বাবার পরে ছেলে, এবার ভাই
স্বাধীনতার পর থেকে দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের রাজনৈতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান মির্জা পরিবারের। শুধু এলাকাতেই নয়, এ পরিবারের অবদান রয়েছে জাতীয় রাজনীতিতেও। মির্জা রুহুল আমিন ওই পরিবারের কাণ্ডারি, যিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবা। তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ, ১৯৭৪ সালে তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। তারপর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পেয়েছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রীর।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালে ওই পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন তার যোগ্য ছেলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অবশ্য ফখরুল ছাত্রজীবনে সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত হলেও কর্মজীবনের শুরুতে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন এবং একাধিক সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। তবে ১৯৮৬ সালে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মির্জা ফখরুল তার শিক্ষকতা পেশা থেকে অব্যাহতি নেন এবং সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি সফল নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে ১৯৮৮ সালের পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেন এবং ঠাকুরগাঁও পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে মির্জা ফখরুল ঠাকুরগাঁও বিএনপির সভাপতি মনোনীত হন।
মির্জা ফখরুল ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদেমুল ইসলামের কাছে হেরে যান। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান এবং আবারও আওয়ামী লীগের খাদেমুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন।
তবে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের সাথে প্রতিযোগিতা করেন। নবনির্বাচিত বিএনপি সরকার তার মন্ত্রিসভা ঘোষণা করলে ফখরুল সেখানে কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। পরে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা হলে তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর পদ লাভ করেন। ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে স্বল্প ব্যবধানে পরাজিত হন।
২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির ৫ম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে মির্জা ফখরুলকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব পদে মনোনীত করা হয়। এই পদটিতে এর আগে তারেক রহমান বহাল ছিলেন। নতুন পদ পাওয়ার পর মির্জা ফখরুল বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে গভীরভাবে সক্রিয় হন। তিনি দলের উল্লেখযোগ্য মুখপাত্রে পরিণত হন ও জাতীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচিত মুখে পরিণত হন। ২০১১ সালের মার্চে বিএনপির মহাসচিব খন্দকার দেলওয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করলে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুলকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করেন।
এবার ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় মির্জা পরিবারের ছোট ছেলেও পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাই সাধারণ মানুষ মনে করছে বিগত আমলে মির্জা পরিবার ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়নে যে অবদান রেখেছেন সেই ধারবাহিকতা অব্যাহত রাখবেন নবনির্বাচিত মেয়র মির্জা ফয়সল আমিন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মির্জা ফয়সল আমিন ভোট পেয়েছেন ১৯ হাজার ১৯৬ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাহমিনা মোল্লা পান ১২ হাজার ৬২৭ ভোট।
তবে গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে হামলা, ব্যালট বাক্স ভাঙচুর, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও অবৈধভাবে সিল মারার অভিযোগে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার তিন কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল স্থগিত করা হয়। স্থগিত তিনটি ভোটকেন্দ্রে ফয়সল আমিন ভোট পেয়েছেন ২ হাজার ৮৬৭টি। আর তাহমিনা আক্তার মোল্লা মাত্র ৯৭৬টি ভোট।
এর আগে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ২১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৮টিতে মির্জা ফয়সল আমিন ভোট পেয়েছিলেন ১৬ হাজার ৩২৯টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের তাহমিনা আক্তার ১১ হাজার ৬৫১ ভোট পান। আর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম সোলায়মান আলী সরকার পান ৪ হাজার ১১৯ ভোট।
এদিকে মির্জা ফয়সল আমিন ঠাকুরগাঁও পৌরসভা মেয়র নির্বাচিত হয়ে মির্জা পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বলে শহরের মানুষ মত প্রকাশ করেছে। মির্জা ফয়সলও পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পৌর এলাকার উন্নয়ন করে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বগুড়ার ৩টি উপজেলায় নির্বাচন; ১৫৭ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
রাত পোহালেই বগুড়ার তিন উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও গাবতলীতে ৬ষ্ঠবিস্তারিত পড়ুন
বিএনপি নেতাকর্মীরা বগুড়ায় আ.লীগ নেতার নির্বাচনী প্রচারণায়
বর্তমানে চলছে উপজেলা নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের মত এই উপজেলা বির্নাচনেওবিস্তারিত পড়ুন
পদ্মায় গোসলে নেমে একসঙ্গে নিখোঁজ ৩ কিশোরের মরদেহ উদ্ধার
রাজশাহীতে পদ্মায় গোসল করতে নেমে নিখোঁজ তিন কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করছে ফায়ারবিস্তারিত পড়ুন