সমুদ্রের নিচে এ কেমন মরন ফাঁদ!
জার্মানির উত্তরে উপকূলবর্তী এলাকার নিসর্গ সবাইকেই মুগ্ধ করে। কিন্তু সমুদ্রের নীচে রয়েছে মানুষেরই তৈরি ভয়াবহ মরণফাঁদ। মানুষ ও প্রাণীজগতের স্বার্থে বিপজ্জনক বস্তু দূর করতে সেখানে চলছে এক অভিনব উদ্যোগ।
জার্মানির উত্তর সাগরের হুকসিল উপকূলের সামনেই একটি উইন্ডমিল শোভা পাচ্ছে। এটি জার্মানিতে পুরোপুরি টেকসই জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনার প্রতীকের মতো। উপকূল থেকে দূরে এমন আরও অনেক উইন্ডমিল বসানো হলে কেমন দেখাবে, এখনই তার আন্দাজ পাওয়া যায়।
একটা আস্ত উইন্ডমিল পার্ক সৃষ্টি হচ্ছে। প্রথম মিলটির নাম ‘সামুদ্রিক বাতাস’। বছরে প্রায় ৩ লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সেটি। তবে এমন উইন্ডপার্ক তৈরির আগে বিশেষ জাহাজের সাহায্যে সমুদ্রের তলদেশ পরীক্ষা করতে হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতিদিন সকালে একদল নাবিক আরএএম জাহাজে করে বেরিয়ে পড়েন। তাঁদের লক্ষ্য উত্তর সাগরকে আরও নিরাপদ করে তোলা।
দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের ফলে সেখানে মাইন, টর্পেডো ও গ্রেনেডের বিশাল সম্ভার রয়েছে। সি টেরা অর্ডন্যান্স ক্লিয়ারিং সার্ভিসের ডিটার গুলডিন বলেন, ‘‘পরিচিত এলাকা সত্যি খুব বড়। উত্তর সাগরে নিশ্চয় ১০ লক্ষ টনেরও বেশি বিপজ্জনক বস্তু পড়ে রয়েছে।
তাছাড়া এমন সব জায়গাও রয়েছে, ডাম্পিং এরিয়া যাবার পথে যেখানে অস্ত্রশস্ত্র ফেলা হয়েছে। আবার যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তেল বাঁচাতে বিমান থেকে বাড়তি বোঝা সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছে।”
যুদ্ধ শেষ হবার পর মিত্রশক্তিও বাজেয়াপ্ত করা অস্ত্রশস্ত্র উত্তর ও বাল্টিক সাগরে ফেলে দিয়েছে। বহু দশক ধরে নোনা জল ধাতুর ক্ষয় ঘটিয়েছে। ফলে বিস্ফোরক সমুদ্রে বেরিয়ে এসেছে। ডুবুরি রোবট এখন সেগুলি শনাক্ত করছে। বিরল ক্ষেত্রে বোমা নিজে থেকেই ফেটে যায়, বিশেষ করে যখন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলে অ্যাসিড ফিউজ সক্রিয় হয়ে ওঠে।
ডিটার গুলডিন ও তাঁর বিশেষজ্ঞ দল কন্ট্রোল রুমে বসে দেখতে পান, রোবট কিছু পেলো কিনা। ডিটার বলেন, ‘‘এই অবস্থায় সবকিছু ভালো করে জানতে হবে। ঠিক কী ধরনের গ্রেনেড, কী ধরনের ফিউজ, কী ধরনের মাইন – সেটা জেনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটি সরানো কি সম্ভব? অথবা কোথাও জমা রাখা? সমুদ্রের নীচে কেবেল লাইন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে, নাকি ঘটনাস্থলেই ধ্বংস করতে হবে?”
একেবারে নিশ্চিত হতে এক ডুবুরিকে বস্তুটি পরীক্ষা করতে হয়। পোড় খাওয়া ও অভিজ্ঞ এই ডুবুরিরা কার্যত সব সবরকম বিস্ফোরক হাতে নিয়েছেন। এই বস্তুটি সম্ভবত একটি সি-মাইন। তাই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। তাড়াহুড়ো করে দ্রুত কিছু করলে চলবে না। কিন্তু ঝুঁকি কখনোই পুরোপুরি দূর করা যায় না। ডুবুরি হাইকো ভ্লক বলেন, ‘‘ভয় করলে চলে না। এমন জিনিস, অস্ত্র বা বিস্ফোরক সম্পর্কে মনে ভয় থাকলে অফশোর ক্ষেত্রে কাজ করার কোনো অর্থ হয় না।”
শুধু উদ্ধার করলেই কাজ শেষ হয় না। বিশেষ বাহিনী এসে বড় আকারের বোমা নিষ্ক্রিয় করে। অনেক সময় বিপজ্জনক ছোট বস্তু জলে ভেসে উপকূলে চলে আসে। বিস্ফোরক উদ্ধার পরিষেবার হান্স মোয়র বলেন, ‘‘পর্যটক বা পথিকরা এই সব বস্তু খুঁজে পেয়েছেন। তখন কর্তৃপক্ষের কাছে তা জানাতে হয়।”
নিষ্ক্রিয় করা না গেলে ঘটনাস্থলেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সরানো না গেলে জলের নীচেই সেটি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। কারণ তাঁদের মতে, জলের মধ্যে বিস্ফোরণ সেখানকার প্রাণীদের জীবন বিপন্ন করে তোলে। পরিবেশ সংরক্ষণ জোটের ইয়ান শ্যুরিংস বলেন, ‘‘আগে ডায়নামাইট দিয়ে মাছ ধরার যে প্রবণতা শুরু হয়েছিল, সৌভাগ্যক্রমে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শরীরে একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মাছ জলের মধ্যে চাপের তারতম্য বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী চলাফেরা করে। কিন্তু এমন বিস্ফোরণে তীব্র শব্দ হয় এবং প্রচণ্ড শক্তিশালী চাপের তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। ফলে মাছের মৃত্যুও হতে পারে।”
জ্বালানি সংস্থার হয়ে যারা কাজ করেন, প্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে তাঁরা মোটেই উদাসীন নন। কিন্তু উত্তর সাগরে বোমা সরানোই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। এই সব বিস্ফোরক ক্রমশঃ আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
জাহাজ চলাচল থেকে শুরু করে সমুদ্রের নীচে প্রাণীজগতের জন্য এটা একটা হুমকি। উইন্ডপার্ক তৈরির ক্ষেত্রেও এই বাধা বিলম্ব ঘটাচ্ছে। ডুবুরিরা তাঁদের ক্ষমতার সীমা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। ডিটার গুলডিন বলেন, ‘‘উত্তর সাগরে বিস্ফোরক দূর করার বিষয়ে আলোচনা করলে জানতে হবে, যে আগামী ১০ থেকে ২০ বছর ধরে কোটি কোটি বস্তু দূর করতে হবে। শুধুমাত্র উপকূলবর্তী এলাকার নিরাপত্তার জন্যই এটা করা প্রয়োজন। গোটা উত্তর ও বাল্টিক সাগর তো আরও দূর অস্ত।”
যুদ্ধের পর ১০ লক্ষ টন বিস্ফোরক উত্তর ও বল্টিক সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে চরম বিষাক্ত রাসায়নিক অস্ত্রও ছিল। সেই বোঝা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন