ইসলামের আলোকে ধর্মীয় সহাবস্থান
৪১. বলে দাও, ‘আমার কাজের দায়িত্ব আমার এবং তোমাদের কাজের দায়িত্ব তোমাদের। আমি যা করি সে বিষয়ে তোমরা দায়মুক্ত এবং তোমরা যা করো সে বিষয়ে আমিও দায়মুক্ত।’ [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৪১ (শেষাংশ)]
তাফসির : এই আয়াতের প্রথম অংশে অবিশ্বাসীদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হতে নিষেধ করা হয়েছিল। আয়াতের এই অংশে তাদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। নবী, রাসুল ও তাঁদের প্রতিনিধিদের দায়িত্ব হলো অবিশ্বাসীদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। তাঁদের দায়িত্ব হচ্ছে পথ প্রদর্শন করা। কাউকে জোর করে ধর্মান্তর করা তাঁদের দায়িত্ব নয়। ইসলাম ব্যক্তিগত দায়দায়িত্বে বিশ্বাস করে। কোনো একজনের কর্মের জন্য অন্যজন দায়ী নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি উপদেশ দাও, তুমি তো একজন উপদেশদাতা। তুমি তাদের কর্ম নিয়ন্ত্রক নও।’ (সুরা গাশিয়া : ২১-২২)
ইসলাম ও ধর্মীয় সহাবস্থান
কোরআনের ঘোষণা মতে, একসময় পৃথিবীতে কোনো ধর্মীয় বিভাজন ছিল না। সব মানুষ এক আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল। পরে মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়ে। ধর্মীয় এই বিভক্তির মীমাংসা পরকালে হবে বলে কোরআনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দুনিয়ায় এই বিভক্তি দূর করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই দুনিয়ার জীবনে ধর্মীয় সহাবস্থানের বিকল্প নেই। ধর্মীয় সহাবস্থানের বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই ইতিবাচক। ইসলাম গোটা মানবজাতিকে ‘উম্মতে ওয়াহিদা’ তথা এক সম্প্রদায় হিসেবে গণ্য করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলাকে ‘রাব্বুল আলামিন’ তথা বিশ্বজাহানের পালনকর্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই তিনি মুসলিম-অমুসলিম সবার প্রতিপালক। একইভাবে ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা গোটা বিশ্বজগতের জন্য করুণার মূর্তপ্রতীক বলা হয়েছে। অনুরূপ মহাগ্রন্থ আল-কোরআনকে ‘হুদাল্লিন্নাস’ তথা গোটা মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই মুসলিম-অমুসলিম-নির্বিশেষে একই দেশে বসবাসের ব্যাপারে ইসলামের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
ঐতিহাসিকভাবে ইসলামে অমুসলিমদের প্রতি ইনসাফের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। মদিনার ইহুদিরা সব সময় ইসলামের বিরোধিতা করত, তথাপি রাসুল (সা.) তাদের ধর্ম পালনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি। একবার মদিনার মসজিদে বসে নবী করিম (সা.) নাজরান থেকে আগত একটি খ্রিস্টান প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। আলোচনার বিরতিতে তারা নিজ ধর্ম অনুসারে প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলে নবী করিম (সা.) তাদের মদিনার মসজিদে প্রার্থনা করার অনুমতি দেন। (ফুতুহুল বুলদান, পৃ. ৭১)
মহানবী (সা.) মদিনায় যখন একটি নতুন রাষ্ট্র স্থাপন করেন, তার ভিত্তি ছিল ‘মদিনা সনদ’। এই সনদের একটি ধারা হলো, সব ধর্মের লোকেরা স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
ইসলাম শান্তি, সাম্য, উদারতা ও মানবিকতার ধর্ম। তাই অমুসলিম ও সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম কঠোর নির্দেশ জারি করেছে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে, সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না; অথচ জান্নাতের সুগন্ধি ৪০ বছরের দূরত্বে অবস্থান করেও অনুভব করা যাবে।’ (সহিহ বুখারি : ৬/২৫৩৩)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ধর্মের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেনি, স্বদেশ থেকে যারা তোমাদের উচ্ছেদ করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)
ইসলামের দৃষ্টিতে অমুসলিম নাগরিকের ওপর জুলুম করা মুসলমানের ওপর জুলুম করার চেয়েও বেশি মারাত্মক। কেননা তার মৃত্যুর পর তার কাছ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তির কোনো আশা নেই।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন