শিগগিরই কমিটি করতে খালেদার নির্দেশ, তোড়জোড় ছাত্রদলে
শিগগিরই ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও সুপার ইউনিটের কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত শনিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে গুলশান-২-এ নিজের বাসভবনে ছাত্রদলের ৬ শীর্ষ নেতাকে ডেকে নিয়ে এ নির্দেশনা দেন তিনি। নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচনের আগেই কেন্দ্রীয় কমিটি ও সুপার ইউনিট গঠনে ছাত্রদলও তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। বিএনপি-ছাত্রদলের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দ্রুত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণ, ঢাকা মহানগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলো গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বৈঠকে খালেদা জিয়া ঢাকা মহানগরকে চারটি ভাগে বিভক্ত করার পরামর্শ দেন। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম শাখায় পরিণত হবে। ওই বৈঠকে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ১ম সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, সহ-সভাপতি ভিপি কামাল, যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহাগ ও আসাদুজ্জামান আসাদ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বৈঠকে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহিউদ্দীন চৌধুরী এ্যানিও ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এজমল হোসেন পাইলট বলেন, এটা তো বৈঠক ছিল না। ম্যাডাম লন্ডন থেকে ফেরার পর আমরা কয়েকজন সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম।
বৈঠক সূত্রের দাবি, গত ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডন সফরে যাওয়ার আগে ১১/১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার কাছে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়। সাবেক ছাত্রদলের দুই সভাপতি বিএনপি নেতা শহিদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও বর্তমানে সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান—এই চারজন মিলে ৪৩১ জন সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি করেন। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন কমিটির জন্য কয়েকটি নাম উপস্থাপন করা হয়েছিল। যদিও কোন্দল সৃষ্টি হবে এবং এ নিয়ে গোয়েন্দাবাহিনী সুযোগ নিতে পারে, এমনটি মনে করে কমিটি অনুমোদন করেননি খালেদা জিয়া। এরপর গত শনিবার রাতে ডেকে নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের তাগিদ দেন তিনি।
যদিও বৈঠকে অংশ নেওয়া এজমল হোসেন পাইলট দাবি করেন, রবিবারের বৈঠক কোনও আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল না।
ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, রেওয়াজ অনুযায়ী ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। ওই দিনই কমিটি ঘোষণা করা হয়ে থাকে। যদিও এ বছর এই সুযোগ পাচ্ছে না বিএনপির সহযোগী এই সংগঠনটি। ৩০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচন থাকায় এ মাসেই কমিটি করার চিন্তা করছেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগরের চার শাখা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি করতে চায় তারা। সে ক্ষেত্রে সুপার ইউনিটগুলোর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা না হলেও আহ্বায়ক কমিটির পক্ষেই বেশির ভাগ মত দিচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি: আঞ্চলিক-প্রীতি ও সিনিয়র নেতাদের ভয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল শাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এই শাখার ওপরেই কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম অনেকখানি নির্ভর করে। এ কারণে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা এই শাখা গঠনে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না।
কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মামুন বিল্লাহ, এজমল হোসেন পাইলট, ইখতিয়ার কবীর, নুরুল হুদা বাবু—এই চারজনের মধ্যেই ঢাবি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সম্ভাবনা বেশি। এর বাইরে ফেরদৌস মুন্নাও ঢাবির দায়িত্বে আসতে পারেন বলে একটি সূত্র দাবি করে।
সূত্রমতে, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান চান বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মামুন বিল্লাহকে। দুজনের বাড়ি বরিশালে হওয়ার কারণে আঞ্চলিকতা বড় হয়ে উঠেছে। মামুন বিল্লাহ বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ও মাঠের রাজনীতিতে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ থাকলেও ঢাবি সভাপতি ক্যান্ডিডেট হিসেবে নাম প্রকাশিত হলে সংগঠনে ও মাঠে আসা-যাওয়া বাড়িয়েছেন।
