৪৮ বছরেও মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ফেরত দেয়নি যে দেশ
যুগ যুগ ধরে মার্কিন নৌবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জামের মালিক হওয়ার গৌরব ধরে রেখেছে। ৪ লাখ ৩০ হাজার নৌসেনাসমৃদ্ধ এই বিশাল বাহিনী সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি ও অস্ত্রে সজ্জিত। আমেরিকান নৌবাহিনীর রয়েছে নেভি সিলের মতো দুর্ধর্ষ একাধিক কমান্ডো বাহিনী। রয়েছে আকাশ শাসনের মতো বিশাল বিমানবাহিনী।জাহজ থেকে শুরু করে নৌবাহিনীর কাজে ব্যবহৃত ছোট বড় অসংখ্য জলযান আছে যুক্তরাষ্ট্রের।
বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের দখল, সমুদ্র পথে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা ও বিশ্ব বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের এসব নৌজাহাজগুলো। এ ছাড়া নিজ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের কাজে মার্কিন নৌবাহিনী চষে বেড়ায় বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। আন্তর্জাতিক হোক বা নিজ দেশের জলসীমায় হোক সচরাচর মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ কোনো দেশ জব্দ করার সাহস দেখায় না বা জব্দ করলেও তা আবার ছেড়ে দেয়।
উত্তর কোরিয়া হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সারা পৃথিবীকে অবাক করে। ১৯৬৮ সালের ২৩ জানুয়ারি মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ ইউ এস পুয়েবলো জব্দ করে উত্তর কোরিয়া। জব্দের পর অতিক্রান্ত হয়েছে দীর্ঘ ৪৮ বছর। এ নিয়ে দুই পক্ষের বিস্তর কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।
উত্তর কোরিয়া মার্কিন এ জাহাজটিকে ফেরত দেয়নি। ইতিহাসে এই ঘটনা পুয়েবলো ক্রাইসিস বা পুয়েবলো সংকট নামে পরিচিত। কিন্তু উত্তর কোরিয়া কেন আঠকে দিল এই জাহাজ? এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিস্তর কথা চালাচালি হয়েছে। কিন্তু কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। ফলে আজো মুক্ত করে দেওয়া হয়নি মার্কিন নৌবাহিনীর এই কমিশনড জাহাজটি।
১৯৬৮ সালের ৫ জানুয়ারি সকালে ইউ এস পুয়েবলো জাপানের মার্কিন নৌঘাঁটি ইউকোসুকো থেকে অপর নৌঘাঁটি সাসিবোর উদ্দেশে যাত্রা করে। ২০ জানুয়ারি ঘাঁটিতে ফেরার পথে জাহাজটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে সোভিয়েত নৌবাহিনীর একটি জাহাজকে নজরদারি শুরু করে। মূল বিপত্তিটা বাঁধে এখান থেকেই। কারণ এই নজরদারি করতে গিয়ে ইউ এস পুয়েবলো উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় ঢুকে পড়ে।
এরই মধ্যে এ খবর পৌঁছে যায় উত্তর কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কাছে। তারা জাহাজটিকে আটকানোর জন্য একটি সাবমেরিন চেজার পাঠায়। সাবমেরিন চেজারটি ইউ এস পুয়েবলোকে চ্যালেঞ্জ করে। কিন্তু মার্কিন জাহাজটি পালানোর চেষ্টা করলে সাবচেজারটি গোলা নিক্ষেপ করে। ইউ এস পুয়েবলোর একজন ক্রু মারা যান। এর মধ্যে সেখানে পৌঁছে যায় দুটি মিগ-২১ জঙ্গি বিমান এবং চারটি টর্পেডো বোট। জব্দ করা হয় ইউ এস পুয়েবলো ও তার সব ক্রুদের।
জাহাজটিকে জব্দ করে নিয়ে যায় উত্তর কোরিয়া। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয় জাহাজটি ও তার ক্রুদের বিরুদ্ধে। আলোচনা চলতে থাকে উভয় পক্ষের মধ্যে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই গুপ্তচরবৃত্তির এ অভিযোগ অস্বীকার করে। বরং তারা অভিযোগ করে জাহাজের ক্রুদের ওই সময়ে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছিল। যদিও সন্দেহটা একেবারে অমূলক নয়। দীর্ঘ ১১ মাস আলোচনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয়, ইউএস পুয়েবলো গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ছিল। এবং তারা এ মর্মে লিখিত দেয়, ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবে।
ভুল স্বীকার ও লিখিত আশ্বাস পাওয়ার পর উত্তর কোরিয়ার প্রশাসন ৮২ জন ক্রুকে দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিলেও জাহাজটি ফেরত দেয়নি। এটি এখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ইউএস পুয়েবলোর জব্দ করাকে অনেকেই খুব বড় কোনো ঘটনা হিসেবে না মানলেও এটি মার্কিন নৌবাহিনীর ইতিহাসে অত্যন্ত আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। এটি এখনো মার্কিন নৌকর্মকর্তাদের জন্য এক ট্র্যাজিডি। রাইজিংবিডি
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন