সাকিব কেন আসামী!
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে আমিও পছন্দ করি না। তার অসংখ্য ত্রুটি আছে। বড় বড় ত্রুটি। এসব ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও মানুষ কিভাবে তার ভক্ত হয়?
আমি তাকে পছন্দ করি না কারণ সে ডানহাতে শোয়েব আখতারের মতো গতিতে বল করতে পারে না। সে বামহাতে মুস্তাফিজের মতো কাটার মারতে পারে না,সে ওয়ার্ণের মতো লেগ স্পিন করতে পারে না, এবিডির মতো ডানহাতে বিরাট সব ছক্কা মারতে পারে না এবং গিলক্রিস্টের মতো কিপিংও করতে পারে না!
এতসব ত্রুটি থাকার পরও তাকে কেমনে পছন্দ করি বলেন?
সাকিবের ব্যাটিং-এ কোন ডেডিকেশন নাই। ব্যাটিং নিয়ে সে কখনো ভাবে নি। টিমকে বিপদে ফেলে আউট হয়।
কিন্তু ওয়ানডেতে তার ব্যাটিং গড় (৩৫) গিলক্রিস্ট, যুবরাজ, গিবস, স্মিথদের খুব কাছাকাছি। আর হাফিজ, ম্যাককুলাম, জয়সুরিয়া, অশোকা ডি সিলভা, জয়ার্বধনে, শেওয়াগ, ফ্লেমিং, স্টিভ ওয়াহ, ইউনুস খানসহ আরো অনেক গ্রেট ব্যাটসম্যানের চেয়েও বেশি।
উল্লেখ্য এদের মধ্যে দুএকজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার ছাড়া বাকি সবাই খাটি ব্যাটসম্যান। খাঁটি ব্যাটসম্যানদের গড়ও সাকিবের চেয়ে কম!!
সাকিব মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। মিডল অর্ডারে করার থাকে খুব কমই। তারপরও ১৬৩ ম্যাচে ৬ টা সেঞ্চুরী আছে সাকিবের।
খুব কম মনে হচ্ছে তাই না?
আজহারউদ্দিদের ৩৩৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৭ টা সেঞ্চুরী, ইনজামামের ৩৭৮ ম্যাচে ১০ টা, জয়াবর্ধনের ৪৪৮ ম্যাচে ১৯ টা, ধোনীর ২৮১ ম্যাচে ৯ টা, দ্রাবিড়ের ৩৪৪ ম্যাচে ১২ টা, ফ্লেমিং ২৮০ ম্যাচে ৮ টা, ম্যাককালাম ২৬৬ ম্যাচে ৫ টা…
এখন হিসেব করুন তো সাকিবের কি খুব কম?
এখানেও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এরা সবাই খাঁটি এবং গ্রেট ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত এবং তাদের ব্যাটিং ডেডিকেশন নিয়ে কখনো কারো প্রশ্ন উঠেনি।
অনেক ক্রিকেট পন্ডিত বলেন বোলিং হচ্ছে সহজাত প্রতিভা। বোলিং এ তেমন কিছু না করলেও উইকেট পাওয়া যায়!
এরকম যারা বলেন তারা মিরপুরে নেটে গিয়ে বোলারদের ঘাম ঝরানোটা একটু দেখে আসবেন।
তার উপরেও কিছু গ্রেট বোলারের সাথে সাকিবের তুলনায় যাচ্ছি।
সাকিবের ইকোনমি (৪.২) বহু বাঘা বাঘা বোলারের চেয়ে অনোক কম। বোলিং গড় (২৭- প্রতি উইকেট প্রতি রান) স্টেইনের একদম কাছাকাছি। সাকিবের চেয়ে খারাপ বোলিং গড়ের কিছু নাম পড়ুন।
হরভাজন সিং, ক্যালিস, আফ্রিদি, কুম্বলে, জয়সুরিয়া, শ্রীনাথ, ভেট্টরি, মালিঙ্গা, জহির খান, এন্ডারসন এমনকি আমাদের বোলিং কোচ কোর্টনী ওয়ালশ।
কি নামগুলো খুব হালকা?
এদের বেশিরভাগই বিশেষজ্ঞ বোলার এবং গ্রেট হিসেবে পরিচিত। তাদের ডেডিকেশন নিয়েও প্রশ্ন উঠেনি।
সাকিবের বোলিং স্ট্রাইকরেট (৩৮.৭- প্রতি উইকেট প্রতি বল) ভাস, আফ্রিদি, কুম্বলে, জয়সুরিয়া, শ্রীনাথ, ভেট্টরী, ক্যালিস, হারভাজন, ওয়ালশ এবং আম্ব্রোসের চেয়ে বেশি।
স্ট্রাইক রেটে সাকিব ওয়ার্নের একদম কাছাকাছি।
এ পর্যন্ত পড়ে অনেকেই মুখ বাঁকিয়ে বলবে বুঝলাম বাবা সে ভালো প্লেয়ার। তাই বলে সে কেন উন্নতি করবে না?
ব্যাটিং এ কেন আরো মনোযোগ দেয় না? আপনার এই ভদ্র প্রশ্নের উত্তর আমি অভদ্রভাবে দেব। মাথা ঠিক আছে তো? ক্রিকেট বোঝেন তো??
