শিশুদের কাজ করা রাষ্ট্রের লজ্জা: হাইকোর্ট
খুনি সন্দেহে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে গ্রেপ্তার দুই শিশুর জামিন শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘এতটুকু বাচ্চারা কাজ করে, এটা আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য লজ্জার।’
আট বছরের শিশু জয়দাশ ও নয় বছরের মো. ইউসুফের জামিন শুনানিতে রবিবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।
শুনানি শেষে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুই শিশুকে জামিন দেন হাইকোর্ট। শুনানির সময় শিশু দুটি আদালতের ডায়েসের পাশে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাক্কাছিল। এ সময় তাদের কখনো জামার কলার ধরে, আবার কখনো আঙ্গুল কামড়াতে দেখা যায়।
শুনানির এক পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক শিশু দুটির উদ্দেশে বলেন, বাবুরা এদিকে এসো। তারা না আসলে বিচারপতি বলেন, তোমাদের কি আদালতে আসতে ভয় লাগে? ভয়ের কিছু নাই।
শিশু দুটি একটু এগিয়ে আসলে বিচারপতি বলেন, কি নাম তোমাদের? তোমরা কি করো? শিশু দুটি বলে,আমরা গাড়িতে কাজ করি।
বিচারক জানতে চান, তোমরা স্কুলে যাও না? শিশুরা বলে, না।
বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক বলেন, এতটুকু বয়স। ওদের তো এখন স্কুলে থাকার কথা। কিন্তু আজ এই শিশুদের কাজ করে খেতে হয়।
আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা, সমাজপতিরা অনেক কথা বলেন। কিন্তু এ বিষয় তাদের চোখে পড়ে না। রাষ্ট্রের তো দায়িত্ব ছিল এই শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা। এতটুকু বাচ্চারা কাজ করে এটা আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য লজ্জার। আমাদের সমাজ এর কি জবাব দেবে? সরকার এতো টাকা খরচ করে, এদিকে একটু গুরুত্ব দিলেই তো পারে।
আদালত বলেন, সরকার আইন করুক, স্কুল টাইমে শিশুরা বাইরে ঘোরাফেরা করলে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেবে। স্কুল টাইমে বাচ্চা শিশুদের ধরে নেওয়ার পর তাদের অভিভাবককে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। শিশুদের যারা কাজে নেবে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এই ধরনের আইন আছে।
এরপর বিচারপতি কাজী রেজা-উল বাচ্চা দুটিকে উদ্দেশে করে বলেন, বাবাকে গিয়ে বলবে, জজ সাহেব বলেছে স্কুলে যেতে। আর বড় হয়ে তারপর কাজ করবে।
এরপর আদালত শিশু জয় দাশ ও মো. ইউসুফকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেন। একইসঙ্গে আদালত এই দুই শিশুকে নিরাপত্তা দিতে পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি ও কামরাঙ্গীচর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে বয়স নির্ধারণ না করে দুই শিশুকে গ্রেপ্তার শিশু আইনের ৪৪ ধারা লঙ্ঘন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন আদালত।
আদালতে শিশুদের পক্ষে শুনানি করেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।
আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, বয়স নির্ধারণ না করে দুই শিশুকে গ্রেপ্তার শিশু আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। নিরাপত্তার পাশাপাশি দুই শিশুকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন আদালত।
গত ২৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘লাশের পরিচয় মেলেনি, খুনি সন্দেহে ২ শিশু গ্রেপ্তার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল হালিম একটি রিট আবেদন করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ নভেম্বর আদালত রুলসহ ওই দুই শিশুর বয়স নির্ণয়ের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। সেই আদেশ অনুসারে ৪ জানুয়ারি লালবাগের ডিসি ও কামরাঙ্গীচরের ওসি আদালতে প্রতিবেদন দেন। গত ১৫ জানুয়ারি সেই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত দুই শিশুকে হাজিরের নির্দেশ দেন।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রায় দুই মাস আগে পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছিল। ১০ দিন পর লাশটি নিখোঁজ এক শিশুর দাবি করে তার পরিবার একটি মামলা করে। পরে পুলিশ খুনি সন্দেহে দুই শিশুকে গ্রেপ্তার করে।
বিচারিক হাকিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে তাদের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠান।
এর আগে অভিযোগকারী পরিবার ও পুলিশ অভিযুক্ত শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের স্বীকারোক্তি নেয়। এ সবই ঘটে দুই দিনের মধ্যে। আরও পরে জিজ্ঞাসাবাদের দুটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে তুলে দেন নিখোঁজ শিশুটির এক ফুফাতো বোন।
এখনো লাশটির পরিচয় অজানাই আছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন বলছে, সে পানিতে ডুবে মারা গেছে। অভিযুক্ত দুই শিশু বলছে, মারধর করে তাদের মিথ্যা দায় স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়েছে।
মামলাটি হয়েছে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানায়। পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় শিশুটির লাশ উদ্ধার করে গত ১ অক্টোবর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের কালুনগর খাল থেকে। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম সেটা দাফন করে।
এদিকে ২৯ সেপ্টেম্বর লালবাগ এলাকা থেকে আলিফ নামের নয় বছর বয়সী এক শিশু নিখোঁজ হয়েছে বলে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন তার বাবা উজ্জ্বল ভূঁইয়া।
১১ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে আলিফের বাবা বাদী হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় শিশু দু’টির (শিশু হওয়ায় তাদের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে না) নামে খুনের মামলা করেন। এজাহারে তিনি লেখেন, অজ্ঞাতপরিচয় লাশটি তাঁর ছেলের। ওই দুই শিশু মিলে আলিফকে গলাটিপে হত্যা করে কালুনগর খালের পানিতে ডুবিয়ে দেয়। আলিফের বাবা তখনই এক শিশুকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পুলিশ রাত দেড়টার দিকে অপর শিশুকে গ্রেপ্তার করে।
শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, নয় বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে গ্রেপ্তার কিংবা আটক করা যাবে না (ধারা ৪৪/১)।
মামলার এজাহারে শিশু দু’টির বয়স বলা হয়েছে ১২ বছর। কিন্তু অভিভাবকরা বলছেন, তাদের বয়স নয় বছরের কম। আদালতে জন্মসনদ দাখিল করে মামলা থেকে এক শিশুর অব্যাহতি চেয়েছেন তার আইনজীবী। ওই সনদে দেখা যায়, তার জন্ম তারিখ ২৯ জানুয়ারি, ২০০৮। আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন
যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন