নিজের জন্মদিন নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও ৬৯তম জন্মবার্ষিকীতে কেক কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন নিজের জন্মদিনের প্রথম প্রহরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কেক কেটে উদযাপন করে আসলেও অবশেষে আজ দিবাগত রাতে কেক কাটবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এ উপলক্ষে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যে বিএনপি নেত্রীর গুলশান কার্যালয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ সংগঠনগুলো পৃথকভাবে রাতে কেক নিয়ে সেখানে যাবেন।

এরই মধ্যে ছাত্রদল ৭০ পাউন্ড ওজনের কেক অর্ডার দিয়েছে। সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক শুক্রবার জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার রাতে তারা কেক নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে যাবেন।

শুক্রবার রাতে গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন। নিজের বাসা ফিরোজায় আছেন তিনি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে খালেদার ছোট দুই ভাইয়ের স্ত্রী নাসরিন সাঈদ ও কানিজ ফাতেমাসহ কয়েকজন আত্মীয় ওই বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে রাতের খাবার খান বলে নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে কেক কেটে ১৫ আগস্ট নিজের জন্মদিন উদযাপন করে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দেশব্যাপী নেতা-কর্মীরা তার জন্মদিন বেশ ঘটা করে পালন করে। তবে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু দিবসে খালেদা জিয়া ‘ভুয়া জন্মদিন’ পালন করছেন বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। তারা এই দিনে জন্মদিন পালন না করারও আহ্বান জানিয়ে আসছেন খালেদা জিয়াকে।

প্রতি বছর ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে একাধিক কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেন খালেদা জিয়া। গত বছরও গুলশান কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন তিনি।

বিএনপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট। তবে তার জন্মদিন ও সাল নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে।

খালেদা জিয়া পশ্চিম দিনাজপুরের (ভারতের জলপাইগুড়ি) এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার।

বিএনপির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯৬০ সালে দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন খালেদা খানম পুতুল। পরে দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে লেখাপড়া করেন তিনি। কলেজে পড়ার সময় ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন খালেদা।

জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার দুই সন্তান তারেক রহমান পিনু এবং আরাফাত রহমান কোকো। গত ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কোকো।

১৯৮১ সালের ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কিছু বিপৎগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হলে নেতা-কর্মীদের দাবির মুখে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সাত দলীয় জোটের নেত্রী হিসেবেও খালেদা জিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। ১৯৯১ সালের পর ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে কখনো প্রধানমন্ত্রী, কখনো বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি তার দল বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন খালেদা জিয়া ও তার দল।