শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন, পুলিশ বলছে ডায়রিয়ায় মৃত্যু
নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের গৃহবধূ নিপালী বেগম। মৃত্যুর পর তাঁর শরীরে অসংখ্য নির্যাতন ও আঘাতের চিহ্ন দেখেছে পরিবারের সদস্যরা ও প্রতিবেশীরা। কিন্তু পুলিশ ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছে, ডায়রিয়ার নিপালীর মৃত্যু হয়েছে।
নিপালীর স্বজনদের অভিযোগ, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ক্রমাগত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনে নিপালীর মৃত্যু হয়েছে।
নিপালীর ছোট ভাই উজ্জ্বল জানান, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর বোন নিপালীর মৃত্যু হয়। তিনি অভিযোগ করেন, নিপালীর স্বামী মো.আবুল কালাম প্রায়ই তাঁকে (নিপালী) মারধর করতেন। মঙ্গলবার দুপুরে মারধরের পর আবুল কালাম নিপালীকে ভ্যানে করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পথে আবাদপুকুর বাজার এলাকায় নিপালীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাঁদের কাছে মুঠোফোনে খবর দেন কালাম। পরে তিনি গিয়ে আবাদপুকুর বাজার থেকে বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
রাতে নিপালীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে পরে আদমদীঘি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক নিপালীকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে নিপালীর মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে নিপালীর স্বজনরা জানায়, ১০ বছর আগে রানীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের রাতোয়াল দক্ষিণপাড়ার আবুল কালামের সঙ্গে নিপালীর বিয়ে হয়। কালাম বিভিন্ন অজুহাতে নিপালীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। এক সময় বৈশাখী (৮) ও আবু কাওছার (৫) নামের দুই ছেলেমেয়ে হয় নিপালীর। সন্তান জন্মের পরও কালামের নির্যাতন কমেনি। বরং গত কয়েক বছরে এর মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
নিপালীর কয়েকজন আত্মীয় জানান, হাসপাতালে মৃত্যুর পর নিপালীর আশপাশে ছিলেন না স্বামী আবুল কালাম। এমনকি বুধবার এশার নামাজের পর নিপালীর লাশ বাবার বাড়িতে দাফনের সময়ও তাঁর স্বামী ও দুই সন্তান ছিল না। ছিল না শ্বশুরবাড়ির অন্য লোকজনও।
নিপালীর শেষ গোসলে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী জানায়, লাশ গোসল করানোর সময় তারা নিপালীর শরীরে অত্যাচার-নির্যাতনের অনেক চিহ্ন দেখতে পেয়েছে।
উজ্জ্বল অভিযোগ করে বলেন, নিপালীর মৃত্যুর পরপর তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চাচা ফজলু, জিল্লুর রহমান ও আবুল কালামের চাচা রুবেল হোসেনের উপস্থিতিতে বৈঠক করা হয়। তারা নিপালীর শিশু ছেলেমেয়ের নামে ছয় বিঘা জমি লিখে দেন। এ ছাড়া রানীনগর থানা পুলিশকেও টাকা দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করা হয়। টাকার বিনিময়ে নিপালী হত্যা ধামাচাপা দিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁর বোনের লাশ দাফন করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে নিপালীর চাচা ফজলু জানান, মেয়ের পক্ষ থেকে তাঁর সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একাধিক ঘরোয়া বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর ছেলে আবু কাওছারকে চার বিঘা ও মেয়ে বৈশাখীকে দুই বিঘা জমি লিখে দেওয়া হয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় রানীনগর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পর পুলিশের পরামর্শে বুধবার রাতে নিপালীর লাশ দাফন করা হয়।
এ ব্যাপারে নিপালীর স্বামী আবুল কালামের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। কালামের চাচাতো ভাই জিয়া বলেন, ‘আমার ভাইয়ের স্ত্রী অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে ভালো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বাবার বাড়িতে যাওয়ার পথে হঠাৎ বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নিপালী।’
তবে নিপালীর শ্বশুর ইয়াদ আলী মণ্ডল বলেন, ‘আমার ছেলের বউ মৃত্যুর আগে অসুস্থ ছিল না। গত মঙ্গলবার সে বাবার বাড়িতে যাবে বললে আমরা একটি ভ্যানগাড়ি ভাড়া করে তাকে একা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তার মাঝে হঠাৎ করে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।’
এ ব্যাপারে রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নিপালী মারা গেছে। আমার কাছে দুই পক্ষের কেউই কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নওগাঁয় পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত
নওগাঁর মান্দায় পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন।বিস্তারিত পড়ুন
এ দুর্ভোগের শেষ কোথায় ?
নাজমুল হক নাহিদ,আত্রাই (নওগাঁ) থেকে: এ দুর্ভোগের শেষ কোথায়, আরবিস্তারিত পড়ুন
আত্রাইয়ে ৩ গ্রামের মানুষের নদী পারাপারে নৌকায় একমাত্র ভরসা
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) থেকেঃ নওগাঁর আত্রাইয়ে একটি ব্রিজেরবিস্তারিত পড়ুন