৪৫ বছরেও স্বীকৃতি পাননি হবিগঞ্জের প্রথম শহীদ সালেহ উদ্দিন আহমদ
স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি হবিগঞ্জের প্রথম শহীদ ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শহীদদের তালিকায় ছবিসহ তার নাম রয়েছে।
অথচ নিজ জেলার শহীদ বেদিতেই ডা. সালেহ উদ্দিনের তার নাম নেই। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়ও তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
২০১১ সালে ডা. সালেহ উদ্দিনের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় শহীদ বেদিতে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন চেতনা-৭১ এর সদস্য সচিব সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।
দীর্ঘ পাঁচ বছরেও বিষয়টি চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী জানান, ‘শহীদ ডা. সালেহ উদ্দিন আহমেদের নাম তালিকায় না আসার কারণে আমি একটি আবেদন করেছিলাম। পরে জামুকার সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার বিষয়ে একটি রিট হওয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। আমি আবেদনকারী হিসেবে প্রত্যাশা করি, এ জটিলতা থেকে দ্রুত মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।’
শহীদ ডা. সালেহ উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি সদর উপজেলার নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ্ব মাওলানা রফিক উদ্দিন আহমদের ছেলে। পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে নিজ শহর হবিগঞ্জে এসে আহমদ ক্লিনিক নামে একটি চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনীতিতেও তিনি ছিলেন সক্রিয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে তৎকালীন মহকুমা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন তিনি। একই সঙ্গে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বও পান।
সেখান থেকে নিরাপদে সীমান্ত অতিক্রমের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পাস দিতেন ডা. সালেহ।
এপ্রিলের শুরুতে পাক বাহিনী হবিগঞ্জে প্রবেশ করেই গণহত্যার পরিকল্পনা করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী নেতাদের বাড়িতে আগুনে দেয়া হয়।
রাজাকারদের দৌরাত্ম তখন বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তের ওপারে অবস্থানরত শরণার্থীদের জন্য টাকা সংগ্রহ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওই টাকা নিয়ে ২৯ এপ্রিল সীমান্তে শরণার্থী শিবিরের উদ্দেশে রওনা হন ডা. সালেহ।
হবিগঞ্জ থেকে ৭ মাইল দূরে শায়েস্তাগঞ্জ পৌঁছামাত্র পাকসেনাদের হাতে আটক হন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মী হীরেন্দ্র কুমার রায়।
আটকের পর তাদের নেয়া হয় শায়েস্তাগঞ্জ হাইস্কুলে পাকসেনাদের ক্যাম্পে। সেখান থেকে লস্করপুরে রমজান মিয়ার বাড়ির সামনে নিয়ে মুখে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে গুলি করে তাদের হত্যা করে পাক বাহিনী। পরে তাদের সেখানেই মাটিচাপা দেয়া হয়।
স্বাধীনতার পর সালেহ উদ্দিনের লাশ উত্তোলন করে নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে দাফন করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও এ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার ভাই শাহাব উদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘যখন আমার ভাইয়ের চিকিৎসা পেশা তুঙ্গে ঠিক তখনই মহান মুক্তিযুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে আমার ভাই শহর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর আগে তার প্রতিষ্ঠিত আহমদ ক্লিনিক পরিদর্শন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকেই পাকবাহিনীর হাতে তিনি শহীদ হন। জেলার প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদের স্বীকৃতি পাননি-এটি বড়ই দুঃখজনক।’
শাহাব উদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত মুক্তি বার্তায়ও জেলার প্রথম শহীদ হিসেবে তার নাম রয়েছে। মুক্তিবার্তা নম্বর-০৫০৩০১০১৪৪। শহীদ ডা. সালেহ উদ্দিনকে হত্যার দায়েই রাজাকার সৈয়দ কায়সারের ফাঁসির আদেশ হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বানিয়াচং উপজেলায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে, ৩ জনে মৃত্যু
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রেবিস্তারিত পড়ুন
হবিগঞ্জে ট্রাক-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে ৫ জন নিহত
হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিতলা বাদশা গেইট এলাকায় ট্রাক ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন
‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করাবিস্তারিত পড়ুন