উন্নতি তো ব্রাডম্যানও করতে পারত। ১০০ গড়কে বাড়িয়ে ১৫০ করতে পারত। কেন পারল না?
কারণ সবকিছুর একটা লিমিট আছে। টেস্ট আর ওডিআই এ সাকিবের ব্যাটিং গড় ৪০ এবং ৩৫। চাইলেই সেটা একটু বাড়ানো যায়। বাড়ালে সেটা কত হবে? ৫০ এবং ৪৫। এই তো?
এই কাজ করতে গেলে তাকে বোলিং বাদ দিতে হবে। সে একটা মানুষ, মেশিন না। ঘুম থেকে উঠেই ম্যাচে গিয়ে সে বোলিং ব্যাটিং করে না। তাকে নেট করতে হয়, ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ খেলতে হয়।
নেটে একটা আর্মার, একটা দুসরা বা একটা টপস্পিনের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বোলিং করতে হয়। টেস্টে প্রতি সাড়ে চার ইনিংসে একবার ৫ উইকেট ফাইজলামি না। অনেক সাধনার ব্যাপার।
বোলিং করতে গিয়ে ব্যাটিং এ চাপ পড়ে। ব্যাটিং মানে এই না গেলাম আর আরামসে ব্যাট করলাম। একটা রিভার্স সুইং বল কিভাবে ব্লক করতে হয় এটাও প্র্যাক্টিসের ব্যাপার। কাভার-পয়েন্টে ঠেলে সিঙ্গেল বের করাটাও শিখতে হয়। ম্যাচের কোন পরিস্থিতিতে কোন বল ছাড়তে হবে এটাও সাধণার জিনিস।
আবারও বলছি সে একজন মানুষ। একটা মানুষ দুই ক্ষেত্রেই সমান চাপ নিতে পারে না। তামিম কোন অংশেই সাকিবের চেয়ে খারাপ ব্যাটসম্যান না। খাঁটি ব্যাটসম্যান তারপরও তার গড় কেন সাকিবের চেয়ে বেশি না?
রাজ্জাক খাঁটি বোলার হয়েও কেন সাকিবের চেয়ে ভালো বল করতে পারেনি? আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান তামিমের চেয়ে ওয়ানডেতে সাকিবের সেঞ্চুরী মাত্র একটা কম। টেস্টে তিনটা ৯৬ আর একবার ৮৮ রানে ভুল আউট না হলে তারও ৭ টা সেঞ্চুরী থাকত।
একটা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আর কি করবে? ভাইরে চাপে সামলানো অনেক কঠিন ব্যাপার।
ক্যাপ্টেন্সীর বাড়তি চাপ সামলাতে না পেরে ব্যাটিং খারাপ করায় শচীন টেন্ডুলকারকে ক্যাপ্টেন্সী ছাড়তে হয়েছে। তার মতো করে হাশিম আমলাও অধিনায়কত্ব বাদ দিয়েছে।
টেস্টে কিপিং বাদ দিয়েছে সাঙ্গাকারা, ম্যাককুলাম। চাপ না নিতে পেরে ডিরেক্ট ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়েছে মার্কাস ট্রেসকোথিক এবং জনাথন ট্রটের মতো দুই বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান।
ব্যাটে বলে সমান পারফর্ম সাকিব ছাড়া এই মহাবিশ্বে আর কেউ করতে পারেনি। ক্যালিস, সোর্বাসের মতো চ্যাম্পিয়ন বোলাররা বোলিং কমিয়ে দিয়েছে ব্যাটিং এর জন্য। ভেট্টরী মিডল অর্ডারে আসেনি বোলিং এর জন্য। ফ্লিনটফ দুইটা চালাতে গিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে বেশিদূর যেতে পারে নি।
ইরফান পাঠানের মতো সুইং বোলার ব্যাটসম্যান হতে গিয়ে পাড়ার বোলার হয়েছে। ৯৯ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের নীল জনসন নামে একজন বোলিং ব্যাটিং দুইটাই ওপেন করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। খুব দ্রুত সেও হারিয়ে যায়।
বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা স্মিথ ব্যাটিং করতে গিয়ে বোলিং একেবারেই বাদ দিয়ে দিয়েছে। রুটও তেমন বোলিং করছে না। বিরাট কোহলিকে বোলিং করতে দিলে তিনিও দুটো এক সাথে সামাল দিতে পারবেন না। ব্যাট বলে সমান সমান হতে গিয়ে একজনও আজো ঠিকতে পারে নি।
ভাই, এই সহজ স্বাভাবিক সত্যটা কেন মানেন না?
যার যার ব্যাটিং স্টাইল আছে। কেউ প্রথমেই মেরে খেলে চাপ কমিয়ে নিতে চায়। সাকিবও তেমন। আর সাকিব এই আক্রমণ করার সাহস রাখেন, অধিকাংশ সময় এই আক্রমণ করে সাফল্য পান বলেই তিনি সাকিব। এই সহজ সত্যটা আমাদের সবাইকেই মানতে হবে।-
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন