বুধবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

আলাদা আদালত, দ্রুত বিচার, কড়া শাস্তি

এ মুহূর্তে কুমিল্লায় নিহত সোহাগী জাহান তনুর বাবা মায়ের মতো নির্যাতিত মানুষ কি আর আছে? তারা তাদের আদরের কন্যা হারিয়েছেন, আবার তাদেরই বারবার তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র‌্যাব, পুলিশ এবং সিআইডি। হয়তো আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্তের ধরণটিই এমন। যেতে হয়, তুলে নিতে হয় বারবার। কিন্তু এমন প্রক্রিয়ায় স্বজন হারানো পরিবারটির মানসিক অবস্থা কেমন হয়, সেটা কি ভাবা হয় একবারও?

দুই সপ্তাহ গেলেও রহস্য উদঘাটিত হয়নি এতটুকু। কবর থেকে তোলা হয়েছে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের জন্য। প্রথমটি তাহলে ভুল ছিল? যদি থাকে তাহলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কি হবে? এখনো একজন সন্তেহভাজন চিহ্নিত বা গ্রেপ্তার না হওয়ায়, প্রশ্ন উঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা নিয়ে। আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি। তাই প্রায় সব খুনের পর যেকোনো আলোচনায় এই ইস্যুটি সামনে চলে আসে। সাগর-রুনি হত্যার পাঁচ বছর হলো। একসময় তুমুল আন্দোলন হয়েছে। এখন চাপা পড়ে গেছে। ব্লগার-প্রকাশক খুন হয়েছেন। একটি ঘটনার অগ্রগতি নেই। ঘটনা ঘটার এক, দুই, তিন বা সাত দিনের মধ্যে কোনো ক্লু পাওয়া না গেলে পরে আর কিছু পাওয়া যায় না। ঘটনা কীভাবে ঘটলো, কারা ঘটালো এ সম্পর্কেও বিস্তারিত জানা যায়নি।

এই অবস্থাকে সবাই বলছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করছে কারণ রাষ্ট্রের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবক্ষয় হয়েছে ব্যাপকভাবে। সমাজে যখন এ রকম অবক্ষয় বা ধস নামে তখন প্রতিকার করা সম্ভব হয় না। সে অর্থে এটিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরেও বলা যায়। না হলে এতগুলো ঘটনার বেশির ভাগই বিচার কেন হয়নি, এমনকি অগ্রগতি পর্যন্ত নেই?

নারী ধর্ষণ, হত্যার বেশিরভাগ ঘটনায়ই পরিবারগুলোকে বিচার পেতে আদালতে এবং ঘরে-বাইরে অপমান, হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতিজ্ঞা থাকে অনেক, কিন্তু এ অবস্থা বদলায় না। বিচার পাওয়াও সহজ নয়। কেন নয়? বিচার করার আগ্রহ কম এই সমাজের? নাকি সিস্টেমটাই এমন যে এটা সম্ভব নয়? স্বয়ং প্রধান বিচারপতি যখন বলেন, বাংলাদেশের অনেক আইন সেকেলে হয়ে গেছে। পুরোনো ফৌজদারি আইন ও সেকেলে মানসিকতা দিয়ে তনু হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার সম্ভব নয়, তখন আশার জায়গা আর থাকে না। প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থার সঙ্গে প্রচলিত বিচারব্যবস্থার মিল নেই। এ জন্য বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রযুক্তি ও দুর্নীতি এমনভাবে বেড়ে গেছে, সেকেলে আইন ও মানসিকতা দিয়ে এগুলোর বিচার করা সম্ভব নয়। নতুন ডিজিটালাইজড পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেকেলে পদ্ধতির জন্য এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার করা সম্ভব হয়নি। আইন প্রণেতারা কি শুনবেন তার কথা?

এই যদি হয় পরিস্থিতি, তাহলে আমাদের গন্তব্য কোথায়? যে পরিবারের মেয়েটি বা নারীটি ধর্ষণ বা খুনের শিকার হয়, তাকেই বারবার নতুন করে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। প্রধান বিচারপতির কথায় একটি বিষয় পরিষ্কার অপরাধীরা অনেক আধুনিক হয়েছে, কিন্তু আইনের পরিবর্তন হয়নি, পরিকাঠামোগত অবস্থারও পরিবর্তন হয়নি।

সমাজের কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মহিলাদের সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু তাতে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখনো অনেকটাই অপরিবর্তিত। নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আছে। এই আইনে ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু পাচার, অপহরণ এবং যৌতুক ইত্যাদি অপরাধগুলোর আইনগত সংজ্ঞা এবং শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে।

কিন্তু তারপরও বিচার হচ্ছে কতটুকু? আইন আছে, দরকার দ্রুততর কোনো কিছু। শুধু মেয়েদের ওপর হিংসার অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কয়েক বছর আগে ফাস্ট ট্র্যাক আদালত তৈরির অনুমোদন দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। আমাদের কি এমন একটা কিছু ভাবা যায়? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা আর আন্তরিকতার পাশাপাশি নারী নির্যাতনের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি মানূষকে আশা ভরসা দিতে পারে।

তনু হত্যার পর থেকে চলছে দায়ী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে কিক্ষোভ। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করলেই সমস্যার সমাধান হয় না। দরকার মামলার দ্রুত ফয়সালা করা। কিন্তু পরিকাঠামোর সমস্যার জন্য দেরি হতে থাকে। আর তাতেই অভিযোগকারীর ওপর চাপ বাড়তে থাকে।

তনু হত্যার বিচারের দাবিতে যখন দেশজুড়ে প্রতিবাদ, তখন জানা গেল চলন্ত বাসে এক পোশাক কর্মীকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে টা্ঙ্গাঈলে। পুলিশ অবশ্য খুব দ্রুততার সাথে তিনজনকে আটক করেছে। এখন প্রশ্ন হলো এর বিচার হতে কতদিন লাগবে? অনন্তকালের অপেক্ষা। এর মধ্যে নির্যাতিতাকে আদালতে হাজিরা দেয়ার যন্ত্রণা সইতে হবে কতবার? তাই শুধু ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের বিচারের জন্যই ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গঠন এখন বিশেষভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

আমাদের পদ্ধতিগত জটিলতা অনেক বেশি। এফআইআর দায়ের করাই একটি মেয়ের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। আজকাল আবার কোন ঘটনা ঘটলে শুরু হয় ঘটনাস্থল কোন থানায় ঘটেছে তা নিয়ে টানাহেচড়া। এ থানা ও ও থানা করতে করতে গিয়ে বিচার চাইবার পথ থেকেই সরে যায় অনেক মানুষ। অভিযোগ না নিলে পুলিশের শাস্তি হয় না। ঠিক সময়ে পাঠানো হয় না মেডিক্যাল পরীক্ষায়। আবার প্রসিকিউশন সিস্টেম অনেক সময় দক্ষতার সাথে কাজ না করলে পুলিশের কাছেও খালি হাতে যুদ্ধ করার মতো ব্যাপার দাঁড়িয়ে যায়। সবকিছু মিলিয়ে একটা নতুন ভাবনা দরকার নারী ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতের মামলাগুলো নিয়ে।

সরকার ভাবতে পারে শুধু মহিলাদের জন্যই আদালত করা যায় কিনা। এবং সেই আদালতে বিচারব্যবস্থা পরিচালনা করবে মহিলারাই, যাতে নির্যাতিতা মহিলাদের পক্ষে আদালতে নিজেদের কথা বলতে পারে অনেক সাহস করে, অনেক বিশ্বাস করে।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?