রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী

এবারের বাজেট অধিবেশন সাংসদদের তর্কে-বিতর্কে যতোটা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল সমসাময়িককালে ঠিক তেমনটি আর চোখে পড়েনি। জাতীয় সংসদ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল বিধায় গণমাধ্যমগুলোতেও বাজেট অধিবেশনের খবরাখবর বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। প্রতিদিনই জাতীয় সংসদের অধিবেশন ছিল আলোচনা আর সমালোচনায় মুখরিত। বাজেটের উপর আলোচনায় শুধু সরকারি দল নয়, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যগণকেও প্রাণখুলে কথা বলতে দেখা যায়। অধিবেশনের প্রতিটি দিনে সাংসদদের উপস্থিতিও ছিল অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।

বাজেট অধিবেশন শুরু হয় গত ৩০ মে মঙ্গলবার সকাল ১১ টায়। এটি ছিল দশম জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশন। এরপর ১ জুন বেলা দেড়টায় জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এটি ছিল দেশের ৪৬ তম, আওয়ামী লীগের ১৭ তম এবং অর্থমন্ত্রীর ১১তম বাজেট প্রস্তাব। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’ শ্লোগানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের মূল বাজেট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা থেকে ২৬ শতাংশ বেশি ছিল। বাজেটে ব্যয় মেটাতে সরকারি অনুদানসহ আয়ের পরিমাণ ধরা হয় ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ধরা হয় ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। মোট ঘাটতি ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয় (এডিপি) ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। সংসদে ৩০ জুন বৃহস্পতিবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাাবিত বাজেট পাস হয়। সেই মাফিক ১ জুলাই শনিবার থেকে এ বাজেট-এর কার্যকর শুরু হয়েছে। বাজেট অধিবেশন শুরুর পর প্রায় এক মাস আলোচনা শেষে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার সর্বকালের বড় বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বাজেট অধিবেশনে যে বিষয়গুলো নিয়ে তুমুল আলোচনা হয় সেগুলো হলো- আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রের উপর প্রদত্ত সুদের হার, চালের উচ্চমূল্য ও খাদ্যঘাটতি, ব্যাংকিং খাতের লুটপাট, হাওর ও পাহাড়ের মানুষের কান্না, ভ্যাট আইন ইত্যাদি। সাধারণ আলোচনায় সরকারি দলের সংসদ সদস্যগণ যেমন জন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়ে খোদ অর্থমন্ত্রীর প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন তেমনি বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে ভীষণরকম কোণঠাসাও হতে দেখা যায়। কেউ কেউ তার পদত্যাগও দাবি করেন। তবে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদৃষ্টি সিদ্ধান্তের কারণে অনেকটা স্বস্তির সাথেই বাজেট পাশ হয়। শেখ হাসিনা আবারও প্রমাণ করতে সক্ষম হন তিনি জনগণের মনের কথাটি ভালোভাবেই বুঝেন।muhit

এবারের বাজেট ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। ফলে বাজেটের আয় ও ব্যয় নিয়ে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকগণ শুরুতেই বিবিধ প্রশ্ন তোলেন। অনেকেই বাজেটকে উচ্চভিলাশী বলে অভিহিত করে সরকারের সমালোচনা করেন। তবে বাজেটের যে দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে খোদ সরকারি দল ও বিরোধী দলের সংসদগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সেটি হলো বাড়তি আবগারি শুল্ক এবং ভ্যাট আইনের প্রয়োগ। বাজেট পেশ করার পরপরই বাড়তি আবগারি শুল্কের বিষয়টি নিয়ে সোশাল মিডিয়াতে সরকার বিরোধী প্রচারণা যেনো তুঙ্গে উঠে। সর্বত্র এই মর্মে তথ্য ও যুক্তি দেওয়া হয় যে, যারা ব্যাংকে এক লক্ষের বেশি টাকা আমানত রাখবেন বছর অন্তে তারা সেই গচ্ছিত টাকার কম অর্থ ফেরত পাবেন। গণমাধ্যম এবং সোশাল মিডিয়াতে এনিয়ে ব্যাপক প্রচারণার মধ্যে দিয়ে আপামর জনগণের মাঝে একধরনের নেতিবাচকতা তৈরি হয়।

এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সংসদে নিজ দলের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাংসদ শেখ ফজলুল করীম সেলিম, মাহবুবুল আলম হানিফ, জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম এমপিসহ বেশ কয়েকজন এমপি এ বিষয়কে কেন্দ্র করে অর্থমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন। ২০ জুন সংসদে দাঁড়িয়ে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু এমপিসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য সরাসরি অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন। তবে আবগারি শুল্ক এবং ভ্যাট ইস্যুতে বাজেটের উপর চমৎকার আলোচনা উপস্থাপন করে আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ এমপি, আমীর হোসেন আমু এমপি, মোহাম্মদ নাসিম এমপি, জাসদের হাসানুল হক ইনু এমপিসহ আরো কেউ কেউ। শেষ পর্যন্ত সরকার আবগারি শুল্ক কমানো এবং ভ্যাট আইন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে জাতীয় সংসদে বাজেট পাশ হয়। এর আগে ২৮ জুন বুধবার জাতীয় সংসদে ব্যাংক আমানতের আবগারি শুল্কের প্রস্তাবে সংশোধনী আনা হয়।

তবে সংসদে বরাবরের মতো এবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাজেট পেশ করার পরপরই আবগারি শুল্ক, ভ্যাট আইন নিয়ে জনগণের মাঝে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভের জন্ম নেয় তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে তার পরিসমাপ্তি ঘটান। আর এ কারণেই বাজেট পাশ হওয়ার পর এ দুটি বিষয় নিয়ে আর কোনো ধরনের উচ্চবাচ্য হয়নি। বাজেট পরবর্তীতে সাধারণ জনগণের মাঝে কোনো অসন্তুষ্টিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বাজেট প্রস্তাবনায় যে আবগারি শুল্কের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সেটি শুধু প্রত্যাহার নয়, উল্টো আরও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক লক্ষ একটাকা থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আবগারি দিতে হবে মাত্র ১৫০ টাকা। যেটা প্রস্তাবিত বাজেটে ধার্য করা হয়েছিল ৮০০ টাকা যা আগে দিতে হতো ৫০০ টাকা। আবগারি শুল্ক কমানোর কারণে জনমনে ভর করা ভয়, আতঙ্ক, বিতর্ক সবকিছুর নিরসন হয়েছে।

ভ্যাট আইন স্থগিত নিয়ে বিশেষজ্ঞগণদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন এই বলে যে, কাঙ্খিত রাজস্ব আহরণে সরকার বড় ধরনের ঝুকিতে পড়বে। বিশ্ব ব্যাংকের এ দেশীয় প্রতিনিধিরাও প্রশ্ন তুলেছেন। তবে অর্থনীতিবিদদের একটি বড় অংশ আগেই থেকে এই অনুমান করেন যে প্রস্তাবিত ভ্যাট আইন পাশ হলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দ্রুতই বেড়ে যেতো এবং এটি হলে সাধারণ জনগণের মাঝে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হতো। আবগারি শুল্ক বাড়ানো এবং ভ্যাট আইন প্রয়োগের ঝুঁকিকে বিবেচনায় এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ জুন বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে কয়েকটি পরামর্শ দেন। আবগারি শুল্ক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ দেন এই বলে যে, আবগারি শুল্ক এক লাখ ১ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা করার এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত মোট তিনটি স্তরে আবগারি শুল্ক আদায় করার। একই সাথে ভ্যাট আইন আগামী দুই বছর পুরোপুরি কার্যকর না করে এখন যেমন আছে, সেভাবে রাখার জন্য অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন। এর আগে জোট সরকারের অন্যতম একজন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি ২২ জুন বৃহস্পতিবার সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে যেহেতু বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু এই আইনটি আপাতত স্থগিত করা হোক। একই সাথে তিনি ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক আমানত আবগারি শুল্ক মুক্ত করার প্রস্তাব দেন। এই একই ধরনের প্রস্তাব দেন আরও কিছু তরুণ সংসদ সদস্য।

একথা সত্যি যে বর্তমানে চাউলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে জনমনে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে এতে করে এখন যদি আবার নতুন করে অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যেতো তাহলে সরকারকে আসলেই বড় ধরনের বিপদে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হতো। ভোক্তা পর্যায়ে এক ধরনের বিস্ফোরণ তৈরি হতো। বিএনপিও এটিকে একটি রাজনৈতিক কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতো। সেই বিপদ অনেকে কামনা করলেও সরকার সেই ভুল পথে পা বাড়ায়নি। বরং শেখ হাসিনা সু-স্থিরভাবে জনগণের মনের কথার সাথে সাঁয় দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছেন।

আবগারি শুল্ক আর ভ্যাট আইন নিয়ে জনগণের মাঝে সত্যিই ভয় আর আতঙ্ক বাসা বাঁধতে শুরু করেছিল। আর এই সুযোগে বিষয়টি রাজনৈতিক পুঁজি করতে নড়েচড়ে বসেছিল বিএনপিও। কিন্তু শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্ত সব ভয় আর আতঙ্ককে দূর করেছে। সত্যিই সাধারণ জনগণের প্রতি আস্থা রেখে, জনগণের মনের দাবি মেনে নেওয়ায় প্রাণবন্ত সংসদ আর সাধারণ জনগণের কাছে জয়ী হয়েছেন তিনিই। এখন প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। আমাদের কণ্ঠস্ব-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?