রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

১৬ বছর বয়সেই বুঝলাম আমি ‘খারাপ মেয়ে’ হয়ে গিয়েছি, এর পিছনে একটাই কারণ ছিল…

অপহরণের পর ক’দিন কেটেছে জানি না। কারণ, তারিখ বা দিন কিছুই জানতে পারছি না। আতঙ্ক আর অজানা জীবনের অশনিসংকেত শরীরটাকে চেপে ধরেছে। জানি না আর বাড়ি ফিরতে পারব কি না। দিল্লি আসার দ্বিতীয় রাতে ধর্ষিত হলাম আমি। বুঝলাম আমি ‘খারাপ মেয়ে’ হয়ে গিয়েছি।

(পূর্বকাহিনি- ডায়মন্ড হারবার থেকে অপরহরণের পর মগরাহাটের সাহসিনীকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। অপহরণকারীর নাম-পরিচয় কিছুই জানে না সে। রাতের অন্ধকারে দিল্লি স্টেশনের বাইরে থেকে অটো নেয় অপহরণকারী। এ’গলি-সে’গলি দিয়ে একটা সরু গলিতে ঢোকে অপহরণকারী। সে গলির ভিতরে একটা দরজায় শিকল ধরে ঝাঁকাল। দরজা খুলতেই অপহরণকারী বলে উঠল, ‘‘আরে আসলাম! ক্যায়সা হে তু, দেখ নয়া মাল…’’ তার পর…)

একটা সরু ফুল প্যান্ট পরেছিল আসলাম। মুখ ভর্তি দাড়ি। রোগা-কালো-খয়াটে চেহারা। পরনে নোংরা একটা সোয়েটার। ঘরের ভিতরে আলো পর্যাপ্ত নয়। আসলাম আমাকে তার বসে যাওয়া চোখ দিয়ে অনেকক্ষণ দেখল। আমার অস্বস্তি হচ্ছিল। মাথা নিচু করে নিলাম। আসলাম ছেলেটাকে বলল— ‘‘বহুত তন্দরুস্ত মাল লায়া হ্যায়। কাঁহা সে মিলা?’’ আমাকে অপহরণ করা ছেলেটা বলল, ‘‘সব বাতায়েঙ্গে, লেকিন পাহলে অন্দর তো আনে দে।’’
আসলাম ভিতরে সরে গেল। ছেলেটা ঘরে ঢুকেই বলল, ‘অ্যাই, ভিতরে আয়। বাইরে দাঁড়িয়ে কী করছিস?’’ আমি ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকলাম। ঘরটা অনেকটাই বড়। দেওয়াল জুড়ে বিভিন্ন নায়িকার ছবি লাগানো। ঘরের এককোণায় হাঁড়ি-কড়াই-ছোট স্টোভ ডাঁই করা। ঘরের এককোণায় একটা চৌকি পাতা। তার উপর বিছানা স্তূপ করে রাখা। দিল্লিতে বেশ ঠান্ডা। আমার শীত করছিল।

আসলাম একটা চাদর আমাকে গায়ে জড়াতে দিল। ওরা দু’জন বসল চৌকিতে। আমি মেঝের উপর বসতেই ঠান্ডায় ছ্যাঁকা খাওয়ার জোগাড় হল। আসলাম হেসে বলল, ‘‘আরে তু, পাহিয়া লেকে বৈঠ।’’ আমি খুঁজে পেলাম না ‘পাহিয়া’ নামে জিনসটা কোথায়। কারণ আমি জানতামই না ‘পাহিয়া’ কাকে বলে। কিছুক্ষণ পরে আসলাম নিজেই এসে ঘরের অন্য কোণ থেকে ‘পাহিয়া’ বের করে দিল। দেখলাম আসলাম একটা ছোট্ট টুল আমাকে দিয়েছে। বুঝলাম সেটাই ‘পাহিয়া’।

চাদরে গুটিসুটি মেরে কোণও মতে বসলাম। আসলাম হাসতে হাসতে চৌকিতে গিয়ে বসে পড়ল। ওই ছেলেটাও হাসছে। বারবার চেষ্টা করছিলাম আসলাম ওই ছেলেটাকে কী নামে ডাকে, তা শোনার জন্য। কিন্তু, আসলাম আমার সামনে নামটাই উচ্চারণ করছিল না। আসলাম হিন্দিতেই ছেলেটার সঙ্গে কথা বলছিল। আমি কিছু কিছু কথা বুঝতে পারছিলাম, পুরো হিন্দিটা বুঝতে পারছিলাম না। আমার বিদ্যে-বুদ্ধি দিয়ে মনে মনে বাংলা তর্জমা করে বুঝলাম, তাতে এটা পরিষ্কার হল, আসলাম আমাকে দেখে খুশি নয়।

‘মাল’ বলে একটা শব্দ বলে আসলাম ওই ছেলেটাকে বলল, রাস্তায় আনতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু, তুই পেলি কোথায়। ছেলেটা বলল, সব বলব রাতে। এখন একটু খেত দে। আমাকে দেখিয়ে ছেলেটা আসলামকে বলল ওরও খিদে পেয়েছে। আসলাম বেরিয়ে গেল বাইরে।

আমি আর ওই ছেলেটা ছাড়া ঘরে কেউ নেই। আমি ভয়ে ঘামছি। এর পরে আমার ভাগ্যে কী আছে, কে জানে? ছেলেটা বলল,— ‘‘কী রে, ঘর পছন্দ হয়েছে? এখন থেকে এখানেই থাকতে হবে তোকে। পালানোর চেষ্টা করবি না। তোরই বিপদ হবে। রানির মতো থাকবি। আমি মাঝে-সাঝে আসব, তোর কাছে যাব।’’

আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ছেলেটা একটা সিগারেট হাতে করে ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেল। আমি ঠায় বসে থাকলাম। কিছুক্ষণ পরে ঘরে ঢুকল আসলাম। হাতে বড় প্যাকেটে রুটি আর তরকারি। মাংসের গন্ধও আসছিল। গরম খাবারের গন্ধ পেয়ে পেটের ভিতরটা আনচান করছিল। প্রচণ্ড খিদে পাচ্ছিল। মুখের লালাগুলো গেমন যেন গোল পাকিয়ে যাচ্ছিল। নিজের মনেই বললাম, ‘‘কত দিন আমি খাইনি?’’ আসলাম বলল— ‘‘অ্যাই লেড়কি, হাত-পা ধুয়ে আয়, খেতে হবে।’’ আমি বসেই থাকলাম। কিছুক্ষণ পরে সেই ছেলেটা ঘরে ঢুকে বলল, ‘‘যা হাত-পা ধুয়ে নে।’’ ছেলেটাই বলল, ‘‘আমি বাথরুমে যাচ্ছি। আমার পিছনে আয়।’’ ওর পিছন পিছন বাথরুম থেকে হাত-পা ধুয়ে এলাম। আসলাম আমাকে একটা থালা বাড়িয়ে দিল। তাতে গরম গরম রুটি আর তড়কা। আমি থালা প্রায় ছিনিয়েই নিলাম। গ্রোগাসে খেয়ে নিলাম।

আসলাম আর ছেলেটা খাওয়ার পর চৌকিতে বসল। আমাকে একটা চাদর আর কম্বল দিয়ে বলল, ‘‘ওই কোণে বিছানা করে শুয়ে পড়।’’ আমার কাছে একটাও জামাকাপড় নেই। যে পোশাকে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম, সেটাই পরনে আছে। আমি একটাও কথা বলিনি। চুপচাপ চাদর বিছিয়ে কম্বলটা শরীরে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। কান খোলা রাখলাম আসলাম আর ওই ছেলেটার কথা শোনার জন্য। শুয়ে শুয়ে দেখলাম ওরা গ্লাস আর একটা বোতল নিয়ে চৌকির উপর বসল। আসলাম কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট থেকে দু’টো বড় বড় মুরগীর ঠ্যাং বের করল। বোতল থেকে পানীয় গ্লাসে ঢেলে খেতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে আসলাম দেখলাম বেশ কিছু টাকা ছেলেটাকে দিল। ছেলেটা বলল, ‘‘কত আছে?’’ আসলাম বলল, ‘‘দশ হাজার।’’ ছেলেটা অবার বলল, ‘মাত্র!’’ আসলাম বলল, ‘‘আর কত দেব। এনেছিস তো একটা বাচ্চা মেয়ে। একে মানুষ করতে সময় লাগবে।’’ ছেলেটা আর কথা বাড়াল না। টাকাটা পকেটে পুরে নিল। এর পরে দু’জনে ফের গ্লাসে পানীয় ঢালল।

সকাল হয়ে গিয়েছে। চোখ খুলে দেখলাম ঘরের দরজাটা খোলা। আসলাম দাঁত মাজছে। আর ছেলেটা বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। গতরাতে চোখে পড়েনি, দেখলাম আসলাম ঘরের পাশে আরও একটি ঘর আছে। বিছানায় শুয়েই আছি, কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। আশা করছিলাম, ওদের বলে মা-কে একটা ফোন করে জানাব দিল্লিতে আছি। ছেলেটা ঘুম থেকে উঠল। আমাকে শুয়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে বলল, ‘‘অ্যাই মেয়ে শুয়ে শুয়ে কী করছিস? ওঠ।’’ আমি যন্ত্রের মতো উঠে বসলাম। কিছু বলার আগেই বিছানাটাও গুছিয়ে রাখলাম। ছেলেটা আমায় কাছে ডাকল। বলল, ‘‘তোর নাম কী?’’ কোনওমতে নাম বললাম। আসলাম একটা পেস্টের টিউব দিল। বলল— ‘‘মুখ ধুয়ে নে।’’ আমি আঙুলে পেস্ট লাগিয়ে বাথরুমে গেলাম। ঘরের পাশেই বাথরুম।
ফিরে দেখলাম আসলাম ও ছেলেটা চা-খাচ্ছে। আমি এসে চুপচাপ টুলে বসে পরলাম। আসলাম পুরি আর তরকারি কিনে আনল। ওরা দু’জনে খেল এবং আমাকেও খেত দিল। এর পরে আসলাম ছেলেটাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। ঘরের বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দিল আসলাম।

বাথরুমের দিকে যাওয়ার রাস্তাটা ভেবেছিলাম খোলা থাকবে। কিন্তু, দেখলাম সেখানেও তলা লাগানো। ঘরের ভিতরে কোনও জানলাও নেই। সকাল দেখিলাম পাশে একটা দরজা। সেটা খুলতে দেখলাম একটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভ্যাপসা গন্ধ। সাহস হল না। দরজা বন্ধ করে দিলাম। বিছানায় গিয়ে বসলাম। আজ ক’ত তারিখ জানি না। কত দিন যে চৌকিতে পাতা বিছানায় শুইনি। মনটা হু-হু করে উঠল। ঘরের ভিতর আলো জ্বলছে। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কতক্ষণ, তা-ও জানি না। চোখ খুলল আসলামের দরজা খোলার আওয়াজে। আমাকে চৌকির উপরে দেখে আসলাম হুঙ্কার ছাড়ল। আমাকে অপহরণ করা ছেলেটা এগিয়ে এসে আসলামকে ঠেকাল। আমি আবার টুলে গিয়ে বসলাম। আসলামের মুখ দিয়ে গন্ধ বেরচ্ছে। চোখ দু’টো কেমন যেন জ্বলছে। আসলাম গিয়ে চৌকির উপর বসল। আমাকে দিল্লি নিয়ে আসা ছেলেটাও সেখান গিয়ে বসল। এর পরে চৌকিতে দু’জনেই শুয়ে পড়ল। আমি টুলের উপর বসেই থাকলাম। বুঝতে পারছিলাম বাইরে রাত নেমেছে। ঘুম ভাঙল আসলাম ও ছেলেটার। আসলাম ফের বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরল খাবার নিয়ে। আমার খাওয়া হলে শুয়ে পড়লাম। রাতে ফের পান করতে বসল আসলাম ও ছেলেটা।

ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আচমকাই ঘুম ভাঙল একটা ধাক্কায়। দেখি আসলাম আমার কাঁধ ধরে টানছে। কেমন যেন হিংস্র চোখ দুটো। আমার ভয় করছিল। আমি কোনওমতে একপাশে ফিরে থাকলাম। কিন্তু, পারলাম না বেশিক্ষণ প্রতিরোধ করতে। আসলাম তার শরীরটা নিয়ে আমার উপর চেপে পড়েছে ততক্ষণে। আর অপহরণকারী ছেলেটা তখন চৌকির উপর উল্টে পড়ে আছে। ভাবলাম ও এসে বাঁচাবে। এল না। আসলাম মুহূর্তের মধ্যে আমাকে কব্জা করে ফেলল। কামড়ে-কামড়ে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিল। আমার প্রতিরোধ যখন শেষ হয়ে এল, তখন আমার সঙ্গে একাধিকবার খারাপ কাজ করল। জানতাম না মেয়েদের সঙ্গে খারাপ কাজ করা কাকে বলে। বুঝলাম, আমার ওখানে এমন কিছু আছে, যার জন্য আমাকে দিল্লি আনা হয়েছে। আর আসলাম এভাবেই এখন আমার উপর চড়াও হবে। বুঝতে পারলাম না, ঠিক কী ঘটল। শরীর জুড়ে প্রচণ্ড ব্যথা, তলপেটে ব্যথায় ছিঁড়ে খাচ্ছিল। হু-হু করে কাঁদছিলাম।এবেলা

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন  

চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন

চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস

 শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন

ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন

  • স্বাধীনতার জন্য সিরাজুল আলম খান জীবন যৌবন উৎসর্গ করেছিল
  • ৫৩ বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ১০৬ জনকে সম্মাননা দিল ‘আমরা একাত্তর’
  • হাতিয়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
  • ৫৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন পুলিশ সদস্য
  • শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
  • চলে গেলেন হায়দার আকবর খান রনো
  • গফরগাঁওয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক শামছুন নাহার
  • ‘ও আল্লাহ আমার ইকবালরে কই নিয়ে গেলা’
  • ভিক্ষুকে সয়লাভ নোয়াখালীর শহর
  • কঠিন রোগে ভুগছেন হিনা খান, চাইলেন ভক্তদের সাহায্য
  • কান্না জড়িত কন্ঠে কুড়িগ্রামে পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল
  • অজানা গল্পঃ গহীন অরণ্যে এক সংগ্রামী নারী