশীল (একজন পুরুষ ও একজন নারী) শিক্ষক জুবিরি ভবনে পাশাপাশি রুমে থাকতেন। তুমুল তাদের প্রেম, সব সংস্কার তারাই ভেঙ্গে ফেলবেন- এমনি ভাবসাব।
সেসময়, দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় বর্ষে পড়ি। পরীক্ষার হলে হঠাৎ ঘটে গেল এক অভাবনীয় ঘটনা। নেশাগ্রস্থ অবস্থায় প্রগতিশীল পুরুষ শিক্ষকটি পিছন থেকে এসে একটি ছাত্রীর ঘাড়ে চুমু খেলেন প্রকাশ্যে। একথা জানার পর হতভম্ব আমরা। ছাত্রীটি অভিযোগ জানালো সাথে সাথে। কিন্তু অবাক হয়ে আমরা দেখলাম, পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিলেন অভিযুক্ত শিক্ষকটির প্রগতিশীল প্রেমিকা, তাদের আরেকজন প্রগতিশীল বন্ধু ও সহকর্মী শিক্ষক মিলে।
প্রথমেই কিছু শিক্ষক ও ছাত্রের মুখ বন্ধ করা হল। পরে মেয়েটিকে বের করে দেয়া হলো ডিপার্টমেন্ট থেকে। শুধু তাই নয়, মেয়েটি পরবর্তীতে সমাজবিজ্ঞানে ভর্তির চেষ্টা করলে, সেটিও তারা বানচাল করে দেন। এই ঘটনায় নিজের দোষ তার ঘনিষ্ঠ লোকজনের কাছে স্বীকার করেছিলেন সেই শিক্ষক, বলেছিলেন, তার বোন পরিবারের অমতে বিয়ে করায়, তাই নিয়ে দুশ্চিন্তা করে নেশা করেছিলেন তিনি, ফলে ভুল হয়ে গেছে তার।
সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো, এরপর ওই চরিত্রহীন শিক্ষকের সাথে তার প্রেমিকা সেই প্রগতিশীল শিক্ষিকা আরো অন্তত সাত আট বছর প্রেম করেন। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইনি, কিন্তু আজ যখন দেখি, সেই প্রগতিবাদীরা আখতার জাহান জলির সুইসাইডকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন- জলি কেন সংসার ছেড়ে গেলেন না, জলি কেন মেনে নিলেন অত্যাচার, জলি কেন ভালো মেয়ে হয়ে থাকলেন- এইসব প্রশ্ন করে নিজেকে নারীবান্ধব, নারীবাদী হিসেবে প্রসিদ্ধ করতে চাইছেন, তখন আর চুপ করে থাকা সম্ভব হলো না।
আমি সেই শিক্ষিকার কাছে জানতে চাই, সেইদিন কোথায় ছিল আপনার প্রতিবাদ? সেইদিন নিজের চরিত্রহীন প্রেমিককে মেনে নিয়েছিলেন কেন? জলি বিয়ে করেছিলেন, বিবাহের বন্ধন ছিল, সন্তান ছিল, সেদিক থেকে চেষ্টা নিশ্চয়ই করেছিলেন সংসার টিকিয়ে রাখতে, আরো দশজন নারী বা পুরুষ যা চায়। কিন্তু আপনার তো বিবাহ বন্ধন ছিল না, সন্তান ছিল না, তবে কেন সেইদিন অন্যায় মেনে নিয়েছিলেন? এবং সেই অসৎ বিকৃতমনা প্রেমিককে বাঁচাতে কেন আরো একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করতে সহযোগিতা করেছিলেন? তখন যদি সেই বহিস্কৃত ছাত্রীটি আত্মহত্যা করতো তবে তিনি কি এখনকার মতই তাকেও বিচার করতে বসতেন?
খুবই অবাক হচ্ছি, জলি ও তানভিরের সাথে যার সম্পর্ক তেমন ঘনিষ্ঠ ছিল না, তিনি একপেশেভাবে জলিকে, তার মানসিক অবস্থাকে বিচার করতে বসেছেন। একপেশেভাবে জলিকে দুর্বল, মানসিক শক্তিহীন, তথাকথিত সাধারণ মেয়ে বলে আখ্যা দিতে চেয়েছেন। প্রত্যেকটা মানুষই আলাদা। তাদের জীবন আলাদা, মানসিক শক্তিও আলাদা। এত জ্ঞান অর্জনের পরও যারা সব ঘটনাকেই জেনারালাইজ করেন, তাদের কীভাবে জ্ঞানী বলি আমরা?
তানভীরের নোংরা চরিত্র, দুর্ব্যবহার- কোনকিছু নিয়েই কোন বক্তব্য দেখলাম না। কিন্তু জলির বিচার দেখলাম। এই হল তথাকথিত নারীবাদের পতাকা উড়ানো জ্ঞানী শিক্ষকদের দল। যারা মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেন, যারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে তাদের উৎসাহ যোগান এবং পরে সাফাই গান।
আজ শুধু একটা কথাই বলতে চাই। তানভির নামের ব্যাক্তিটিকে তার যথাযথ প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া হোক। প্রগতিশীলতার নামে যুগের পর যুগ তারা যে নোংরামো আর অনাচার করে এসেছেন, তার শেষ হোক। তাকে যারা সমর্থন যোগাচ্ছেন তাদের মুখোশ খুলে যাক। আজ এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।
লেখক: শাহানা কাকলী, সাবেক শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
(এটি লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। এর সাথে আমাদের মতের কোন সম্পৃক্ততা নেই) সূত্র: ডেইলি নিউজ
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন