হিন্দু থেকে ইসলাম গ্রহণ করলেন জাতীয় দলের সেই ক্রিকেটার
১০ই নভেম্বর ২০০০ সাল। গোটা বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে অভিষেক টেস্ট খেলতে মাঠে নামেন ১১ জন ক্রিকেটার। ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সেঞ্চুরি, অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়ের ৬ উইকেটসহ দলের পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। সেই একাদশের সবাই মাঠের খেলা ছাড়লেও কোনো না কোনভাবে আছেন ক্রিকেটের সঙ্গেই। কেউ কোচ, কেউবা ক্রিকেট বোর্ড পরিচালক আবার কেউবা আইসিসি কর্মকর্তা। কিন্তু গর্বের ওই অভিষেক ম্যাচের পর ক্রিকেট থেকে হারিয়ে গেছেন একজন। অভিমান আর ক্ষোভে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন অন্য জগতে।
বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে অভিষেক হয় ১৮ বছর বয়সী পেসার বিকাশ রঞ্জন দাসের। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এখন তার নাম মাহমুদুল হাসান রানা। অভিষেকে ৬৪ রানে একটি উইকেটও নিয়েছিলেন তিনি। সেই শেষ, ইনজুরি তাকে আর মাঠে নামতে দেয়নি। তার ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে কথা বলেছেন সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ও আপনার টেস্ট অভিষেকের দিনটা কিভাবে মনে করেন?
মাহমুদুল হাসান: আমার জন্য দারুণ একটি দিন ছিল। প্রথম টেস্ট তাও ভারতের বিপক্ষে। মাঠে নামার পর বুলবুল ভাইয়ের সেঞ্চুরি, দুর্জয় ভাইয়ের অধিনায়কত্ব ও বোলিং সব কিছুই ছিল দারুণ। আমি ছিলাম দলের সবচেয়ে ছোট তাই ছিল দারুণ সব স্বপ্ন। ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন অনেক ভালো অবস্থানে। যেখানে আমরা বছরে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ কল্পনা করতে পারতাম না সেখানে আমরা সারা বছরই খেলি।
তবে যে শুরুটা আকরাম ভাই, সুজন ভাইরা করে দিয়ে গেছেন তা সবাইকে আলাদাভাবেই মনে রাখতে হবে। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই দিনটি এলে আমাদের ডাকে। আমরা বোর্ডে যাই সবার সঙ্গে দেখা হয় এটি অনেক বড় আনন্দের। সত্যি কথা বলতে কি ক্রিকেট ছাড়লেও এদিনটি আমার জন্য অনেক গর্বের ও সুখের।
প্রশ্ন: ১৮ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক, এরপর কোনো ম্যাচই খেলতে পারলেন না?
মাহমুদুল হাসান: হ্যাঁ, আমার ছোট বয়সে বড় প্রাপ্তি ছিল এটা। কিন্তু এরপরই ইনজুরিতে পড়ি। সেই সময় ইনজুরির ভালো চিকিৎসা ছিল না বাংলাদেশে। আর বোর্ড এখন একজন ক্রিকেটারকে ইনজুরি থেকে মুক্ত করতে যেভাবে সহযোগিতা করে তখন তেমন ছিল না। আমি নিজের খরচে চিকিৎসা করতে পারিনি। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না।
প্রশ্ন: আপনি কি সেই সময় বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন?
মাহমুদুল হাসান: আমি অনেকবার আবেদন করেছি। অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়াও বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের কাছেও অনেকবার বলেছি যে আমি ক্রিকেটে ফিরতে চাই। কিন্তু কেউ আমার কথা কানেই নেয়নি। তখন অনেক কষ্ট পাই, মনের মধ্যে ভীষণ ক্ষোভও জমা হয়েছিল। মনে একটাই চিন্তা ছিল যদি ক্রিকেট খেলতে না পারি কি করবো?
প্রশ্ন: অভিমান আর ক্ষোভ থেকেই ক্রিকেট ছাড়লেন?
মাহমুদুল হাসান: আমরা যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন খেলা থেকে বড় আয়ের কথা ভাবাই যেত না। যখন আমি আর খেলতে পারছিলাম না, চিন্তা করলাম পড়া লেখাতে মন দিবো। পরিবারের দাবিও ছিল তেমন। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলাম। আমি এখন ইস্টার্ন ব্যাংকে (ইবিএল) এভিপি পদে আছি। কিন্তু বিশ্বাস করেন ক্রিকেটকে কোনোদিনও মন থেকে মুছে ফেলতে পারবো না। সেই দিনগুলোর কথা ভেবে কিছুটা কষ্টতো এখনও পাই।
প্রশ্ন: অভিষেক ম্যাচের কোন স্মৃতিটা এখনো আপনাকে আপ্লুত করে?
মাহমুদুল হাসান: আমি ভারতের ৫৮ রান করা ওপেনার সদাগোপন রমেশকে বোল্ড করেছিলাম। স্টাম্পের বেল ভেঙে গিয়েছিল আমার বলের আঘাতে। তখন আম্পায়ার এসে বেলটি দিয়ে বলেছিল এটি তোমার জন্য অনেক বড় স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমি এখন বিষয়টা মনে করে আনন্দিত হই।
প্রশ্ন: বিকাশ রঞ্জন থেকে মাহমুদুল হাসান হওয়ার গল্পটা কি বলা যাবে?
মাহমুদুল হাসান: অবশ্যই, কেন যাবে না, আমার ছোটবেলা থেকেই কাউকে নামাজ পড়তে দেখলে খুব ভালো লাগতো। আমি অনেক দিন শুক্রবারে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েছি। এরপর যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলাম তখন আমি নামাজের প্রতি আরো আসক্ত হলাম। অনেক বন্ধুকে বলতাম আমাকে যেন নামাজ পড়া শেখায়। সবাই হাসতো। আমি কিন্তু খুব সিরিয়াস ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে আমি বুয়েটের মসজিদে গিয়েও ফজরের নামাজ পড়েছি। এরপর মনে হলো আমিতো কোনো পাপ করছি না। তাই ২০০৪ সালে কাগজে-কলমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। স্ত্রী নিশাত জাহান ছেলে মোহাম্মদ আয়ান বিন হাসান ও মেয়ে আয়াত বিনতে হাসানকে নিয়ে ভালো আছি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন