শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

নারী ও পুরুষের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি এক নাকি ভিন্ন?

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ একটি ধর্ম। ইসলামের সব বিষয়ে নির্দিষ্ট হুকুম রয়েছে। অন্য বিষয়গুলোর মতো পুরুষ-নারীর নামাজের পদ্ধতিগত পার্থক্যের বিষয়টিও এর ব্যত্যয় নয়। নবীজি [সা.]-এর জামানা থেকে সবাই এ পার্থক্য মেনে তদনুযায়ী নামাজ আদায় করতেন। বরং ঐকমত্যে পার্থক্যের বিপরীতে নতুন পদ্ধতি সামনে এলে তা নিঃসংকোচে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন, যাতে মানুষ ধোঁকায় না পড়ে।

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ একটি ধর্ম। ইসলামের সব বিষয়ে নির্দিষ্ট হুকুম রয়েছে। অন্য বিষয়গুলোর মতো পুরুষ-নারীর নামাজের পদ্ধতিগত পার্থক্যের বিষয়টিও এর ব্যত্যয় নয়। নবীজি [সা.]-এর জামানা থেকে সবাই এ পার্থক্য মেনে তদনুযায়ী নামাজ আদায় করতেন। বরং ঐকমত্যে পার্থক্যের বিপরীতে নতুন পদ্ধতি সামনে এলে তা নিঃসংকোচে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন, যাতে মানুষ ধোঁকায় না পড়ে। মূলকথা হলো, পুরুষ-নারীর মাঝে মৌলিক যে তিনটি পার্থক্য করা হয় তার মধ্যে অন্যতম অবস্থান ও কর্মস্থলের পার্থক্য। পুরুষের কর্মস্থল বাইরে আর নারী গোপনীয় জিনিস।

আর এই মৌলিক পার্থক্যের কারণে মূলত নারীর নামাজ পুরুষ থেকে ভিন্ন রাখা হয়েছে। নবীজি [সা.]-এর জামানা থেকে সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনগণ বিষয়টি খুব সহজভাবে উপলব্ধি করেছেন এবং নবীজি [সা.] কর্তৃকও নির্দেশিত নারীদের নামাজের পার্থক্য অকপটে মেনে নিয়েছেন। এমনকি ইমাম চতুষ্টয় এই পার্থক্যের ব্যাপারে একমত। বাইহাকী [রহ.] বিষয়টি সুনানে কুবরায় এভাবে ব্যক্ত করেছেন যে নামাজের বিভিন্ন বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীর নামাজে পদ্ধতিগত ভিন্নতার প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো ‘সতর’, অর্থাৎ নারীর জন্য শরিয়তের হুকুম হলো ওই পদ্ধতি অবলম্বন করা, যা তাকে সর্বাধিক পর্দা দান করে। [সুনানে কুবরা]

কোরআন ও হাদিসের আলোকে নারীদের সালাত পদ্ধতিকে ইদানিং একটি দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। নিম্নে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হলো-

সালাত পদ্ধতিতে নারীদের ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে দুটি পার্থক্য রয়েছে। আর তা হলো-

১. সতর বা পর্দাকেন্দ্রিক পার্থক্য : অর্থাৎ যতটুকু সম্ভব গোপনীয়তার মাধ্যমে নারীরা সালাত আদায় করবে। এই মর্মে আল্লাহ মহান পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

তোমরা গৃহাভন্তরে অবস্থান করবে-মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। [সুরা আল আহযাব, আয়াত নং ৩৩]

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রা.] থেকে বর্ণিত হুজুর [সা.] এরশাদ করেন নারীদের নিজকক্ষে নামাজ পড়া বাড়িতে নামাজ পড়ার তুলনায় উত্তম, আর নির্জন ও অভ্যান্তরিন স্থানে নামাজ পড়া ঘরে নামাজ পড়া থেকে উত্তম। [হাদিসটি সহিহ, আবু দাউদ ১/৩৮৩, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮]

হজরত আয়েশা [রা.] রাসুল [সা.] থেকে বর্ণনা করেন, ওরনা বা চাদর ব্যতিত নারীদের নামাজ কবুল হবেনা। [আবু দাউদ ১/৪২১ তিরমিজী ২/২১৫-মুসতাদরাকে হাকিম ১/৫১]

উল্লেখিত আয়াত ও হাদিস দ্বারা এ কথার সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, নারীদের সব সময় পর্দার আড়ালেই থাকা প্রয়োজন। আর নামাজ ইসলামের অন্যতম একটি বিধান সুতরাং নারীর নামাজ অধিক পর্দায় হবে- এটাই বিবেকের দাবী।

আমরা দেখলাম পর্দার ক্ষেত্রে নামাজ পড়ার সময় পুরুষ ও নারীদের কি পার্থক্য আছে, এখন আমরা দেখব নামাজের রুকন বা পড়ার পদ্ধতির ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীদের নামাজের মাঝে কি পার্থক্য আছে

২. রোকন বা পড়ার পদ্ধতিতে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য : চার ধরনের দলীলের আলোকে সংক্ষিপ্ত ভাবে পদ্ধতিগত এই পার্থক্য তুলে ধরা হলো-

১. হাদিস শরীফের আলোকে। ২. সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য ও কর্মের আলোকে। ৩. তাবেয়ী ইমাম গনের ঐক্যমত্যের আলোকে। ৪. চার ইমামের ঐক্যমত্যের আলোকে।

১. হাদিসের আলোকে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য : নামাজি নারীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় কি? রাসুল [সা. এ প্রসঙ্গে বলেন, পুরুষদের জন্য হলো তাসবীহ বলা আর নারীদের জন্য হাতে আওয়াজ করা। [সহীহ বুখারী ১/৪০৩] ইয়াজিদ ইবনে আবী হাবীব [রা.] বলেন, একবার রাসুল [সা.] নামাজরত দুই নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন যখন সিজদা করবে তখন শরীর জমিনের সাথে মিলিয়ে দিবে, কেননা নারীরা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো নয়। [কিতাবুল মারাসিল-ইমাম আবু দাউদ : পৃঃ১১৭]

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস শায়েখ শুয়াইব আরনাউত [রহ.] হাদিসটির সুত্র সম্পর্কে বলেন, বণর্নাকারী প্রত্যেক রাবী সর্ব্বোচ্চ গ্রহনযোগ্য রাবীদের অন্তর্ভুক্ত সুতরাং হাদিসটি “সহীহ”। [তালীক আলা মারাসিলে আবী দাউদ পৃঃ ১১৭] আহলে হাদিস স্বীকৃত শীর্ষস্থানীয় আলেম নবাব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ ‘‘আওনুল বারী” (১/৫২০) -তে লিখেছেন উল্লেখিত হাদিস সকল ইমামের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসাবে পেশ করার যোগ্য। আর এ হাদিসটির উপরই আহলে সুন্নত ও চার মাজহাবসহ অন্যন্যদের আমল চলে আসছে।

উল্লেখ্য এই সব হাদিসের সমর্থনে নারী ও পুরুষদের নামাজ আদায়ের পদ্ধতিগত পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে । এমন আরো অনেক হাদিস রয়েছে। পক্ষান্তরে এগুলোর সাথে বিরোধ পুর্ন একটি হাদিসও কোথাও পাওয়া যাবে না, যাতে বলা রয়েছে যে, পুরুষ ও নারীর নামাজের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই।

২. সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যের আলোকে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য : হজরত নাফেয় [রহ.] ইবনে উমর [রা.] থেকে বর্ণনা করেন, ওনাকে রাসুল [সা.] -এর যামানায় নারীদের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, প্রথমত তারা চার পা হয়ে বসত অতপর এক পক্ষ হয়ে বসার জন্য বলা হল। আসারটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহীহ। [জামেউল মাসানীদ-ইমাম আবু হানীফা [রহ.], খণ্ড ১/৪০০]

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [রা.] থেকে বর্ণিত ওনাকে নারীদের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, নারীরা বৈঠকে আংগুলসমুহ মিলিয়ে ও সমবেতভাবে বসবে। [এই হাদিসের সমস্ত রাবী সিকাহ- সুতারাং হাদিস সহীহ, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-খণ্ড ১/২৪২]

৩. তাবেয়ী ইমামগণের ঐক্যমতের আলোকে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য : হজরত হাসান বসরী ও হজরত কাতাদা [রহ.] বলেন, নারীরা যখন সিজদা করবে তখন তারা যথা সম্ভব জরসড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সিজদা দিবে না, যাতে কোমর উচু হয়ে না থাকে। [ হাদিসটি সহীহ, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, খণ্ড ৩/১৩৭-ইবনে আবী শাইবা ১/৪২]

কুফাবসীদের ইমাম ইবরাহীম নাখয়ী [রহ.] বলেন নারীরা বসা অবস্থায় এক পক্ষ হয়ে বসবে । [সহীহ, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, খণ্ড ১/৪৩]

মক্কা বাসীদের ইমাম আতা ইবনে আবী রাবাহ [রহ.] বর্ণনা করেন নারী যখন রুকুতে যাবে অত্যন্ত সংকোচিতভাবে যাবে এবং হাতদ্বয় পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে। [সহীহ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৩/১৩৭]

খালেদ ইবনে লাজলাজ সিরিয়া বাসীদের ইমাম , তিনি বলেন নারীদের আদেশ করা হত, তারা যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে । আবরনযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় নারীদেরকে এমনটি করতে হয়। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০৫]

মোট কথা তাবেয়ীদের যুগে যারা ইমাম এবং ইসলামি বিধি বিধানের ক্ষেত্রে অনুসরনীয় তাদের মতামত থেকে প্রমানিত হল যে, নারী ও পুরুষদের নামাযের পদ্ধতি অভিন্ন মনে করা সম্পুর্ন ভুল । সাহাবি ও তাবেয়ীদের মতামতের সাথে এই ধারনার কোনই মিল নেই।

৪. ইমামের ফিকহের আলোকে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য : ফিকহে হানাফি : ইমাম আবু হানিফা [রহ.] -এর অন্যতম শাগরেদ ইমাম মুহাম্মদ [রহ.] বলেন আমাদের নিকট নারীদের নামাজে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হলো উভয় পা এক পাশে মিলিয়ে রাখবে, পুরুষের মতো এক পা দাঁড় করিয়ে রখবে না। [কিতাবুরল আসার ১/৬০৯, আরো দ্রষ্টব্য- হিদায়াঃ ১/১০০-১১০-১১১- ফাতওয়ায়ে শামী ১/৫০৪- ফাতওয়ায়ে আলমগীরি-১/৭৩]

ফিকহে শাফেয়ি : ইমাম শাফেয়ি [রহ.] বলেন, আল্লাহ পাক নারীদেরকে পুরো পুরি পর্দায় থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। এবং রাসুলও [সা.] অনুরুপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হলো, সিজদা অবস্থায় নারীরা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গকে মিলিয়ে রাখবে, পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সিজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের অধিক হেফাজত হয়। [যাখীরা, ইমাম কারাফী ২/১৯৩]

ফিকহে হাম্বলি : তাকবীরে নারীদের হাত উঠানোর সম্পর্কে ইমাম আহমাদ [রহ.] বলেন, হাত তুলনামুলক কম উঠাবে। [আল মুগনী -২/১৩৯]

এ পর্যন্ত হাদিস, আসারে সাহাবা, আসারে তাবেয়ীন ও ইমামের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট হল যে, পুরুষ ও নারীর নামাজের পদ্ধতির অভিন্ন নয় বরং ভিন্ন।।

মৌলিকভাবে নারী ও পুরুষের নামাজের মাঝে পাচ ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে- ১. তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত ওঠানো। ২. হাত বাঁধার স্থান। ৩. রুকুতে সামান্য ঝোঁকা। ৪. সিজদা জড়সড় হয়ে করা। ৫. বৈঠকে পার্থক্য।

প্রথম পার্থক্য- তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত ওঠানো : এক. ‘ওয়ায়েল ইবনে হুজুর [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবীজি [সা.]-এর নিকট এলাম, তিনি আমাকে বললেন, হে ওয়ায়েল ইবনে হুজুর! যখন তুমি নামাজ পড়বে তখন তুমি তোমার হাত কান পর্যন্ত ওঠাবে আর নারীরা তাদের হাত বুকের ওপর বাঁধবে। [হাইসামি [রহ.] বলেন, ‘এই হাদিসের সমস্ত রাবী নির্ভরযোগ্য, উম্মে ইয়াহইয়া ব্যতীত। কিন্তু পরবর্তী মুহাদ্দিসগণের নিকট উম্মে ইয়াহইয়াও প্রসিদ্ধ।]

দুই. ‘ইমাম যুহরী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : নারীরা কাঁধ পর্যন্ত হাত ওঠাবে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/২৭০]

দ্বিতীয় পার্থক্য- হাত বাঁধা : ইমাম তহাবী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : নারীরা তাদের উভয় হাতকে বুকের ওপর রেখে দেবে, আর এটাই তাদের জন্য যথোপযুক্ত সতর। (আসসিআয়া : ২/১৫৬, ফাতাওয়ায়ে শামী : ১/৫০৪, আল মাবসুত সারাখসী : ১/২৫)

তৃতীয় পার্থক্য- রুকুতে কম ঝোঁকা : ‘যখন নারী রুকুতে যাবে তখন হাতদ্বয় পেটের দিকে উঠিয়ে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে, আর যখন সিজদা করবে তখন হাতদ্বয় শরীরের সাথে এবং পেট ও সিনাকে রানের সাথে মিলিয়ে দেবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে।

চতুর্থ পার্থক্য- সিজদা জড়সড় হয়ে করা : ‘বিখ্যাত তাবেঈ ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব বলেন, একবার নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজরত দুই নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্যে) বললেন, যখন সিজদা করবে তখন শরীর জমিনের সাথে মিশিয়ে দেবে। কেননা নারীরা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো নয়।’ [কিতাবুল মারাসীল ইমাম আবু দাউদ হা. নং ৮০] আবু দাউদ (রহ.)-এর উক্ত হাদিস সম্পর্কে গায়েবে মুকাল্লিদদের বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ‘আউনুল বারী’ ১/৫২০-এ লিখেছেন, এই মুরসাল হাদিসটি সকল ইমামের উসুল ও মূলনীতি অনুযায়ী দলিল হওয়ার যোগ্য।

হজরত মুজাহিদ ইবনে জাবর [রহ.] পুরুষদের জন্য নারীদের মতো ঊরুর সাথে পেট লাগিয়ে সিজদা করাকে অপছন্দ করতেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/৩০৩]

হজরত হাসান বসরী ও কাতাদাহ (রহ.) বলেন, নারী যখন সিজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সিজদা করবে না, যাতে কোমর উঁচু হয়ে থাকে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/৩০৩]

পঞ্চম পার্থক্য- বৈঠকের ক্ষেত্রে নারীগণ উভয় পা বাঁ পাশ দিয়ে বের করে দিয়ে জমিনের ওপর নিতম্ব রেখে ঊরুর সাথে পেট মিলিয়ে রাখবে : হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর [রা.] থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, নারী যখন নামাজের মধ্যে বসবে তখন যেন এক ঊরু (ডান ঊরু) আরেক ঊরুর ওপর রাখে, আর যখন সিজদা করবে তখন যেন পেট ঊরুর সাথে মিলিয়ে রাখে, যা তার সতরের জন্য অধিক উপযুক্ত হয়। [সুনানে কুবরা বাইহাকী : ২/২২৩]

হজরত খালেদ ইবনে লাজলাজ [রহ.] বলেন, নারীদেরকে আদেশ করা হতো তারা যেন নামাজে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের ওপর বসে, পুরুষদের মতো না বসে, আবরণীয় কোনো কিছু প্রকাশ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নারীদেরকে এমনটি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/৩০৩)

ইবনে আব্বাস [রা.]-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে নারীরা কিভাবে নামাজ আদায় করবে? তিনি বললেন, খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামাজ আদায় করবে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/৩০২] উপর্যুক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা একটু মনোযোগের সাথে পাঠ করলে একজন ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের পাঠক সহজে অনুমান করতে সক্ষম হবেন যে, নারীদের নামাজের পার্থক্যের বিষয়টি নবীজি [সা.] এবং সাহাবীদের যুগ থেকেই চলে আসছে এবং -এর পক্ষে অনেক শক্তিশালী দলিল রয়েছে।

কিন্তু কিছু কিছু ইসলামী চিন্তাবিদ (?) সালাফ থেকে চলে আসা সুপ্রতিষ্ঠিত মত ও পথকে উপেক্ষা করে নিজের গবেষণালব্ধ মত ও পথকে জনগণের মাঝে চালিয়ে দেওয়ার ও জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার কিছু নমুনা নিম্নে পেশ করা হলো : আরবের প্রসিদ্ধ গায়রে মুকাল্লিদ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী তাঁর ‘সিফাতুস সালাত’ নামক গ্রন্থে দাবি করেন যে পুরুষ-নারীর নামাজের পদ্ধতি এক ও অভিন্ন এবং তিনি তাঁর এ দাবি হাদিসবিরোধী নয়- এ কথা প্রমাণ করার জন্য প্রথম পর্যায়ে তিনি আহলে হকের পক্ষের নারীদের নামাজের পার্থক্য সংবলিত মারাসীলে আবু দাউদের হাদিসটিকে এ কথা বলে যয়ীফ আখ্যা দিলেন যে, ‘হাদিসটি মুরসাল, অতএব, তা যয়ীফ’ অথচ অধিকাংশ ইমাম বিশেষ করে স্বর্ণযুগের ইমামদের মতে, প্রয়োজনীয় শর্তাবলি বিদ্যমান থাকলে মুরসাল হাদিসও মারফু এবং সহিহ হাদিসের মতো গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। বিশেষ করে আবু দাউদ [রহ.]-এর এই হাদিসটির শুদ্ধতার পক্ষে সমস্ত ইমামগণ এমনটি গায়রে মুকাল্লিদ আলেম সিদ্দীক হাসান খান সাহেবও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তিনি দ্বিতীয় পর্যায়ে স্বীয় মনগড়া উক্তিকে প্রমাণের জন্য ইবরাহীম নাখয়ী [রহ.]-এর কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি নাকি বলেছেন, ‘নারীগণ পুরুষদের মতোই নামাজ আদায় করবে’- এই উক্তি উল্লেখ করে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। অথচ এই গ্রন্থের কোথাও এই কথাটি নেই। বরং ‘মাকতাবায়ে শামেলার’ হাজার হাজার কিতাব সার্চ করেও এই উক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। দ্বীনের নামে এমন জালিয়াতির কোনো অর্থ হয় না। তৃতীয় কাজটি এই করলেন যে, উম্মে দারদা [রা.] সম্পর্কে বর্ণিত একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন, ‘তিনি নামাজে পুরুষদের মতো বসতেন’ আলবানী সাহেব যদি এই উক্তি দ্বারা নিজের দাবি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই উক্তি দ্বারা পুরুষ-নারীর নামাজে পার্থক্যের কথাই প্রমাণিত হয়। কেননা উভয়ের বসার পদ্ধতি এক হয়ে থাকলে ‘উম্মে দারদা পুরুষের মতো বসতেন’ এ কথা বলার প্রয়োজন কী? যেহেতু উম্মে দারদা নারীদের নামাজে বসার প্রচলিত ও সাধারণ নিয়মের উল্টো করে পুরুষদের মতো বসতেন, যা ছিল একটি ব্যতিক্রমী জিনিস। তাই এ কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ কথা বুখারী (রহ.)-এর ‘তারীখে সগীরে’ স্থান করে নিয়েছে। কিছু ভাইগণ পুরুষ-নারীদের অনেক ইবাদতে পার্থক্য মানেন, যেগুলোর ভিত্তি নারীদের সতর ঢাকার ওপর। যেমন ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ অথচ নারীদের জন্য মাথা ঢেকে রাখা ফরজ। অনুরূপভাবে পুরুষগণ উচ্চ আওয়াজে তালবিয়া পাঠ করে থাকেন অথচ নারীদের জন্য নিম্নস্বরে তালবিয়া পড়া জরুরি। এ তো শুধু হজের কথা উল্লেখ করা হলো, এ ছাড়া আরো অনেক ইবাদতে পুরুষ-নারীর পার্থক্য সবাই মেনে আসছে। তাহলে নামাজের ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীর পার্থক্য মানতে তাদের সমস্যা কোথায়? এই পার্থক্য তো আমাদের মনগড়া কোনো বিষয় নয়। সরাসরি হাদিস ও আশারে সাহাবা থেকে প্রমাণিত। আহলে হাদিস বন্ধুরা একদিকে হাদিস মানার দাবি করছে আবার অন্যদিকে হাদিসের উল্টা কাজ করছে, কী আজব বৈপরীত্য?

নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর
প্রথম প্রশ্ন : আবু হুরাইরা [রা.] বর্ণনা করেন রাসুল [সা.] বলেছেন যখন তোমাদের কেউ সিজদা করবে তখন এমন ভাবে বসবে না যেভাবে উট বসে, বরং দুই হাতকে হাঁটুর পুর্বে রাখবে। [আবু দাউদ-১/৮৪০]

উত্তর : বোন, মা, ফুপি- মাহরাম নারীদের ক্ষেত্রে শরীয়তের নিষেধাজ্ঞা থাকায় যেমনিভাবে সুন্দরী হলেই বিবাহ করা যায় না, ঠিক তেমনি – কোরআন ও হাদিসের ব্যাপারে নাসেখ- মানসুখের চিরন্তন বিধান থাকায় হাদিস সহীহ হলেই আমল যোগ্য হয় না। উপরের ভুমিকার দ্বারা আমার বলার উদ্দেশ্য, প্রথম হাদিস জমহুর উলামাদের দৃস্টিতে মানসুখ (রহিত) এর তালিকায়। [বজলুল মাজহুদ -৫/৮৯] যেই হাদিস দ্বারা উপরের হাদিস মনসুখ হয়েছে, সেটা হলো: সাদ ইবনে আবী ওককাস [রা.] ওনার পিতা হতে বর্ননা করেন, তিনি বলেন, আমরা সিজদার সময় হাটুর পূর্বে হাত রাখতাম, পরবর্তিতে আমাদেরকে হাত রাখার পূর্বে হাটু রাখার নির্দেশ দেয়া হয় । [সহীহ ইবনে খুজাইমা, ১/৩১৮]

দ্বিতীয় প্রশ্ন : উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা [রা.] হাফসা বিনতে উমার [রা.], মায়মুনা [রা.] দ্বীন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ উম্মু দারদা [রা.] বুখারী ভাষ্যনুযায়ী এরা পুরুষদের মতো নামাজ আদায় করতেন ।

উত্তর : উল্লেখিত এই দাবী সম্পূর্ন মিথ্যা, এমন কথা ইমাম বুখারী [রহ.] স্বীয় কিতাব বুখারী শরীফে বা অন্য কোন কিতাবে কখনই বলেননি বা উল্লেখ করেন নাই। এটা ইতিহাস স্বীকৃত শ্রেষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম বুখারীকে মিথ্যার কলংকে কলংকিত করে ওনার লেখনিকে প্রশ্ন বিদ্ধ করার অপপ্রয়াশ মাত্র। আর উম্মু দারদা [রহ.] একজন তাবেয়ী, তিনি নামাযে পুরুষদের ন্যায় বসতেন । নামাযের পদ্ধতিতে একজন তাবেয়ীর আমল যদি দলীল হয়ে থাকে তাহলে ইতিপূর্বে আমরা চার শ্রেনীর দলীলের ভিত্তিতে নারীদের নামাযের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি , যার মাধ্যমে একথা প্রমান হয়েছে যে আয়িম্মায়ে তাবেয়ীন যথাঃ- হাসান বসরি , হজরত কাতাদাহ, ইব্রাহীম নাখয়ী, খালেদ ইবনে লাজলাজ ওনাদের তালীল ও শিক্ষা অনুযায়ী রুকু সিজদা সহ একাধিক আমলের মধ্যে নারীদের নামাযের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন ছিল। এছাড়া হতে পারে উম্মু দারদা [রা.] এবিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। অন্যান্য ক্ষেত্রে তিনি নারীদের মত ভিন্ন ভাবেই আমল করতেন। সুতরাং শুধু একজন তাবেয়ী নারীর ব্যক্তিগত আমলকে অগ্রাধিকার দেয়ার ব্যাপারটি যুক্তি যুক্ত ও গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। আপনাদের বক্তব্যের দারাই নামাযে পুরুষ ও নারীর পদ্ধতি ভিন্ন হওয়া প্রমানিত হয়। কেননা উভয়ের নামাযের পদ্ধতি এক হলে ‘‘পুরুষদের মত নামাজ, কথাটির কোন অর্থ থাকেনা। সুতরাং একথা স্পষ্ট হয়ে গেল সেই যামানায় পুরুষ ও নারীর নামাযের পদ্ধতি এক ছিল না।

তৃতীয় প্রশ্ন : হজরত আবু হুমাইদ সায়েদী [রা.] রাসুল [সা.] -এর একদল সাহাবীর মধ্যে বলিলেন আমি আপনাদের অপেক্ষা রাসুল [সা.] -এর নামাজ অধিক স্বরন রাখিয়াছি। আমি তাহাকে দিখিয়াছি-তিনি যখন আর বসতেন নিতম্বের উপরে। আপনাদের দাবী- এই হাদিস বলছে শেষ বৈঠকে নিতম্বের উপর বসার কথা। এখানে পুরুষ নারী উল্লেখ করা নাই সুতরাং ইহা সকলেরই আমল যোগ্য। উল্লেখিত হাদিসের মাঝে সাহাবী আবু হুমাইদ সায়েদী [রা.] রাসুল [সা.]- এর নামাযের পদ্ধতি আলোচনা করেছেন। আর রাসুল [সা.] পুরুষ ছিলেন । অতপর এখানে পুরুষ নারী উল্লেখ করা নাই সুতরাং ইহা সকলেরই আমল যোগ্য এমন হাস্যকর দাবী করা অযোক্তিক নয় কি?

২য় ও ৩য় প্রশ্নের উত্তর : উপরের উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা একথা সূর্যের আলোর মত সুস্পষ্ট, হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত আশরাফ আলী থানভী [রহ.] -এর বেহেশতী জেওর এবং যুগের শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ হাসান বিন আম্মার হানাফী [রহ.] কতৃক লিখিত মারাকীর মত ফেক্বহ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রহনযোগ্য কিতাবের ব্যপারে এমন অভিযোগ বা মন্তব্য, পরক্ষভাবে স্বয়ং আল্লাহ তাআলার প্রজ্বলিত দ্বীনের প্রদীপকে মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে দেয়ার জন্য ব্যার্থ চেষ্টা মাত্র।

তথ্যসূত্র : ১. আবু দাউদ ১/৩৮৩; ২. মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮; ৩. তিরমিজী ২/২১৫; ৪. বুখারী শরীফ; ৫. তালীক আলা মারাসিলে আবী দাউদ পৃঃ ১১৭; ৬. আওনুল বারী (১/৫২০); ৭. জামেউল মাসানীদ-ইমাম আবু হানীফা [রহ.] খণ্ড ১/৪০০; ৮. মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-খণ্ড ১/২৪২; ৯. মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক; ১০. হিদায়া- ১/১০০-১১০-১১১; ১১. ফাতওয়ায়ে শামী ১/৫০৪; ১২. ফাতওয়ায়ে আলমগীরি-১/৭৩; ১৩. যাখীরা; ১৪. ইমাম কারাফী ২/১৯৩; ১৫. আল মুগনী -২/১৩৯; ১৬. বজলুল মাজহুদ -৫/৮৯

গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মিরাজ রহমান

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি

পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন

সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু

সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন

ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি

এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন

  • ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ
  • দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী
  • সৌদি আরবে হজ পালনের সময় অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু
  • ঈদের নামাজ শেষে চলছে কোরবানি
  • হাজিদের গরম থেকে বাঁচাতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করলো সৌদি
  • জমজমাট শপিংমল-মার্কেট
  • ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর হবে আরাফাত ময়দান
  • উত্তরাঞ্চলের ঈদযাত্রা হবে নির্ঝঞ্জাট
  • শিকড়ের টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ, ফাকা হচ্ছে ঢাকা
  • জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কোরবানীর পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও বিপণন প্রশিক্ষণ
  • ঈদযাত্রায় এবার ১২ জায়গায় ভোগান্তির শঙ্কা
  • সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ৮২ হাজারের বেশি হজযাত্রী