২০ লাখ শিশুর জীবন বাঁচিয়েছেন একজন
জেমস হ্যারিসন। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সেন্ট্রাল কোস্টের অধিবাসী ৭৮ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধ। গড়পড়তা আর দশজন অস্ট্রেলীয়র মতোই তিনি। মেয়ে ও নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, বাড়ির কাছাকাছি হাঁটাহাঁটি করেন আর অবসর কাটান ডাকটিকেট সংগ্রহ করে। তবে এই সাধারণ মানুষটির আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি বিশ্বের ২০ লাখ শিশুর জীবন বাঁচিয়েছেন!
জেমস হ্যারিসনের শরীরে প্রবাহিত রক্তই তাঁকে অসাধারণের কাতারে নিয়ে এসেছে। ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন আর্ম’ বলে পরিচিত এই ব্যক্তি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রক্তদান করেন। গত ৬০ বছর ধরেই মেনে চলছেন এই রুটিন। আর এই রক্তই রোধ করেছে বিরল রোগে গর্ভপাত।
দীর্ঘ সময় ধরে জেমস হ্যারিসনের রক্তদানের পেছনেও একটি গল্প আছে। ১৯৫১ সালের ঘটনা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ফুসফুসের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন হ্যারিসন। দীর্ঘ অপারেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাঁকে। পরে বাবার কাছ থেকে হ্যারিসন জানতে পারেন ১৩ ব্যাগ রক্ত তাঁর জীবন বাঁচিয়েছে, এর মধ্যে একমাত্র তাঁর বাবা ছাড়া সব রক্তদাতাই অপরিচিত। হ্যারিসন পণ করেন নিজেও রক্ত দিয়ে যাবেন।
প্রাপ্তবয়স্ক হয়েই রক্ত দান করেন হ্যারিসন। অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকরা ওই রক্ত পরীক্ষা করে তাঁকে ডেকে পাঠান। হ্যারিসনকে চিকিৎসকরা বলেন, তাঁর রক্ত অন্য সবার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। আর এই ভিন্ন রক্তই হতে ‘রেসাস’ সমস্যার কারণে গর্ভপাত প্রতিরোধক। কোনো শিশুর বাবা ও মায়ের রক্তের ভিন্নতা ও এই কারণে সন্তানের রক্তে সমস্যার হলো ‘রেসাস ফ্যাক্টর’। এই সমস্যার কারণে মাতৃগর্ভেই শিশু নষ্ট হয়ে যায়।
অস্ট্রেলিয়ার রেডক্রস রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থার কর্মকর্তা জেমা ফল্কেনমায়ার বলেন, ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার অনেক নারীর গর্ভপাতের ঘটনা ঘটত। পরে এ জন্য রেসাস ফ্যাক্টর দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়। আর এ ক্ষেত্রে সমাধান হয়ে দেখা দেয় জেমস হ্যারিসনের রক্ত। তাঁর রক্তের ভিন্নতাটি হলো সেখানে রেসাস ফ্যাক্টর প্রতিরোধী অ্যান্ডিবডি তৈরি হয়। অস্ট্রেলিয়াই প্রথম দেশ যেখানে রেসাস ফ্যাক্টর দূর করার অ্যান্টিবডি আছে এমন কাউকে পাওয়া যায়।
জেমস হ্যারিসনের রক্ত অত্যন্ত মূল্যবান। তাঁর রক্ত থেকে তৈরি ‘অ্যান্টি-ডি’ ইনজেকশন অন্তত ২০ লাখ শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া রেডক্রসের মতে, মাত্র একজনের রক্তে এতো শিশুর জীবন বাঁচানোর ঘটনা আর কোথাও নেই।
জেমা ফল্কেনমায়ার বলেন, প্রতি ব্যাগ রক্তই দামি। তবে জেমস হ্যারিসনের রক্ত এর চেয়েও বেশি কিছু। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি অ্যান্টি-ডি তৈরি হয়েছে তাঁর রক্ত থেকে। রেডক্রসের মতে, অস্ট্রেলিয়ার ১৭ শতাংশ নারীর সন্তান জন্মদানের সময় রেসাস ফ্যাক্টরের ঝুঁকিতে থাকেন।
জেমস হ্যারিসনের রক্তে কীভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি হলো এ ব্যাপারে এখনো অন্ধকারে গবেষকরা। তাঁদের ধারণা, ১৪ বছর বয়সে ফুসফুসের অপারেশনের কারণে কোনোভাবে পরিবর্তন এসেছে হ্যারিসের শরীরে। এ পরিবর্তন রক্তের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
অস্ট্রেলিয়ার রেডক্রস জানিয়েছে, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মাত্র ৫০ জন মানুষের কথা জানা গেছে যাঁদের রক্তে অ্যান্টি-ডি তৈরির উপাদান আছে। তবে এদের কেউ জেমস হ্যারিসনের মতো নিবেদিত হবে কি না বলা সম্ভব নয়।
জেমা ফল্কেনমায়ার বলেন, জেমস হ্যারিসন যা করেছে তা অন্য কেউ পারবে না বলেই তিনি মনে করেন। তবে অ্যান্টি-ডি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হলে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন