রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়ার ফেরত নেওয়া নিয়ে সংশয়
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য (স্পেন্ট ফুয়েল) রাশিয়া ফেরত নেবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার শুরু থেকেই সরকার বলে এসেছে, রাশিয়া তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য ফেরত (টেক ব্যাক) নেবে। কিন্তু ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সাধারণ চুক্তিতে (জেনারেল কন্ট্রাক্ট) তেমন কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেওয়ার বিষয়ে সাধারণ চুক্তির ৮ নম্বর অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আলাদা একটি চুক্তিতে উভয় পক্ষ যেসব শর্তে একমত হবে, সেই অনুযায়ী তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে আলাদা এই চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছে এবং সেটি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। সেই আলোচনায় বাংলাদেশ তার আগের অবস্থান বজায় রাখলেও রাশিয়ার অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয়। রাশিয়ার বর্তমান অবস্থান হচ্ছে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য পরিবহনযোগ্য হওয়ার পর রাশিয়া তা নিয়ে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত (রিসাইকেল) করবে। এরপর তা বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে এবং তারপর থেকে তা বাংলাদেশকেই সংরক্ষণ করতে হবে। তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেওয়ার বিষয়ে চুক্তির খসড়া নিয়ে দুই পক্ষের আলোচনায় রাশিয়ার এই মত প্রকাশ পাচ্ছে। এই কারণে চুক্তিটি সই হতেও বিলম্ব হচ্ছে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ইউরেনিয়াম-২৩৮। পারমাণবিক চুল্লিতে এই জ্বালানি শতভাগ ব্যবহৃত হয় না। যেটুকু বাকি থাকে, সেটাকেই বলে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য। এটি উচ্চমাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। তাই পারমাণবিক চুল্লি থেকে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য অপসারণ করার পর তা বিশেষ ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করতে হয়। এরপর তা রিসাইকেল (পরিশোধন) করে পুনরায় কিছু পরিমাণে ব্যবহার করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে তা থেকে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয় বিকিরণ অনেক বছর ধরে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সূত্র জানায়, সাধারণ চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগে আরও চারটি চুক্তি সই হবে। এগুলো হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো আয়ুষ্কালে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা; তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেওয়া; যেকোনো বিষয়ে চাহিদা অনুযায়ী নিশ্চিত সার্ভিস সরবরাহ করা এবং পারমাণবিক অবকাঠামোর একাংশ তৈরি ও উন্নয়ন।
কমিশনের সূত্র জানায়, গত ২৫ ডিসেম্বর সাধারণ চুক্তি সই হওয়ার পর এই চারটি চুক্তি সইয়ের জন্য ছয় মাসের একটি পথনকশা প্রণয়ন করা হয়। এই ছয় মাসের মধ্যে অর্থাৎ গত জুন মাসের মধ্যে চারটি চুক্তিরই খসড়া চূড়ান্ত করে সই করার কথা ছিল। এ জন্য প্রতি মাসে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দুটি করে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ারও কথা ছিল। চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছে। বৈঠকও হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চুক্তি সই হয়নি। কারণ তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেওয়ার বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে বিপজ্জনক বর্জ্য। এই বর্জ্যরে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিরাপদ পর্যায়ে আনার জন্য কয়েক যুগ ধরে বিশেষ ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করতে হয়। তারপর আবার পরিশোধন করে কিছু ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এই সংরক্ষণ ও পরিশোধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ ও উচ্চতর প্রযুক্তিনির্ভর।
জানতে চাইলে পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন বলেন, তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য অত্যন্ত সুরক্ষিত ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করতে হয়। এ জন্য এমন একটি বিচ্ছিন্ন স্থান প্রয়োজন হয়, যেখানে কখনো কোনোভাবে পানি যাবে না। সেই স্থানটি রাখতে হবে শক্তিশালী কংক্রিট দিয়ে ঘেরা। অনেক বছর ধরে তার ধারেকাছে কোনো মানুষের আনাগোনা চলবে না। যদিও একসময় এই জ্বালানি পুনরায় ব্যবহার করা যায়, কিন্তু এর সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা আলাদা একটি বিশেষায়িত স্থাপনা নির্মাণ ও সংরক্ষণ করার মতো। এতে যেমন ব্যয় আছে তেমনি আছে ঝুঁকি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেওয়ার বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তন করানোর। এই চেষ্টা সফল হলে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য সরবরাহের বিষয়ে যে চুক্তি হবে সেখানে তা অন্তর্ভুক্ত হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ একটু সমস্যায় পড়বে। কারণ, সে ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য আলাদা একটি প্রকল্প হাতে নিতে হবে। কিন্তু এ ধরনের উচ্চতর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রকল্প গ্রহণ কিংবা বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা ও সামর্থ্য কোনোটাই বাংলাদেশের নেই। ১ লাখ ১ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ২০০৯ সালে গ্রহণ করা হয়। রাশিয়ার প্রযুক্তি এবং ঋণসহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে এটির নির্মাণ পর্ব শুরু হওয়ার কথা।
এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০ বছর ধরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। কেন্দ্রের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৪ সালে চালু করার লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পাবনায় ভুয়া মেজর মমিনুল ইসলাম গ্রেপ্তার
পাবনার আটঘরিয়ায় মমিনুল ইসলাম নামে এক ভুয়া মেজরকে গ্রেপ্তার করেছেবিস্তারিত পড়ুন
পাবনায় নারীকে চুল কেটে নির্যাতনের অভিযোগে ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার
পাবনার আটঘরিয়ায় দেহ ব্যবসার অপবাদ দিয়ে এক নারীর চুল কেটেবিস্তারিত পড়ুন
পাবনায় দুই দিনে নববধু সহ ৬ জনের আত্মহত্যা
পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিভিন্নস্থানে গত দুই দিনে নববধু ও স্কুলবিস্তারিত পড়ুন