স্বাধীনতার ৪৫ বছর, মৃত্যুর আগে স্বীকৃতিটুকু চান বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিয়ার
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পাননি কুড়িগ্রামের মো. সফিয়ার রহমান (৬৬)।
২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাতেও তাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। তবে মৃত্যুর আগে স্বীকৃতিটুকু চেয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
জানা যায়, স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে কুড়িগ্রামের যাত্রাপুরে এসেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য হাত মেলান সফিয়ার রহমান।
এরপর ১৯৭১ সালের মার্চে সফিয়ার যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে, নেন প্রশিক্ষণ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়ে নিজ কর্মে মনোনিবেশ করেন। সার্টিফিকেটের পেছনে ছুঁটেননি তিনি। তাই আজও স্বীকৃতি মেলেনি।
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের মরাটারী গ্রামের মৃত সফর উদ্দিন সরকারের ছেলে মো. সফিয়ার রহমানের জীবনযুদ্ধ শেষ হয়নি। জীবন-জীবিকার যুদ্ধ আজও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুর্গম ঝুনকান চরে ছিল পৈতৃক ভিটেমাটি। চরাঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় তার খোঁজ রাখেনি কেউ। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠেনি সফিয়ারের।
জীবনের শেষ বেলায় এসে তার চাওয়া- সুযোগ-সুবিধা নয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি।
সফিয়ার রহমানের অভিযোগ, ‘দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বীকৃতি পাইনি। এখনও তালিকাভুক্ত করা হয়নি আমাকে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) দীর্ঘদিন ঘোরাঘুরি করে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।’
তিনি বলেন, ‘ঘোগাদহ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আব্দুল কাদের ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কমান্ডার মো. বাতেন তদন্ত করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
সফিয়ার রহমান বলেন, ‘ভারতের আসাম রাজ্যের আলিপুরদুয়ার থানার আওতায় ঝাউকুঠি ক্যাম্পের অধীনে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ রিসিপশন ক্যাম্পে’ প্রাইমারি ট্রেনিং গ্রহণ করি। যুদ্ধের শুরুর দিকে অসহনীয় কষ্ট সহ্য করে প্রশিক্ষণ নিই। প্রশিক্ষণ শেষে সহকারী প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধের সময় কয়েকশ’ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমার কাছে তৎকালীন এমএনএ সামছুল হুদা স্বাক্ষরিত (২১-১২-১৯৭১ সালের) ওই ক্যাম্পের প্রাইমারি ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেটও রয়েছে। আমি ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। অথচ দেশ স্বাধীনের পর আমার স্বীকৃতি মেলেনি।’
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দিলেও দুর্গম চরাঞ্চলে বাড়ি এবং অসুস্থতার কারণে নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারেননি তিনি।
২০১৫ সালের ২৯ জুন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন সফিয়ার রহমান। মন্ত্রণালয় ওই আবেদনটি পর দিন ৩০ জুন গ্রহণ করে, যার ডিজি নম্বর ২২২০৯। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
প্রতিবেশী মজিবর রহমান জানান, সফিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডে দীর্ঘদিন অপারেটর পদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেছেন। সময় সুযোগের অভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হতে পারেননি। অভাব-অনটনের মধ্যেই সফিয়ার তার ৭ ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন।
সফিয়ার রহমানের স্ত্রী সালেহা বেগম বলেন, ‘যখন আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে গেছেন তখন টানা ৩ মাস রোজা রেখেছেন আমার শাশুড়ি। যুদ্ধ শেষে আল্লাহ যেন তার সন্তানকে ফিরিয়ে আনেন এ দোয়াও করেছেন। এসেছেন ঠিকই। কিন্তু স্বীকৃতি মেলেনি আজও। সরকারের কাছে কোন সুযোগ-সুবিধা চাই না। আমার স্বামীকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিলেই খুশি।’
এদিকে মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চেয়ে সফিয়ার রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে আবেদন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই অনুরোধ- তিনি যেন বিষয়টি বিবেচনা করেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, ‘তার আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উপজেলা পর্যায়ে পাঠালে সংশ্লিষ্ট কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
অবশেষে রাতে ঢাকায় ঝরছে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি
টানা একমাস তীব্র তাবপ্রবাহের পর অবশেষে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঝরছেবিস্তারিত পড়ুন
থাইল্যান্ড সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে মাইলফলক হয়ে থাকবে : প্রধানমন্ত্রী
থাইল্যান্ডে সরকারি সফর দুই দেশে ফলপ্রসূ অংশীদারিত্বের নতুন যুগ সূচনাবিস্তারিত পড়ুন
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন সাড়ে ১১টায়
থাইল্যান্ড সফরের ফলাফল সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীরবিস্তারিত পড়ুন