সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন জুলহাজ
সোমবার কলাবাগানে দুর্বৃত্তের চাপাতির আঘাতে খুন হওয়া জুলহাজ মান্নান বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার আদায়ে কাজ করতেন।
সোমবার রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাজ মান্নানের ফ্ল্যাটে ঢুকে তার সঙ্গে বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কেও কুপিয়ে হত্যা করে কয়েক যুবক। হামলাকারীরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলতে বলতে চলে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
সমকামীদের অধিকারের স্বীকৃতি পেতে পশ্চিমা দেশেও যেখানে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, সেখানে বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল সমাজে তা যে আরও কঠিন ছিল, তা নানা সময়ে বলে গেছেন জুলহাজ।
বিশ্বের প্রধান কোনো ধর্মেই সমকামিতাকে স্বীকার করা হয় না।
আন্দোলন-সংগ্রামের পর বিশ্বের দুই ডজনের মতো দেশে সমকামীরা অধিকার আদায় করতে পারলেও বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা শুরু হয় সম্প্রতি।
বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকারের কথা বলতে ২০১৪ সালে ‘রূপবান’ নামে একটি সাময়িকী প্রকাশ শুরু হয়, যার সম্পাদনা পরিষদে যুক্ত ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী জুলহাজ।
পত্রিকাটির বছর পূর্তি উপলক্ষে পরের বছরের জানুয়ারিতে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে সমকামীরা অদৃশ্য জীবনযাপন করে, কিন্তু আমরা জানাতে চাই যে এই সমাজেই আমরা আছি এবং আমরা আপনাদের পরিবারেই সদস্য।’
‘রূপবান সমকাম নয়, বরং সমপ্রেমে বিশ্বাসী মানুষের ভালবাসার অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরতে চায়,’ দাবি করে এধরনের পত্রিকা প্রকাশে সমস্যায় পড়ার কথাও বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা জুলহাজ।
ইউএসএআইডিতে যোগ দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রটোকল অ্যাসিটেন্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন জুলহাজ।
‘রূপবান’র উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে ‘রংধনু যাত্রা’ শিরোনামে শোভাযাত্রার উদ্যোগ এবারও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তা আটকে দেয়।
বাংলাদেশের সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘অচলায়তন ভাঙার’ কথাও বলেছিলেন জুলহাজ।
তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে, শিশু না কাঁদলে মাও দুধ দেয় না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই ইস্যুটির সমাধানে বাংলাদেশের এলজিবিটি কমিউনিটির বের হয়ে সামনে এগিয়ে আসা উচিৎ।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘অনেকে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং ফল সম্পর্কে বলবেন, কিন্তু আমরা যদি বের হয়ে না আসি আর আমাদের দাবির বিষয়ে উচ্চকিত না হই, তাহলে কীভাবে আমাদের গ্রহণ না করায় দায় কীভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে দিতে পারি।’
জুলহাজ মান্নান পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর ২০০৭ সালে থেকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে প্রটোকল অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি যোগ দেন ইউএসএআইডিতে।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সমকামী, হিজরা এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ‘বয়েজ অব বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করেছেন জুলহাজ।
কলাবাগানের লেকসার্কাস রোডের আছিয়া নিবাস নামে ছয়তলা ওই একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে ৯০ বছর বয়সী মা সখিনা খাতুনকে নিয়ে থাকতেন জুলহাজ।
নিহত জুলহাজের বাবা আবদুল মান্নান সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। তার বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে।
দুই ভাই ও এক বোনের পরিবারে জুলহাজ ছিলেন সবার ছোট। তার বড় ভাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সহ সভাপতি মিনহাজ মান্নান ইমন। মেজ ভাই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।
মাকে নিয়ে যে বাড়িতে থাকতেন জুলহাজ, সেখানেই বিকাল ৫টার দিকে খুনিরা হানা দেয়। তাদের চাপাতির কোপে জুলহাজ ও তনয় প্রাণ হারান ঘটনাস্থলেই।
নিহত তনয় (২৬) নাট্য সংগঠন লোক নাট্যদলে কাজ করতেন। পিটিএ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি ‘শিশু নাট্য প্রশিক্ষক’হিসাবে কাজ করতেন বলে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে।
তাদের কারা হত্যা করেছে, সে বিষয়ে কিছু নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে খুনের ধরন দেখে জঙ্গিদেরই সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন