প্রগেরিয়া এক ধরনের অস্বাভাবিক জীনগত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে অল্প বয়সেই মানুষ বুড়িয়ে যায়। অর্থাৎ শিশুকে দেখায় বুড়োদের মতো। প্রগেরিয়া গ্রীক শব্দ। অর্থ অকালে বুড়িয়ে যাওয়া। এই রোগের এখনো কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। খোলাসা করে বললে বলতে হয়, এর কোনো চিকিৎসা নেই।

প্রতি ৮০ লাখ জীবন্ত শিশুদের মধ্যে প্রগেরিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ১ শতাংশের মতো। বিভিন্ন তথ্যমতে পৃথিবীতে প্রগেরিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ২৫০ জনেরও কম। প্রগেরিয়া আক্রান্ত শিশুরা শৈশব দেখে না। দেখে না কৈশর। শিশু থেকেই তারা বুড়িয়ে যায়। তাদের চোখে মুখে শিশু কিংবা কিশোর বয়সের ছাপ থাকে না। থাকে বার্ধক্যের ছাপ। যা তাদের জীবনকে বিষিয়ে তোলে।

অন্য শিশুরা যখন কৈশোরে পদার্পণ করে তখন প্রগেরিয়া আক্রান্ত শিশুরা বার্ধক্যের কারণে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে। তবে প্রগেরিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের আয়ুস্কাল অল্প হলেও অনেকেই কিন্তু বিখ্যাত। তারা তাদের জীবন এই রোগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে দেয়নি। রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে খ্যাতি অর্জন করেছে, হয়েছে পরিচিত। তাদের নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে লিওন বোথার নাম। ১৯৮৫ সালের ৪ জুন জন্ম। বোথা দক্ষিণ আফ্রিকার ডিজে ও পেইন্টার ছিলেন। প্রোগেরিয়া আক্রান্ত বিখ্যাতদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। যখন তার বয়স ৪ বছর তখন তার পিতা-মাতা বুঝতে পারেন ছেলে প্রগেরিয়া আক্রান্ত। এরপরই শুরু হয় বোথার টিকে থাকার যুদ্ধ। নানা রকম চেষ্টা আর ইতিবাচক জীবনযাপন করা সত্ত্বেও ২০০৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বোথা। আর প্রগেরিয়া সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২০১১ সালের ৫ জুন মারা যান। মাত্র ২০ বছর বয়সে মারা গেলেও প্রগেরিয়া আক্রান্ত হয়েও সবচেয়ে বেশি বছর বেঁচে থাকাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।

প্রগেরিয়া আক্রান্ত ইংল্যান্ডের এক মেয়ে শিশু হেইলি ওকাইনস। সে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। তার জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত হয় একাধিক ডকুমেন্টারি। দারুণ অবদান রাখার জন্য জিতেছেন ‘চিলড্রেন অব কারেজ’ অ্যাওয়ার্ড। অন্যান্য শিশুদের মতো পপস্টার জাস্টিন বিবারকে পছন্দ করে সে। এ ছাড়া শপিং ও বন্ধুদের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদানও তার ভীষণ পছন্দের কাজ। ২০১০ সালে একটি ডকুমেন্টারিতে সে টানা পাঁচ বছর কাজ করেছে। ওই ডকুমেন্টারিতে কাজ করার মাধ্যমেই সে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়।

২০০৭ সালে জ্যাক পিকার্ডের বাবা-মা বুঝতে পারেন তাদের সন্তান প্রগেরিয়ায় আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গেই তারা এর চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু কোনো চিকিৎসাই খুব একটা ফলপ্রসু হয়নি। জ্যাকের দিনগুলো রাঙিয়ে তুলতে পরিবার থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখা হয়নি। জ্যাক মোটর সাইকেল চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে সময় কাটান। সে মোটর সাইকেল রেসে পাবলিক সার্ভিস অ্যানাউন্সমেন্ট এর কাজ করে। তার হাসি সকলের দিনটাকে আরো আলোকিত করে তোলে। ডকুমেন্টারিতে তার অভিনয় সকলের হৃদয় ছুঁয়েছে।

ডাকনাম বাড্ডি। কারণ, তার ছোটবোন জোয়িসায়া নামটি উচ্চারণ করতে পারে না। জোয়িসায়া বেসবল ভালোবাসে। বেসবলের প্রতি তার ভালোবাসা অনেক ক্রীড়াব্যক্তিত্বের নজর কেড়েছে। ২০১০ সালে বেসবলের একটি টুর্নামেন্টে তাকেও রাখা হয়েছিল। এটি ইএসপিএন সম্প্রচার করেছিল। জোয়িসায়া বেসবল মাঠে অনেকেকেই অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে তার প্রিয় খেলোয়াড় রায়ান হাওয়ার্ডকে। ২০১১ সালে এবিসি তাকে ‘সপ্তাহের সেরা ব্যক্তিত্ব’ নির্বাচন করে। প্রগেরিয়া আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কোনো কিছুতেই থেমে থাকেনি জোয়িসায়া। বলতে গেলে প্রগেরিয়ার যন্ত্রণা আড়াল করে এগিয়ে চলছে সে। এইচবিও-তে প্রচারিত একটি ডকুমেন্টারিতে অসাধারণ নৈপূণ্য প্রদর্শন করেছে জোয়িসায়া।

২০০৬ সালে কেইলির পরিবার অহিওতে প্রগেরিয়া রিসার্চ ফাউন্ডেশন চালু করে। কেইলির বিভিন্ন কাজকর্মে তারা বেশ সফলতা দেখিয়েছে। বিশেষ করে প্রগেরিয়ার সচেতনতার পক্ষে স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে। স্থানীয়দের কাছে কাইলি খুবই জনপ্রিয়। সে বিভিন্ন প্রোগ্রামে চিয়ারলিডার হিসেবে কাজ করে। সফটবল, কারাতে, জাজ ও ট্যাপ ড্যান্স তার খুব প্রিয়। ফেসবুকে তার একটি গ্রুপও রয়েছে। চোখে না দেখলে আপনার বিশ্বাসই হবে না যে কেইলি প্রগেরিয়ায় আক্রান্ত।