স্বল্প জীবনের সাধনায় কালজয়ী

আসল নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক নাম ছিলো মানিক। প্রথম গল্প ছাপতে দেন ডাকনামেই, সেই থেকে আসল নাম চাপা পড়ে যায়। হয়ে গেলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এ নামেই জগৎ চিনল তাকে। তার সৃষ্টিই তাকে চিনিয়েছে আমাদের। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কথাসাহিত্যিক।
১৯০৮ সালের ২৯ মে পিতার কর্মস্থল বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকা শহরে জন্ম তার। তার পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুর। নিকট মালবদিয়া গ্রামে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের বিপর্যয়ের সময়ে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে নতুন বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দোপাধ্যায় ছিলেন তাদের একজন।
১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর, মাত্র ৪৮ বছর বয়সে শক্তিশালী এই কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে। জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করেন ৪২টি উপন্যাস ও দুই শতাধিক ছোটগল্প। তার রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসীমামী, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্পসংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। বাংলা ছাড়াও তার রচনাসমূহ বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
তার লেখার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন তিনি। তার লেখাতেই প্রথম সম-সাময়িক কালের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের ট্রাজেডি ফুটে উঠে। নিম্নবিত্ত ও সর্বহারা মানুষের ক্ষয়ক্ষতি, মনুষ্যত্বের অপচয়, ক্লেদ-হতাশা ও দু:খ বেদনায় তার সততা, নিষ্ঠা ও আদর্শ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক স্বতন্ত্রধারায় চিরভাস্বর।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা ছিলেন ঢাকার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাব-রেজিস্ট্রার। বাবার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন অতিবাহিত হয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার নানা স্থানে। তার মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এই গ্রামটির পটভূমি তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’।
বাবা-মায়ের ১৪ সন্তানের মধ্যে মানিক ছিলেন অষ্টম। বিএসসি পরীক্ষায় দুবার অকৃতিকার্য হওয়ার পর কলেজের পড়া অসমাপ্ত রেখে সাহিত্যে প্রবেশ। অথচ ম্যাট্রিক এবং আইএসসি-তে ভাল ফল করেছিলেন, অঙ্কে অনার্স নিয়ে ভরতি হয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কথিত আছে, তিনি যখন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে অনার্সের ছাত্র ছিলেন সেময় ক্যান্টিনে একদিন আড্ডায় এক বন্ধুর সঙ্গে মানিক বাজি ধরেন তিনি তার লেখা গল্প বিচিত্রায় ছাপাবেন। ওই সময় কলকাতায় বিচিত্রা পত্রিকা ছিল অত্যন্ত বিখ্যাত এবং কেবল নামকরা লেখকেরাই তাতে লিখতেন। তার প্রথম গল্প ‘অতসী মামী’ বিচিত্রায় ছাপা হয়। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই গল্পটি পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামটি পরিচিত হয়ে ওঠে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে। এরপর থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা পাঠাতে থাকেন মানিক।
সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশের করায় একাডেমিক পড়ালেখায় মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মন ওঠে যায়। অনার্স পরীক্ষা না দিয়েই ইতি টানেন শিক্ষাজীবনের। সাহিত্য রচনাকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন। এরপর কিছুদিন ‘নবারুণ’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে এবং পরবর্তী সময়ে ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকার সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি একটি প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মানিক কয়েক মাস একটি সরকারি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
শেষে চাকরি ছেড়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান। তখন থেকে সাহিত্যই তার জীবন ও জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। ১৯৪৬-এ দাঙ্গা-বিরোধী ভূমিকা এবং ১৯৫৩-য় প্রগতি লেখক ও শিল্পী সম্মেলনে সভাপতিত্ব। মার্কসের শ্রেনিসংগ্রাম তত্ত্ব এবং ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বের শিল্পিত প্রয়োগে তার উপন্যাস ও ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যে অনন্য মর্যাদা পেয়েছে। সাহিত্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সমাজচেতনা প্রকাশের অত্যাধিক আগ্রহে শিল্পবোধ বিসর্জন দিয়েছিলেন এ রকম একটা ধারণা কোনো কোনো মহলে চালু আছে।
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে কমলা দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু সাহিত্য রচনায়ই নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলে ঐক্য ও মৈত্রী স্থাপনের প্রয়াসে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন

আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন

সিলেটের জঙ্গি নেতা আব্দুল বারি ও শামসু জামিনে মুক্ত
নিজস্ব সংবাদদাতা: শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিবাদী সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এরবিস্তারিত পড়ুন