সুখে থাকার জন্য খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
বাজেট, মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি-রপ্তানি, জনশক্তি রপ্তানি, ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা, রাজস্ব আয় সঞ্চয়পত্র, মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ, ব্যাংকের সুদের হার, ঋণ, ঝুঁকি, অভাবসহ অর্থনীতির আরো সব অনুষঙ্গ নিয়েই তার কাজ। বলছি ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কথা। তিনি ছিলেন ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’-এর নবম গভর্ণর; ড. ফখরুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব ত্যাগের পর তিনি ২০০৫ সালের ১ মে গভর্ণর হিসাবে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। অর্থনীতির কোনো বিষয় নয়। তিনি কথা বলেছেন অন্য প্রসঙ্গে।
আপনার দিন শুরু হয় কীভাবে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: আলাদা কোনো বিশেষত্ব নেই। সাধারণভাবেই আমার দিন শুরু হয়। ফ্রেশ হয়ে প্রথম যে কাজটা করি দৈনিক খবরের কাগজ নিয়ে বসে যাই। এরই মধ্যে চা নাস্তা খেয়ে দিনের কাজের পরিকল্পনা দেখে নেই।
আমি তো ভেবেছিলাম আপনার বসার রুমে অর্থনীতির তামাম বইপত্র দেখবো। কিন্তু ভালো লেগেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতবিতান দেখে…
[সকালের নরম আলোয় মৃদু হাসলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। আর বললেন]
সালেহউদ্দিন আহমেদ: অর্থনীতির বইও আছে সেগুলো আমার স্টাডি রুমে। রবীন্দ্রনাথের ভক্ত ছিলেন আমার বড় ভাই। তার কাছ থেকে আমিও রবীন্দ্রনাথে আক্রান্ত হয়েছি। বড় ভাই গ্রামোফনে রবীন্দ্রনাথের গান শুনতেন। তার কাছ থেকেই রবীন্দ্রানাথের গানের প্রেমে পড়েছিলাম। রবীন্দ্রনাথের ‘প্রাঙ্গনে মোর শিরিষ শাখায় ফাগুন মাসে কি উচ্ছ্বাসে ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানোর খেলা ক্ষান্ত কুজন’ গানটি আমার খুব প্রিয়।
এই যে দুটি প্রজাপতি আর ময়ূরের শোপিস, আপনার দেয়াল জুড়ে অ্যাবস্ট্রাক পেন্টিং এগুলোও কিন্তু আমাকে মুগ্ধ করেছে। কারণ আপনি একজন অর্থনীতিবিদ ভেবেছিলাম টাকা বা মুদ্রার ছবি থাকবে আপনার দেয়ালে আর ধাতব মুদ্রা সাজানো থাকবে টি টেবিলে…
[এর মাঝে গরম চায়ের কাপ চলে আসলো আমাদের সামনে। সকালের রোদের শরীরে হলদে রঙটা গাঢ় হয়ে পড়ছে। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কথা শুরু হয় আবার।]
সালেহউদ্দিন আহমেদ: এটা কিন্তু একদিনে হয়নি। আমি ছোটবেলা থেকেই এমন একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছি। তাই চাইলেও আমি সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে রোবটিক অর্থনীতিবিদ হতে পারবো না। আপনি জানলে অবাক হবেন যে আমি অর্থনীতির বইয়ের চেয়ে বিশ্ব সাহিত্যের বই বেশি পড়তাম।
শুনেছি আপনি এখনো প্রচুর সিনেমা দেখেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: হ্যাঁ, বিদেশি মুভির প্রতি আমার একটা ভালো লাগা আছে। সময় পেলেই আমি সিনেমা দেখি প্রতি রাতে। বিশেষ করে টিভিতেই মুভি দেখি। স্টার মুভিজে রেগুলার মুভি দেখা হয়।
টিভিতে মুভি ছাড়া আর কী দেখেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: খবর খুব একটা দেখা হয় না। মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে গেলে টকশো দেখি। অধিকাংশ সময় মুভিই দেখা হয়।
আপনার এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে স্বামী সংসারে আর ছেলে দেশের বাইরে পড়ালেখা করছে। আপনি আপনার নানান কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তো ভাবিকে সময় দেন কীভাবে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: চেষ্টা করি সময় বের করার। পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা দু’জন মিলে যাই। দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক সময় ঘুরে বেড়িয়েছি দাপ্তরিক কাজে। অনেকাংশ সময় শুধু ভ্রমণের উদ্দেশ্যে।
অর্থনীতিতে ‘অভাব’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তো অভাব দেখা দিলে নাকি ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়! এমন একটি প্রবাদ চালু আছে সমাজে। আপনার মতামত কী?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: সুকান্তের সেই কবিতার লাইন মনে আছে? ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়/ পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’ এটাও সেই একই কথা। আসল কথা হচ্ছে পেটে ভাত না থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। ভালো থাকে না। তবে সুখে থাকার জন্য খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। আমাদের সমস্যা হচ্ছে একটা অভাব পূরণের সঙ্গে সঙ্গে আরো নতুন চাহিদা তৈরি হয়ে যায়। ভোগের চাহিদা কমাতে হবে জীবনে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনি অ্যাকটিভ না কেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: ইন্টারনেট আমি ব্যবহার করি ভাইবারে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার কাজে আর মেইল আদান প্রদানের ক্ষেত্রে। এছাড়া ফেসবুক, টুইটার বা অন্য কোনো মাধ্যমে আমি থাকতে চাই না। কারণ এসব মাধ্যমে প্রচুর সময় নষ্ট করার মতো জিনিস আছে এবং লোকজন ভেল্যুলেস বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে ফেসবুকে। আমি ছাড়া আমার পরিবারের সবাই আছে ফেসবুকে।
শেষ প্রশ্ন, অঙ্ক কষে কী জীবন চালানো সম্ভব? অর্থনীতি কী বলে…
সালেহউদ্দিন আহমেদ: জীবনের জন্য অঙ্ক প্রয়োজন আছে। কিন্তু অঙ্ক কষে জীবন চালানো যায় না। কারণ প্রতি মুহূর্তেই মানুষের জীবন বদলে যায় কোনো না কোনো ঘটনায়। সাক্ষাৎকার প্রিয়.কম
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূস: নির্বিঘ্নে সব জায়গায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এবার দুর্গাপূজারবিস্তারিত পড়ুন
সোমবারের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার
এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করেনবিস্তারিত পড়ুন
১৪ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৬৪ কোটি ডলার
এ মাসের প্রথম ১৪ দিনে এসেছে ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখবিস্তারিত পড়ুন