হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের “অত্যাচার”
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে বের হচ্ছিলেন গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে আসা মনোয়ারা বেগম। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়ামাত্র তার ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশনটি) বলতে গেলে ছিনিয়ে নিলেন ওষুধ কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধি।
কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না মনোয়ারা বেগম। লোকটি তার প্রেসক্রিপশনটির ছবি তুলে মনোয়ারাকে ফেরৎ দিয়ে দিলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। এভাবে কারও অনুমতি ছাড়া ব্যবস্থাপত্রের মতো ব্যক্তিগত কাগজ নেয়া আবার ছবি তোলা কি উচিত?- জানতে চাইলে হেসেই উড়িয়ে দিলেন লোকটি। কেবল মনোয়ারা নন, বা কেবল ঢাকা মেডিকেলের রোগীরা নন, রাজধানী সহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালের অবস্থা এই রকম।
প্রকাশ্যে বলতে চান না, এমন রোগ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান অনেক রোগী। তাদের অনুমতি না নিয়েই এভাবে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় মূলত চিকিৎসক কী ওষুধ দিয়েছে তা দেখতে।
ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, চিকিৎসকেরা যেন তাদের কোম্পানির ওষুধ রোগীদেরকে দেন সে জন্য অনৈতিক নানা সুযোগ সুবিধা দেন। নানা উপহারের পাশাপাশি ইদানিং নগদ টাকা দেয়ার চলও শুরু হয়েছে। আর রোগীদেরকে চিকিৎসকরা সত্যি সত্যিই ওষুধ দেয় কি না, তা নিশ্চিত করতেই ব্যবস্থাপত্র পরীক্ষা করেন তারা।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা করাতে এসে এই অভিজ্ঞতার পর যার পর নাই বিরক্ত মনোয়ারা হোসেন। তিনি বলেন, ‘এদের জন্য ঠিকমত চিকিৎসা নেওয়া যায় না। ডাক্তারদের রুমেও তারা বেশ বিরক্ত করেছে’।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে প্রতিদিন দেখা যায় শতাধিক বিক্রয় প্রতিনিধির মটরসাইকেল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘ডাক্তারদেরকে যদি নতুন ওষুধের কথা না জানাই, তাহলে রোগীদেরকে তারা কীভাবে সেগুলো দেবেন’।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক প্রশাসন খাজা আবদুল গফুর বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা থেকে দুইটা পর্যন্ত তাদেরকে হাসপাতালে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। এর বাইরে কেউ প্রবেশ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়’।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন আজিম হোসেনের। সিটিস্ক্যান রিপোর্ট দেখে তাকে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছিলেন চিকিৎসক। এ সময় কক্ষে ঢুকে পড়েন তিনজন বিক্রয় প্রতিনিধি। তারা নিজেদের কোম্পানির প্যাড ও ওষুধের নমুনা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে যান। চিকিৎসকও রোগীর বদলে ব্যস্ত হয়ে যান ওই বিক্রয় প্রতিনিধিদেরকে নিয়েই।
বিক্রয় প্রতিনিধিদের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া থাকলেও প্রতি কার্যদিবসেই সকাল নয়টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসকদের কক্ষে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন তারা। চিকিৎসকদের পাশাপাশি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও নানা উপহার থাকে তাদের কাছে। এ জন্য কেউ ঘাটায় না তাদেরকে।
এই হাসপাতালেও এক বিক্রয় প্রতিনিধিকে এক রোগী অনুমতি ছাড়াই ব্যবস্থাপত্র হাত থেকে টেনে নিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেলো। ওই রোগী বিরক্তি প্রকাশ করলে বিক্রয় প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ভাই, আমাদের পেশা এটি, বিরক্ত হবেন না।
হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এরা বেশ প্রভাবশালীও। এদের কেউ কিছু বলে কিছু করতে পারে না। উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়’।
এ ব্যাপারে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনিস্টিটিউটের পরিচালক রাশিদুল হাসান বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদেরকে হাসপাতালে ঢোকার ব্যাপারে বিধি নিষেধ আছে। এরপরে কেউ কেউ ঢুকে যায়। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি তাদের হাসপাতাল চলাকালেন তাদের দৌরাত্ম বন্ধ করার জন্য’। ঢাকাটাইমস
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
১ লাখ ৪০ হাজার ছাড়াল স্বর্ণের ভরি
দেশের বাজারে ফের স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্সবিস্তারিত পড়ুন
জাতিসংঘ: বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে চরমবিস্তারিত পড়ুন
টাঙ্গাইলে বাসার সামনে থেকে পুলিশ সুপারের মোবাইল ফোন ছিনতাই
টাঙ্গাইলে বাসার সামনে থেকে ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপারবিস্তারিত পড়ুন