ঢাবির সভাপতি হিসেবে এজমল হোসেন পাইলটের নামও এসেছে। ক্লিন ইমেজ হিসেবে পরিচিতি এই নেতা বর্তমান কমিটির প্রথম সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে পাইলট বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার কোনও ইচ্ছা আমার নেই। আমি ঢাবির দায়িত্বে আসতে চাই না।
সিনিয়র হিসেবে ইখতিয়ার কবীরকে পছন্দ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের। ১৯৯৬-৯৭ সেশনে তারা দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীও। অভিযোগ রয়েছে, মাঠে সক্রিয় থাকলেও ‘সংস্কারপন্থী’ গন্ধ আছে। এ কারণে তিনি শেষ মুহূর্তে বাদ পড়তে পারেন। যদিও বিগত ৯৩ দিনের আন্দোলনে এই নেতার ভূমিকা ভালো ছিল। তার ভালো পদও পাওয়া দরকার—এমনটি মনে করেন ঢাবির এক তরুণ নেতা। তবে, তার রাগী স্বভাব থাকায় নেতাকর্মীরা অনেকেই তাকে পছন্দের তালিকায় পেছনে রেখেছেন।
মাঠের রাজনীতিতে এতদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন নুরুল হুদা বাবু। এই পদপ্রার্থী সম্প্রতি সক্রিয় হয়েছেন। বর্তমান কমিটিতে যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার লবিং খালেদা জিয়ার বড় বোন প্রয়াত খুরশিত জাহান হকের ছেলের পরিচিত বলে।
ছাত্রদল সূত্র জানায়, ‘ডন ভাই’ নামে একজনের খুব কাছের বাবু। এ কারণে পারিবারিক সম্পর্কের দুর্বলতায় তিনি পদলাভে এগিয়ে আছেন।
ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় অন্তত ৪জন নেতা জানিয়েছেন, সিনিয়র হওয়ার কারণেই এই চারজনকে পছন্দ এ্যানি-টুকু, রাজিব-আকরামের। এর কারণ হিসেবে এই নেতাদের যুক্তি, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির বেশিরভাগ সিনিয়র। আগামী কমিটিতে সভাপতি হিসেবেও বর্তমান কমিটির শীর্ষ কয়েকজন নেতা আগ্রহী। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বভার তরুণরা পেলে তাদের ভবিষ্যৎ-ছাত্রদল ক্যারিয়ার অনেকটাই হুমকির মুখে পড়বে। ঢাবি শাখা তরুণদের নেতৃত্বে জোটবদ্ধ হলে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে শঙ্কা রয়েছে বর্তমান কমিটির অনেকের।
ছাত্রদল সূত্র দাবি করে, সিনিয়রদের মধ্যে ঢাবির সভাপতি রাখতে চাইলে আগের কমিটির পরীক্ষিত নেতা ফেরদৌস মুন্নাকে দায়িত্ব দিতে পারে। তিনি বর্তমান কমিটি গঠনের পর বিদ্রোহ করায় তার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ বলে মনে করেন ছাত্রদলের একাধিক নেতা। ঢাবির নেতাদের অনেকের কাছে এখনও আদর্শ হিসেবে মুন্নার নামই উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে এই নেতাদের দাবি, মুন্নাকে দায়িত্ব দিলে সিনিয়রদের পরবর্তী কমিটিতে না থাকার শঙ্কা কেটে যাবে।
ঢাবি শাখার একটি সূত্র জানায়, বর্তমান ছাত্রদলের বেশিরভাগ সদস্য সিনিয়র। এ কারণে সিনিয়র বাদ রেখে ঢাবি কমিটি দিলে ক্ষতি হবে শেষমেষ ছাত্রদলের। নিষ্ক্রিয় হওয়ার শঙ্কা রয়েছে অনেক নেতারই। এ কারণে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সিনিয়র নেতা মনে করেন, সিনিয়রদের মধ্যে ২/৩ জন রেখে আহ্বায়ক কমিটি করা হোক। ওই কমিটিতে তরুণদের থেকে অন্তত ১৫-২০ জন নেওয়া হোক। তাহলে জটিলতা কমবে।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আছেন, সরদার আমিরুল ইসলাম সাগর, আল মেহেদী তালুকদার, আবুল বাশার, হাফিজ রহমান, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণসহ আরও ১৪/১৫জন নেতা। এর মধ্যে বিগত দিনের আন্দোলনে সাগর-মেহেদি সক্রিয় ছিলেন বলে তাদের ঘরানার এক হলনেতা বাংলা ট্রিবিউনকের কাছে দাবি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ ছাত্রদল নেতা বলেন, সিনিয়রদের বাইরে কমিটি দিলে আজ্ঞাবহ না থাকার আশঙ্কা করছে বর্তমান নেতারা। সমবয়সী না হলে ঢাবি কমিটি অনুগত থাকবে না, এমনটি মনে করে এ্যানি-টুকু-রাজিব-আকরামরা। তরুণদের নেতৃত্ব কমিটি হলে কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে কেন্দ্রীয় কমিটি। এই নেতা এও দাবি করেন, ঢাবির কে কী চান, এই কথার ওপর কমিটি নির্ভর করেন না। কমিটি নির্ভর করে এ্যানি-টুকু-রাজিব-আকরাম ভাইয়ের ওপর।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, সুপার ইউনিটগুলোর কমিটি দ্রুত করা হবে। কিন্তু দায়িত্বশীল কারা হবেন, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়নি। দায়িত্ব বিষয়ে ক্যাম্পাসভিত্তিক বা এলাকাভিত্তিক আলোচনা হতে পারে। চূড়ান্ত কিছু হতে সময় লাগবে।
এছাড়া, সুপার ইউনিটের বাইরে ছাত্রদলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। খুব সহসাই এই শাখার কমিটি হচ্ছে না বলে জানা গেছে শাখার বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, এই শাখার বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির কয়েকজনই চান না, এই শাখার নতুন কমিটি হোক। তারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান চায়। এই শাখার একনেতা পরিচয় উদ্ধৃত না করে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স কম। সেক্ষেত্রে পরীক্ষিত নেতাকর্মী ছাড়া একটি জেলা মর্যাদার কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়াই ভালো।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন