সিঙ্গাপুর নদীর আদলে আরেক ‘হাতিরঝিল’ বুড়িগঙ্গায়
বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা ও দৃষ্টিনন্দন করতে সিঙ্গাপুর নদীর আদলে সাজাতে মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর মাধ্যমে ঢাকার দ্বিতীয় হাতিরঝিল গড়ে তোলা হবে বুড়িগঙ্গার পাড়ে।
প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, জমি দখল করে বুড়িগঙ্গার দুই তীরে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। অন্যদিকে কল-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ও রাজধানীর সোয়া কোটি মানুষের বর্জ্য পড়ে নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি। ফলে নদীটি আজ মৃত্যুর পথে।
এ অবস্থা থেকে বুড়িগঙ্গাকে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে ‘ঢাকা ইনটিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়নের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ বছর।
প্রথম পর্যায়ে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু থেকে (বাবুবাজার-কেরানীগঞ্জ সেতু) থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বিউটি ফিকেশনের কাজ শুরু হবে। আগামী ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু হবে। বাকি অংশের কাজ আগামী বছরের শেষ দিকে হাজারীবাগ, সদরঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জের পাগলা পর্যন্ত এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
ডিএসসিসির উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ মিউনিফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) আর্থিক সহায়তায় নদীর মূল অবস্থান অটুট রেখে সিঙ্গাপুর নদীর আদলে করা হবে। নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। আর বুড়িগঙ্গার দুই তীরে হাতিরঝিলের আদলে স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
এক্ষেত্রে অবকাশ যাপনের জন্য নদীর তীরে থাকবে বিলাসবহুল রিসোর্ট, হাঁটার রাস্তা, পার্ক, বসার স্থান, নদীঘাট, পর্যটকদের জন্য প্রমোদতরী, ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ।
সবুজে সবুজে ভরে তোলা হবে নদীর পাড়। নদীর দুই পাড়ে থাকবে আধুনিক সাজসজ্জাসহ আলোকসজ্জা। দেশি-বিদেশি ফুল ও সাজবৃক্ষ দিয়ে সাজানো হবে পাড়। কিছু স্থান রাখা হবে খোলামেলা। নদীর দুই পাশে চলাচল করবে উন্নত বাস সার্ভিস।
এ ছাড়া বুড়িগঙ্গার দুই তীর ঘেঁষে থাকবে সিরামিকের তৈরি ওয়াকওয়ে। দর্শনার্থীদের বসার জন্য ছোট ছোট টেবিল। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে থাকবে প্রমোদতরী। সব বয়সের দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে বিনোদন পার্ক। থাকবে তিন তারকা মানের কয়েকটি রিসোর্টও। উন্নত দেশের নদী বন্দরের আদলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালকে ঢেলে সাজানো হবে।
এ ছাড়া বুড়িগঙ্গার পানির মান ঠিক রাখতে কয়েকটি পানি শোধনাগার (রিসাইকেল পন্ড) থাকবে। রাজধানীর ১৮টি সুয়ারেজ পাইপের পানি ফিল্টারিং করতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৮ থেকে ১০টি পরিশোধন প্ল্যান্ট বসানো হবে। পানির মান ঠিক রাখতে সিঙ্গাপুরের আদলে রাজধানীর সুয়ারেজ লাইনের পানি বুড়িগঙ্গায় পড়ার আগে তা আলাদা তিন থেকে চারটি পুকুরে রাখা হবে। প্রথম পুকুরে দূষিত পানি ফিল্টারিং হয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুকুর হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে যাবে।
এ ব্যাপারে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী এখন মৃতপ্রায়। বুড়িগঙ্গার প্রাণ আনতে সিঙ্গাপুর নদীর আদলে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গার পাড় হবে রাজধানীর দ্বিতীয় হাতিরঝিল।
ডিএসসিসি এক কর্মকর্তা বলেন, সিঙ্গাপুর নদীতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায়। সেই নদীর আদলে বুড়িগঙ্গাকে সাজাতে মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছেন। নকশা প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। শিগগিরই এ কাজ শুরু হবে।
তিনি আরো বলেন, ১৮০০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক আবাসিক প্রতিনিধি জন টেইলর বুড়িগঙ্গা নদীর রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, বর্ষাকালে যখন বুড়িগঙ্গা পানিতে ভরপুর থাকে, তখন দূর থেকে ঢাকাকে দেখায় ভেনিসের মতো। সে কথা মাথায় রেখে ঢেলে সাজানো হবে।
ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত, আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করতে একটি মাস্টার প্লান গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বিশ্ব ব্যাংক ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাকি টাকা ডিএসসিসির তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। নান্দনিক সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করা হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন
যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন