সে বাধ্য করে, কিন্তু আমার প্রথম শারীরিক সম্পর্কে রক্তপাত হয়নি আপু…
আমার বয়স ২২ বছর। আমি অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছি। আমি যখন ক্লাস নাইনে তখন একটা অপরিচিত নম্বর থেকে আমার মোবাইল এ কল আসতো। আমি প্রথমে অনেক ভয় পাই। কথা বলতে চাইনি। তারপর ছেলেটা অনেক বাহানা করে, বলে দেখ আমি শুধু বন্ধু হতে চাই। জীবনেও তোমাকে প্রেম করতে বলবো না। কসম রইলো। তারপর বন্ধুত্ব শুরু হলো। দিনে রাতে অনেক কথা হতো মোবাইলে। শুধু ঝগড়া করতাম আমরা। আর ও আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। কথা না বলে থাকতে পারতাম না।
একদিন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে তাকে আসতে বলি। সে দেখা করতে চায়। ও দূর থেকে দেখে চলে গেল। তারপর তো তার পাগলামি শুরু। আমাকে বলে আমি যেখানে যাই তাকে আমার মুখটা দিয়ে দিবো। নানা ভাবে প্রপোজ করার ট্রাই করে। আমি বলি তোর কসম মনে নাই। সে মানতেই চায় না। আর আপু সে অনেক পাগল টাইপ। সে বলে আমাকেই চায়। আর কি জানি হয়তো আমি ও তার মায়ায় পড়েছিলাম। আমি হ্যাঁ বলি। ও তো অনেক খুশী। দিন রাত আমাদের কথা হয়। আমাদের বাড়ি কাছাকাছিই ছিলো। ১ ঘন্টার রাস্তা। তারপর আমাদের দেখা হয় ১বছর পর। তখন আমি নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছি মাত্র।
ভালই চলছিল আমাদের। অনেক কেয়ারিং ছেলে ও। অনেক টেনশনে ছিল ও একদিন। আমি বললাম কি হয়েছে। বললো যে তার টাকার সমস্যা। আমি তাকে ১৫০০০ টাকা দিলাম। সে নিতে চায় নি। তারপর থেকে আজ অব্দি সে টাকা নেয়। আমি চাইলে সে অবশ্য দেয়। আমি চাইনা। আর আমি নিজ থেকেই দেই, সে জোর করে না। আমার অনেক মায়া লাগে তার জন্য তাই দেই। প্রথম দেখার পরে সে আরও দেখা করতে চায়। আমিও দেখা করি।
এই রিলেশনশিপ-এর কথা আমার ভাইয়া কীভাবে জেনে যায়। ভাইয়া আম্মুকে সব বলে দেয়। অনেক বকাঝকা শুনি। আম্মুর পায়ে ধরে বলি আব্বু কে না বলতে। আমি এই রিলেশনশিপ রাখবো না। তারপর আম্মু মোবাইল দিয়ে দেয়। বেহায়া আমি আবার কথা বলা শুরু করি কারণ তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তারপর সেই আগের মতো কথা হয়। আরেকদিন দেখা করি। সে এখন অনেকটা চাপ দেয় শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য। সে অনেক পাগল টাইপ আগেই বলছি, হাত কাটে, নিজেকে অনেক কষ্ট দেয়। আমি না চাইতেও রাজি হই। সে বাধ্য করে। কিন্তু আমার প্রথম শারীরিক সম্পর্কে রক্তপাত হয়নি আপু। কিন্তু এর আগে আমি আর কোনদিন এসব করিনি। এমন কেন হলো?
সে এই ব্যাপারে কিছু বলেনি। সে বলে আমি তোমাকে চাই। তুমি যেভাবে থাকো সেভাবেই। আজ অব্ধি শারীরিক সম্পর্ক আছে আমাদের। সে বুঝতেই চায় না এসব পাপ। বলে তুমি আমার বউ। কিন্তু আমার পরিবার তাকে মানবে না। আমরা সমবয়সী। নাইনে থাকার সময় বন্ধু হওয়ার পর সে পড়া বন্ধ করে। আর আমাদের চেয়ে তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। তার এক ভাই প্রবাসী। সেও যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার ভাইয়া বলছে এই ছেলের সাথে কোনদিনও তোমার বিয়ে দিবো না। তুমি তাকে চাইলে পরিবার ভুলে যাও। কিন্তু সে পাগলের মতো চায় আমাকে। আমার বিয়ে হয়ে গেলেও, তার যখন সামর্থ হবে আমি তার কাছে চলে আসবো। সে বিয়ে করবেনা আমি ছাড়া।
এগুলো অভিনয় না সত্য কিছুই বুঝি না। আমি ফেইসবুকে বা ভার্সিটি তে কোন ছেলের সাথে কথা বললে রাগ করে সে। সে কোন মেয়ের সাথে কথাও বলে না। অন্য কোন মেয়েকে ভালোও লাগে না তার। আবার আমার সামনে বসে হাত কেটে আমার নাম লিখে বলে- দেখ, তোমার লাগি সব পারি। এ রকম ভালোবাসা কি সত্যি আছে আপু। আমি কী করবো একটু বলবেন?
জানি জীবন নিয়ে অনেক নোংরামি করে ফেলছি আপু। আমাদের রিলেশনশিপ এর ৬ বছর হয়ে গেছে। তার জন্য অনেক মায়া। আর আব্বু আম্মুকেও অনেক ভালবাসি। আমার মা জীবনেও তাকে মানবে না আপু। সে কি সত্যি তার জীবন নষ্ট করবে আমাকে না পেলে? আর পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দিবে ভাল পাত্র পেলেই। এখন আমার কি করা উচিত হবে প্লিজ আপু বলুন।
প্রশ্নটি দেশের একটি গনমাধ্যমকে ফেসবুক পেজে করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তরুণী।
পরামর্শ-
দেখো আপু, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। যে জিনিস অতিরিক্ত তীব্র, সেটার ফলাফল কখনো সুফল বয়ে আনবে না। জীবনটা সিনেমা নয়, কেউ কাউকে বৌ ডাকলেই তাঁর বৌ হয়ে যায় না, হাত কাটতে পাড়া মানেই ভালোবাসার প্রমাণ নয়। আর মেয়ে শোন, সে টাকা চায় না কিন্তু তুমি দিলে নেয়। এটা কোন আত্ম সম্মান বোধ সম্পন্ন পুরুষের আচরণ নয়। সে যদি সত্যিই পুরুষের মত পুরুষ হতো, তাহলে তোমার দেয়া টাকা দিয়ে সে লেখাপড়া শিখত বা এমন কিছু করতো যেটা দিয়ে তাঁর একটা ভালো কর্মসংস্থান হয়। ছেলেটি তো সবই জানে তোমার পরিবার তাঁকে মানবে না। তাহলে সে কেন এমন কিছু করছে না, যাতে পরিবার মেনে নেয় বা তোমার যোগ্য হতে পারে সে?
আমার ইকুয়েশন খুবই স্বাভাবিক। ছেলেটি ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক করেছে এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছে, ব্যাপারটা তুমি পাপ বলার পরও। আবার তোমার কাছ থেকে সে টাকাও নিচ্ছে। অন্যদিকে তোমাকে স্ত্রী করে পাওয়ার জন্য তাঁর কোন উদ্যোগ নেই। এর অর্থ এটাই, সে তোমাকে ব্যবহার করছে! আজ তোমার বিয়ে অন্য কোথাও হয়ে যাক, দুদিন পর তাঁর জীবনে অন্য মেয়ে আসবে। বা তোমার বিয়ের পরও সে তোমাকে বাধ্য করবে এই যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বা তোমার স্বামীর টাকা এনে তোমাকে দিতে। এখন তুমিই বল, সেটা কি কোন ভালো লোকের কাজ? ওইসব সিনেম্যাটিক ভালোবাসার বাক্য কেবলই তোমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাক মেইল করার জন্য। কারো সাথে প্রেম করা বা তাঁকে ভালোবাসা, দুটি ব্যাপার কিন্তু একেবারেই আলাদা!
তুমি যা করবে আপু, বিয়ের পর স্বামীকে ছেড়ে প্রেমিকের কাছে চলে যাবে এই জাতীয় চিন্তা ভাবনা একেবারেই ছেড়ে দাও। এই জাতীয় চিন্তা যতদিন মাথায় থাকবে, ততদিন ভুলেও বিয়ে করবে না। তাহলে নিজের সাথে সাথে হবু স্বামীর জীবনটাও নষ্ট হবে। তুমি অবিলম্বে ছেলেটির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা ও তাঁকে টাকা দেয়া বন্ধ করবে। তাঁর সাথে দেখা করাও। কারণ দেখা করলে সে তোমাকে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করবে হাত পা কেটে। সে যতই এইসব বাজে কাজ করে দেখা করার কথা বলুক না কেন, নিজের ভালো চাইলে কোনক্রমেই যাবে না। বলবে যে তুমি বাসায় ধরা পড়ে গেছ। তাড়া তোমাকে বের হতে দিচ্ছে না। সে যদি আসলেই তোমাকে ভালোবেসে থাকে, তাহলে যেন নিজের পায়ে দাঁড়ায় ও তোমার যোগ্য হয়ে পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব এনে। তবে কাজটি জলদি করতে হবে, কারণ পরিবার তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আর বিয়ের পর তুমি আর ওর সাথে সম্পর্ক রাখবে না কিছুতেই।
ছেলেটি যদি আসলেই তোমাকে ভালোবেসে থাকত, সে অনেক আগেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতো। তখনও সে করেনি, একন সে করবে না। বরং সে তোমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমার সাথে যোগাযোগ রাখবে, শারীরিক সম্পর্ক করবে আর তোমার স্বামীর টাকা তাঁকে এনে দিতে বলবে। তাই আপু, সে যদি তোমার পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব না পাঠায়, তোমার উচিত অবে তাঁকে ভুলে যাওয়া। তবে না, এখনো বিয়ে করো না। যতদিন অতীত ভুলে মনকে শক্ত করতে না পারবে, বিয়ে করে সুক্ষই হতে পারবে না। তাই লেখাপড়া শেষ করো মন দিয়ে। সময়ে সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন