সিনেমাকেও হার মানানো এক কিশােরের গল্প
বাবা বাংলাদেশে, মা পাকিস্তানে। কিশোর ছেলে মাকে খুঁজতে খুঁজতে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যাওয়ার পথে আটকে গেলো ভারতে। কী হবে এখন ছেলেটার? সে কি সত্যিই ফিরে যেতে পারবে মায়ের বুকে? ঠিক যেনো একটা চলচ্চিত্রের কাহিনীর সারাংশ। কিন্তু, ঘটনাটি একেবারেই বাস্তব, ঘটেছে ১৫ বছরের রমজান মোহাম্মদের জীবনে। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের বেড়াজালে আটকে সে নিজের মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পাকিস্তানে যেতে পারছে না।
২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রমজানকে ভারতের ভুপাল রেল স্টেশনে একা একা ঘুরতে দেখে রেলওয়ে পুলিশ তাকে চাইল্ডলাইন নামের একটি সেবামূলক সংস্থার আশ্রয়কেন্দ্রে দিয়ে আসে। সেখানে কথাবার্তায় ধীরে ধীরে জানা যায়, রমজানের পরিবার বাংলাদেশী হলেও বহু আগে থেকেই তারা পাকিস্তানের অধিবাসী। রমজানের যখন বয়স ১০ বছর, তখন তার বাবা বাংলাদেশে আরেকটি বিয়ে করে তাকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। পাকিস্তানে রয়ে যান তার মা।
রমজানের অভিযোগ, নতুন মায়ের সংসারে এসে দিনের পর দিন শুধু অত্যাচার সইতে হয়েছে। বারবার তার মনে পড়তো পাকিস্তানে ফেলে আসা নিজের মায়ের কথা। তাই আর থাকতে না পেরে ২০১১ সালের কোনো একদিন রমজান করাচিতে মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লুকিয়ে সীমান্ত পার হয়ে চলে গেলো ভারতে। কিন্তু, সেখান থেকে কীভাবে কী করবে, করাচি কী করে যাবে, তার কিছুই জানে না সে।
রমজানের জীবনে আশার আলো হয়ে আসে হামজা বাসিত। ভুপালের কোহ-ই-ফিজার অধিবাসী ১৯ বছর বয়সী ছাত্র হামজা খবরের কাগজের মাধ্যমে রমজানের ঘটনাটি জানতে পেরে সিদ্ধান্ত নেয় তাকে সাহায্য করার। চাইল্ডলাইনের সহায়তায় রমজানের সঙ্গে দেখা করে সে। এরপর নিজ উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ব্যাপারে খোঁজখবর করতে থাকে, সাহায্য চাইতে থাকে। এভাবেই করাচির বিভিন্ন এনজিও, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টুডেন্ট গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ হয় হামজার।
অনেক কষ্টে অবশেষে হামজা রমজানের মাকে খুঁজে পেতে সফল হয়। ফোনে মা-ছেলের কথাও হয় বহুদিন পর। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও উদ্যোগ নেয় রমজানকে করাচি ফেরত পাঠানোর। কিন্তু, শত চেষ্টার পরও রমজানের পাকিস্তানি নাগরিক হওয়ার কোনো প্রমাণ যোগাড় করতে না পেরে এই চিন্তা বাদ দিতে বাধ্য হয় মন্ত্রণালয়।
এমন সময় একটি সাময়িক সমাধান প্রস্তাব করেন রমজানের মা। বলেন, রমজানকে আবার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হোক। তাকে সেখানে পাঠানো আপাততঃ পাকিস্তানে পাঠানোর চেয়ে সহজ হবে। রমজানের মা-ও সহজেই বাংলাদেশে গিয়ে ছেলের সঙ্গে দেখা করে আসতে পারবেন, চাইলে ছেলেকেও নিয়ে যেতে পারবেন।
তার পরামর্শ মেনেই রমজানকে কলকাতা পাঠানো হয় যেনো সে সেখান থেকে সহজে বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। কলকাতা ভিত্তিক এনজিও সংলাপ এ ব্যাপারে রমজানকে সবরকম সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান চাইল্ডলাইনের ভুপাল শাখার পরিচালক অর্চনা সহায়।
বৃহস্পতিবার কলকাতা পৌঁছায় কিশোর রমজান। ‘আমি আমার বাবার কাছে যেতে চাই না,’ জানিয়ে সে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছে: আমি বাংলাদেশে যাচ্ছি শুধু আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। আমি সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্য কোথাও অপেক্ষা করবো, আর তারপর পাকিস্তান চলে যাবো আমার মায়ের কাছে।
রমজানকে বাংলাদেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন সংলাপের তপতী ভৌমিক। পুরো ব্যবস্থা হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরে একটি শিশুকিশোর কেন্দ্রে রাখা হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন