গল্প নয় সত্যি, রাজধানী ঢাকাতে এখন মাএ ৩০ টাকায় বিমানে উঠতে পারবেন..!
সবুজ মাঠে সাজানো সারি সারি বিমান। হঠাৎ দেখে মনে হতে পারে কোনো রানওয়ে। তবে এটি আসলে বিমানের জাদুঘর। বিমানবাহিনীর উদ্যোগে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় আইডিবি ভবনের বিপরীতে এ জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। বিমানবাহিনীর জাদুঘরে রয়েছে ১৯ বিমান, এর মধ্যে তিনটি মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার হয়েছে, মাত্র ৩০ টাকার টিকিট কেটে বিমানে ঢুকে ঘুরেফিরে দেখতে পারবেন।
১৯৭১ সালের উত্তাল সেই দিনগুলোতে স্বল্প সম্পদ আর জনবল নিয়ে সম্পূর্ণ বৈরী পরিবেশে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। অকুতোভয় কয়েকজন বৈমানিক আর নির্ভীক কিছু বিমানসেনার অদম্য সাহস মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে করেছিল প্রকম্পিত ও বিজয়কে করেছিল ত্বরান্বিত।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এই গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস, সাফল্য ও উন্নয়নের ক্রমবিকাশকে সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেগম রোকেয়া সরণিসংলগ্ন তেজগাঁও বিমানবন্দর রানওয়ের পশ্চিম পাশে মনোরম পরিবেশে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জাদুঘর। যদিও ১৯৮৭ সালের ১৭ জুন এর প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
জাদুঘরটির ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে এক বিশাল চত্বর। চত্বরজুড়েই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর গৌরবের সাক্ষী হয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে জঙ্গিবিমান, হেলিকপ্টার ও রাডার। জাদুঘরে রয়েছে মোট ১৯টি বিমান এবং তিনটি রাডার। এর মধ্যে তিনটি বিমান বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতীয় বিমানবাহিনী ব্যবহার করে। পরে বিমানগুলোকে ভারতীয় বিমানবাহিনী বাংলাদেশকে উপহার দেয়।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রথম বিমান বলাকাও রয়েছে এই জাদুঘরে। বলাকায় দর্শনার্থীদের প্রবেশের সুবিধাও রয়েছে। বলাকা ছাড়া আরো তিনটি বিমানে দর্শনার্থীদের প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। বিমানগুলোতে প্রবেশের জন্য টিকিট মূল্য ৩০ টাকা। তবে শুধু প্রবেশের সুযোগই নয়, বিমানগুলোতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।
শিশুদের মনোরঞ্জন ও উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য শিশুপার্কের পাশাপাশি ফুটপাথের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে জিরাফ, শিম্পাঞ্জি,
হরিণ ইত্যাদি নানা রকম পশুপাখির প্রতিকৃতি। এটার নাম দেয়া হয়েছে ‘চিলড্রেন হ্যাভেন’। রয়েছে পানির ফোয়ারাও। এ ছাড়া পাহাড়ের আদলে তৈরি হচ্ছে ‘থিম পার্ক’। জাদুঘরে দর্শনার্থীদের পানাহারের জন্য আছে যয়তুন নামক ভালোমানের রেস্টুরেন্ট। এ ছাড়া বিমানবাহিনীর বিভিন্ন দ্রব্য দিয়ে সজ্জিত হয়েছে স্যুভেনির শপ ‘নীলাদ্রি’।
হান্টার বিমান : বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতীয় এই বিমানটির অংশগ্রহণ ও অবদানের জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে বিমানটি উপহার হিসেবে দেয়। বিমানটি ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বিমানবাহিনীতে আকাশ রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়।
এফটি-৭ বিমান : বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ১৯৮৯ সালে চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমানটি প্রথম সংযোজিত হয়। এফ-৭ বিমানটি প্রশিক্ষণ বিমান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এন-২৪ বিমান : রাশিয়ার তৈরি এ বিমানটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ১৯৭৩ সালে বলাকা নামে সংযোজিত হয়। বিমানটি সরকারিভাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করতেন। এই বিমানে করেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন রাষ্ট্র সফর করেছেন। বিমানটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ৪৪ জন।
এফ-৮৬ যুদ্ধবিমান : বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানি সশস্ত্রবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই বিমানটি ব্যবহার করে। যুদ্ধে পাকবাহিনী বিমানটিকে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রকৌশলী কর্মকর্তা ও টেকনিশিয়ানরা অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে বিমানটি মেরামত করেন এবং ১৯৭২ সালে সফলভাবে উড্ডয়ন করান।
এ-৫ বিমান : বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমানটি ১৯৮৬ সালে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই বিমানটি ১৫০০ কেজি ওজনের সমরাস্ত্র ও আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য মিসাইল বহন করতে সক্ষম।
প্রথম বিমান বলাকা : বাংলাদেশের প্রথম যাত্রীবাহী বিমান বলাকা। রাশিয়ার তৈরি এই বিমানটি বাংলাদেশে আসে প্রথম ১৯৫৮ সালে। বর্তমানে এটি জাদুঘরে রাখা হয়েছে।
পিটি-৬ বিমান : চীনের তৈরি এ বিমানটি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। জাদুঘরে ঘুরতে ঘুরতে দেখা পেয়ে যেতে পারেন লাল-সাদা এ বিমানটির।
ফুগাসি এম-১৭০ বিমান : ফ্রান্সে ১৯৬০ সালে তৈরি করা হয় বিমানটি। অতঃপর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে।
গ্লাইডার বিমান : বিমানবাহিনীর আকাশ অভিজ্ঞতার জন্য জার্মানির দেয়া এ বিমানটি ১৯৮২ সালে দেশে আনা হয়। বিমানটি পশ্চিম জার্মানির তৈরি।
এয়ারটেক কানাডিয়ান ডিএইচ বিমান : কানাডার তৈরি এই বোমারু বিমানটি ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সফল অভিযান পরিচালনা করে। এখন অবশ্য পুরনো হয়ে যাওয়ায় এটিকে রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে।
এফটি-৫ বিমান : চীনের তৈরি এই প্রশিক্ষণ বিমানটি বাংলাদেশে আসে ১৯৮৬ সালে। এই প্রশিক্ষণ বিমানটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জঙ্গি বৈমানিক উড্ডয়ন পারদর্শিতা অর্জনে ব্যবহৃত হয়।
মিগ-২১ বিমান : রাশিয়া ১৯৭৩ সালে উপহারস্বরূপ এই বড়সড় প্রশিক্ষণ বিমানটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে উপহার দেয়।
অটার-৭২১ বিমান : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বৈমানিকগণ কানাডায় নির্মিত এই বিমানটি দ্বারা ১৯৭১ সালে ৪ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটিতে আঘাত হানে।
এলিউট হেলিকপ্টার : ফ্রান্সে তৈরি এই হেলিকপ্টার নিয়ে আমাদের বৈমানিকগণ হানাদার বাহিনীর সেনানিবাসে আঘাত হানে। যাত্রী বহনসহ বিভিন্ন কাজে এটি ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়।
মিগ-২১ এফএল বিমান : ১৯৬৩ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং এখনো এর উড্ডয়ন অব্যাহত আছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এ বিমানটি আকাশ প্রতিরক্ষা ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
ন্যাট-৯১৬ বিমান : জঙ্গিবিমানগুলোর মধ্যে ন্যাট সর্বাধিক হালকা এবং আয়তনে ছোট। ১৯৫০ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে এটি অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনটি ন্যাট বিমান পাকিস্তানের তিনটি স্যাবর জেট (এফ-৮৬) ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর বগুড়ায় আকাশযুদ্ধে এ বিমানটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে।-নয়াদিগন্ত
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন