লিখিত পরীক্ষায় অনাগ্রহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের
নভেম্বরের শুরুতে (২ থেকে ৫ তারিখ) শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা নিয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নেয়ার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে জগন্নাথ, কুমিল্লা, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যে প্রক্রিয়ায় মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয় তাতে লিখিত পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। তাই এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই তাদের। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা তারা পরিপালন করছে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নেয়া হয় তিনটি বিভাগে- খাদ্যবিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান ও ইংরেজি। প্রতিটি বিষয়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে প্রার্থী অংশ নেন। সবারই মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। একেকটি বিষয়ে দুজন করে শিক্ষক নেয়ার কথা থাকলেও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয়েছে চারজন করে প্রার্থী। পুলিশ ভেরিফিকেশন করার পর দুজনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা শিক্ষক নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছি। লিখিত পরীক্ষা নেয়ার কোনো প্রয়োজন পড়েনি। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হবে। তাই পদের চেয়ে বেশি প্রার্থী টিকানো হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে যাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে তাদের নিয়োগ দেয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার আগেই ওই পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আর ইউজিসি যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটি আসলে কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ।’
গত ১৩ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা হয়। এখানেও শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে তিনজন শিক্ষক নেয়া হয়। প্রার্থী ছিলেন সাতজন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘ইউজিসির কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। তবে যে চিঠি আমাদের ইউজিসির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে, তাতে অনুরোধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এটি কার্যকর হবে কি হবে না সেটি বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পরীক্ষা লিখিত নেয়া হয়, আবার অনেক পরীক্ষা মৌখিক নেয়া হয়। এটি নির্ভর করে প্রার্থী সংখ্যার ওপর।’
এক প্রশ্নের জবাবে জবি উপাচার্য্ বলেন, ‘আমাদের যে মৌখিক পরীক্ষার ধরন, তাতে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীই কেবল সংশ্লিষ্ট পদের জন্য আবেদন করতে পারে।’
একই অবস্থা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের। ইউজিসির নির্দেশনানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ নেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর।
জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নেয়া ‘ফিজিবললি’ সম্ভব নয়। একজন শিক্ষার্থীর একেক দিকে দক্ষতা থাকে। তার চার বছরের ফল এবং মাস্টার্সের ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আমরা খুবই ‘ভিগোরাস’ ভাইভা নিয়ে থাকি। এরপর আসলে লিখিত পরীক্ষা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।’ তবে অন্যান্য পদে লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয় বরে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইমামুল হক বলেন, ‘ইউজিসি আমাদের পরামর্শ দিয়েছে দুটি বিষয়ে। একটি হলো লিখিত পরীক্ষা নেয়া, আরেকটি পুলিশ ভেরিফিকেশন করা। আমরা পুলিশ ভেরিফিকেশনটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। সেটি আমরা শতভাগ অনুসরণ করছি। এটি ছিল তাদের অনুরোধ, নির্দেশনা নয়। বিষয়টি নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর।’
জানতে চাইলে খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমরা ইউজিসির পরামর্শকে ভালোভাবেই নিয়েছি। তবে যেখানে প্রয়োজন হয় সেখানে আমরা লিখিত পরীক্ষা নিই। বাকিগুলোতে নিই না।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বিতরণ করেছি মাত্র। এটি তারা বাস্তবায়ন করবে কি করবে না সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়। কারণ তারা স্বায়ত্তশাসিত। আমরা তাদের ফোর্স করতে পারি না।’
অনিয়ম এড়ানোর লক্ষ্যে শিক্ষক নিয়োগে মৌখিকের সঙ্গে লিখিত পরীক্ষা নিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেয় সরকার।
এ ছাড়া সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ‘অপরাধীদের’ নিয়োগ ঠেকাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাওয়া গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসি এসব নির্দেশনা দেয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এর মধ্যে ৩৭টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় দেখভালের দায়িত্ব ইউজিসির। ইউজিসি এসব নির্দেশনা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠিয়ে দেয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, ইদানীং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ অনভিপ্রেত অবস্থার সমাধানকল্পে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে পাওয়া গোয়েন্দা বিভাগের গোপনীয় প্রতিবেদনে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে দুটি সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়, এতে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রার্থীর মেধা যাচাই করা সহজ হবে এবং অনিয়মের সুযোগ হ্রাস পাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের পূর্বে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন বা গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক ব্যক্তিগত তথ্যাদি যাচাই হয় না। ফলে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ব্যক্তি বা অপরাধীরা নিয়োগের সুযোগ পায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের আগে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে নিয়োগ করা যাবে।’ ঢাকাটাইমস
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
এইচএসসির ফল প্রকাশ মঙ্গলবার, জানা যাবে যেভাবে
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করাবিস্তারিত পড়ুন
বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নতবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন