শনিবার, অক্টোবর ১২, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

পাকিস্তানি খায়েশ, মৃতপ্রায় বিএনপি ও আওয়ামী প্রতিরোধ

পাকিস্তানি ‘লেজ’ কখনও সোজা হবে না। এবার তারা প্রায় ৭০০ কোটি টাকা চাইছে। তাদের এই দাবি নিয়ে তারা কত দূর যাবে বা যেতে পারবে জানি না। তবে লুকায়িত হিংসা আর ক্রোধের এই বহিঃপ্রকাশ নতুন নয়।

আমাদের দেশের চাকা এখন সচল। ৪০ বছর পর অনেক দেশের ভাগ্যে এমন সুযোগ আসে। এটাও ইতিহাসের নিয়ম। যারা এগিয়েছে, যাদের দেশ আজ শক্ত জায়গায় তাদের অতীত তাই বলে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঞ্জাল সাফ করে এগোচ্ছি। ইতিহাসের পাপমোচনে দালাল, মানবতাবিরোধীদের শাস্তি হওয়ার পর পাকিস্তান আরও কঠোর হবে, এটাই স্বাভাবিক। আজ সে দেশটি আগের অবস্থানে নেই।

একসময় আমেরিকার পরম ইয়ার, জানি-দোস্ত পাকিস্তান এখন মার্কিনদের চোখে সন্ত্রাসী; ‘সন্ত্রাসী দেশ’ হিসেবে ঘোষণা প্রায় সময়ের ব্যাপার। ডোনাল্ড ট্রাম্প গদিতে আসায় ড. ইউনূস বা বিএনপি নাখোশ হলেও এ ইস্যুতে আমরা আশাবাদী হতেই পারি। এটা আওয়ামী লীগ ও সরকারের জন্য ‘পজিটিভ’। কিন্তু নেতা-এমপি-মন্ত্রী আর সরকারের কর্তাদের আচরণে মনে হয় না তারা পাকিস্তান নিয়ে ততটা ভাবিত। তারা আছে তাদের ‘ইমেডিয়েট টার্গেট’ নিয়ে।

নাসিরনগরে মন্ত্রীর অমৃতবচন ‘মালাউন’ সারা দেশ তোলপাড় করলেও মার্জনা চায়নি কেউ। এখন শুনছি ‘লং মার্চ’ যাওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা হয়েছে সেখানে। এটা তো প্রতিমা নিরঞ্জন নয়। এটা আশা ও ভালোবাসার ভরাডুবি। মাটির মূর্তি জলে ফেললেই কি ল্যাঠা চুকে যায়? যে দাগ অন্তরে, যে আঘাত সমাজের শরীরে, মালাউনদের মনে তার নিরাময় কোথায়?

সে ঘটনার রেশ না কাটতেই সাঁওতাল এলাকায় ঘটল আরও বড় ঘটনা। আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যাওয়া আদিবাসীদের ঘরবাড়ি, বাড়ি থেকে বেরুতে না পারা অভুক্ত, অন্নহীনদের কথা ভাবে না রাজনীতি। পাকিস্তান ঠেকানোর আগে এসব বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার দরকার কেন জানেন?

এখন যেখানে যাই সেখানেই একটা কথা চাউড় হয়ে আছে: “পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল!”

এটা কিন্তু পরিকল্পিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এই অপপ্রচারের পেছনে আছে বিএনপি ও জামাতের রাজনীতি। তারা এখন আওয়ামীবিরোধী, সরকারবিরোধী মনোভাবে সংখ্যালঘুদের ভোট টানবে। বিশ্বাস না হলে ভারতের দিকে তাকান– বিজেপি সেভাবেই উঠে এসেছে।

জানি না কী কারণে বিএনপি-ভীতিটাই এখনও মুখ্য। খবরে দেখলাম ভুয়া জন্মদিন করার কারণে যে অভিযোগ ও মামলা, তাতে হাজিরা না দেওয়ায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

কয়েকবারের প্রধানমন্ত্রী ম্যাডাম এখন দৃশ্যত গৃহবন্দি বা স্বেচ্ছানির্বাসনে। তিনি ও তাঁর দলের বর্তমান চেহারা নিয়ে আগেও বলেছিলাম। আদর্শহীন বাংলাদেশকে পাকি-কায়দায় একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানিয়ে তেলে-পানিতে একাকার করার জন্য জন্মেছিল বিএনপি, যাকে রাজনৈতিক দল না বলে ‘মিলনের প্ল্যাটফর্ম’ বলাই সঙ্গত।

এই বিএনপি-ট্রেনের আরোহীরা যার যার ‘আখেরি’ স্টেশনে নেমে গেছেন। কেউ প্রয়াত, কেউ দলছুট। সুবিধামতো নাজমুল হুদা গেছে। মওদুদ নির্বাক। খোকাবাবু মান্নাকে জেলে ঢুকিয়ে নিজে আত্মগোপনে অথবা প্রবাসে মহানন্দে। বাকি কয়েকজন যখন মনে যা আসে তা বলে বলে ক্লান্ত।

এই বিএনপির ভেতরের শক্তি কিন্তু ‘সাইলেন্ট মেজরিটি’। সেটা যতটা তাদের অর্জন তারচেয়ে বেশি সরকারি দলের ব্যর্থতায় পাওয়া ‘উপহার’।

এ দেশে আমাদের বয়সী মানুষদের অধিকাংশেরই জন্ম তারিখ সঠিক নয়। হিন্দুদের পঞ্জিকা দেখা বা তিথি মানা না-মানার ব্যাপার আছে বলে কিছুটা ঠিক ধাকলেও বাকিদের নেই। খালেদা জিয়ার প্রজন্মের তো নেই-ই। সেদিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে জন্মদিন পালন বহু মানুষের বেলায় সত্য। কিন্তু তিনি যে ‘অপরাধ’ করেছেন তা হল জাতির জনকের মৃত্যুর ভয়াবহতম করুণ দিনটিকে বেছে নিয়েছেন। শোকের সে দিবসে আনন্দে কেক কাটার মতো র্নিলজ্জতা, ভাবা যায় না! এই অপরাধ অমার্জনীয়।

যখন তাদের ‘সুদিন’ ছিল তখন কেকের সাইজও ক্রমে বড় হচ্ছিল। রক্তমাখা কেকের প্রতিশোধও নিয়েছে সময়! আজ বিএনপি মৃতপ্রায় একটি দল। জনগণের যে অংশটি সচেতন তারা এদের ভয় পায়। হিসাব সহজ। আদর্শহীন দল বলে তারা যে কোনো কিছু করতে পারে। সময়-সুযোগ মিললে এরা কাদের মোল্লা থেকে সাকা সবাইকে ‘শহীদ’ ঘোষণা দিয়ে জাতীয় বীর বানাতে কসুর করবে না! পারলে এদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভও বানিয়ে দেবে।

এর চেয়েও ভয়ের ব্যাপার এ দেশে আরেকটা বড় ধরনের কিলিং ও প্রগতিশীল নিধন হবে বা হতে পারে। সে কারণে বিএনপিকে আরেকবার আসতে দেওয়ার বিরুদ্ধে মতামত আছে। কিন্তু ‘মৃতবৎসা’ এই দল ও নেতাকে কারা আনছে ‘লাইম লাইটে’? কেন এখন খালেদা জিয়াকে সংবাদ শিরোনাম হতে দেওয়া?

কথায় আছে, কড়াই তপ্ত থাকতে থাকতে মাছ ভেজে নিতে হয়। অথচ দেশের চুলাও কড়াই উত্তপ্ত হয়ে আছে অন্য ইস্যুতে। সরকার সেগুলোর বিহিত করতে পারছে না। মন্ত্রী-এমপিরা এর আগে এমন করে নিজেদের বিতর্কিত করেছে বলেও মনে করতে পারি না। সরকারের সামনে সেসব ইস্যু যখন আগুন তখন এই নতুন আগুন নিয়ে খেলার কি মানে? কেন খালেদা জিয়াকে ‘নেগেটিভ পপুলারিটি’ দেওয়ার চেষ্টা?

বলছিলাম পাকিস্তানের কথা। পাকিস্তানি রাজনীতি আমাদের দেশে এখনও বহাল। বিএনপি জামায়াতের খুঁটির জোর সেখানে। বিদেশে আওয়ামী লীগারদের আচরণ আর দলবাজিতে মানুষ ক্লান্ত। সত্য বললে বলতে হয় একদা মুসলিম লীগার ও অভিজাত পরিবার থেকে আগত মানুষদের কারণে বিএনপির নেতারা দেশ ও সম্প্রদায়ের ওপর চড়াও বা প্রতিশোধপরায়ণ হলেও লীগারদের চাইতে ব্যবহারে এগিয়ে।

বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার পর আওয়ামী লীগের দিকে তাকালে মনে হয় তারা সময় বুঝে মেষশাবক, সময় বুঝে সিংহ। এই সিংহরা কিন্তু জামায়াত ঠেকানোর সময় মাঠে থাকে না। তখন মার খায় এ দেশের পুলিশ বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মানুষজন।

দলের একজন মানুষ বা কোনো নেতা কে দেখিনি এতগুলো অপকর্মের বিরুদ্ধে দলীয় প্রতিরোধের ডাক দিতে। তাঁরা সেজেগুজে গাড়ির বহর নিয়ে উপদ্রুত এলাকায় যায়। ত্রাণ বিতরণ করে ছবি তোলেন। মিডিয়ার সামনে বড় বড় কথা বলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে জানেন না।

বিশ্বাস করুন, মানুষ বিরক্ত। যারা এ দেশের ভালো-মন্দে, আপদ-বিপদে মাঠে নামে তারাও কোণঠাসা। শাহবাগ গণজাগরণ মুক্তবুদ্ধি কিংবা বাম সবাইকে সময়মতো ‘সাইজ’ করে রাখলে প্রতিবাদ কি আকাশ থেকে পড়বে? পাকিস্তানিদের অন্যায় বা অসভ্যতার বিরুদ্ধে কাগুজে হুংকার ছাড়তে পারলেও মাঠে নামার জায়গাটা এখন আসলেই প্রশ্নবিদ্ধ।

আমাদের কূটনীতিও আজব। অনেক বছর আগে এক ইজরায়েলি তরুণী আমাকে বেশ বিপদেই ফেলে দিয়েছিল। যখন সে জানল বাংলাদেশের পাসপোর্টে সব দেশে যাওয়া গেলেও ইজরায়েল যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ লেখা আছে, তার বিস্ময় উঠেছিল চরমে। তার একটিই কথা, “আমরা তো তোমাদের ভালো করে জানিই না। আমাদের সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধও হয়নি কোনোদিন। যেখানে যুদ্ধরত আরব দেশগুলোর লোকেরা যেতে পারে, তোমরা কেন পার না?”

এর উত্তর দেওয়া ছিল কঠিন। অথচ আমরা পাকিস্তানের বেলায় তা করিনি। আমাদের পাসপোর্টে ‘একসেপ্ট পাকিস্তান’ লেখা নেই। বরং চাইলেই আপনি যেতে পারেন। তাহলে আমরা কি করে বুঝব আসলে কোনটা আমাদের নীতি? আমরা কি তাদের বন্ধু মনে করি, না দুশমন?

পাকিস্তানের কাছেও আমাদের প্রাপ্য আছে। সেটার ব্যাপারে আমরা বুদবুদের মতো ভেসেই আবার তলিয়ে যাই। পাকিরা ভোলে না। এটা মানবেন পাকিস্তানিদের যত খারাপ সময় থাকুক না কেন তারা দেশপ্রেমী। দেশ নিয়ে তারা আমাদের মতো কয়েক ভাগে বিভক্ত না। আমাদের মতো ‘জাতির পিতা’ নিয়ে ঝগড়া করে না। অতীত নিয়ে মারামারি করে না। যে ভূখণ্ড হাতছাড়া হয়ে গেছে তার বিরুদ্ধেও তারা ঐক্যবদ্ধ।

ইমরান খান থেকে রমিজ রাজা বা সে দেশের রাজনীতি সবাই বাংলাদেশবিরোধী। অন্যদিকে দেশে-বিদেশে ছদ্মবেশী পাকি-প্রেমীরা সব দলে সব গোষ্ঠীতে ঢুকে আছে। আমি নিজে দেখেছি চট্টগ্রামের ডাকসাইটে আওয়ামী নেতা ক্রিকেটে পাকিদের জয়ের জন্য প্রার্থনা করেন! মিষ্টি বিতরণ করেন। এরা কীভাবে পাকিস্তানি চাওয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন? কীভাবে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সাহায্য করবেন?

খালেদা জিয়া ইস্যু, অযৌক্তিক বিএনপি বিরোধিতা, সাম্প্রদায়িক সংঘাত, জাতিগত উস্কানি আর রাজনীতিহীন এককেন্দ্রিকতা দেখে একটা গল্প মনে পড়ে। দুনিয়ার প্রথম এক্সরে একজিবিশন বা প্রদশর্নীতে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকা এক ইংরেজ যুবক পাশের বয়স্ক চৈনিক লোকটিকে আবেগে হাত ধরে বলছিল, “দেখুন দেখুন, ও মাই গড এতে হৃদয়ও দেখা যাচ্ছে।”

চৈনিক ভদ্রলোক শান্তভাবে তার হাত চেপে ধরে উত্তর দিয়েছিলেন, “না, বৎস। এ শুধু হাড়গোড়। হৃদয় দেখানোর মতো কোনো এক্সরে এখনও আবিস্কৃত হয়নি।”

মানুষের মন বা হৃদয় দেখতে পাচ্ছেন না আপনারা। পারলে অন্য পথ ধরতেন। কঠিন হতেন। তাই ভয় হয় এমন একদিন আসে কি না যেদিন আমরাই স্ব উদ্যেগে পাকিস্তানকে ডেকে বলব–

“নে ভাই, তোর প্রাপ্য বা তোর খায়েশের টাকা নিয়ে যা। তবু আমরা যেন ‘বেরাদার’ থাকি!”

সময় থাকতে সাবধানতার বিকল্প কোথায়?

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?