ইসলামে শ্রমের মর্যাদা ও শ্রমিকের অধিকার
আল্লাহর এ সৃষ্টিকুলের অফুরন্ত নেয়ামতরাজিকে মানুষের ব্যবহারোপযোগী করার পেছনে শ্রমের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সভ্যতার চোখ ধাঁধানো অগ্রগতির নেপথ্যে কাজ করছে শ্রম। আমরা দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে শ্রমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে থাকি। মানুষ সুউচ্চ মনোরম অট্টালিকায় বাস করে আয়েশ করার পেছনে রয়েছে একদল শ্রমিকের ঘাম ঝরানো ক্লেশ। কিন্তু তারা এ আরামের বিন্দুমাত্রও উপভোগ করতে পারেন না। রাসুল (সা.) শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষকে অত্যন্ত সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন। কারণ যারা সৃষ্টির কল্যাণের জন্য নিজেদের তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়, তারা আল্লাহর কাছেও মর্যাদার অধিকারী। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এর চেয়ে উত্তম খাদ্য আর নেই, যা মানুষ স্বহস্তে উপার্জনের মাধ্যমে করে। হজরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন।’
ইসলাম শ্রমকে যেমন মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে, তেমনি শ্রমিকের অধিকার আদায়ের ব্যাপারেও ইসলামে রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব। পৃথিবীতে যত ধর্ম ও মতবাদ রয়েছে, তার মধ্যে ইসলাম শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের অধীনস্থ ব্যক্তিদের আপন সন্তানদের মতো স্নেহ-সমীহ করো। আর নিজেরা যা খাও তাদেরও তাই খাওয়াও।’ অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ শ্রমিকের মজুরি যথাযথ আদায় না করার পরিণতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ কেয়ামতের দিন আমার মমতাময়ী আশ্রয় থেকে সেই ব্যক্তি বঞ্চিত হবে যে কোনো শ্রমিককে নির্ধারিত পারিশ্রমিক দেয়ার চুক্তিতে নিয়োগ করে, অতঃপর তার কাছ থেকে পূর্ণ শ্রম ও কাজ আদায় করে নেয়, কিন্তু তাকে (পূর্ণ) পারিশ্রমিক দেয় না।’
শ্রমিকের অধিকার আদায়ে ইসলামের নীতিমালা হলো_ শ্রমজীবী মানুষকে রাসুল (সা.) মালিক-পুঁজিপতিদের ভাই বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাই সমাজে সে ততটুকু পদমর্যাদা ও সম্মান পাবে, যা সমাজের অন্য সদস্যরা পেয়ে থাকে। পেশার কারণে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করা যাবে না। শ্রমিক যে প্রতিষ্ঠান বা মালিকের কাজ করবে তার ওপর দায়িত্ব হচ্ছে ওই শ্রমিকের মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করা। কোনো শ্রমিকের ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেয়া যাবে না। কাজ শেষ হলে পারিশ্রমিক আদায়ে কোনো ধরনের গড়িমসি করা চলবে না। একজন শ্রমিক ইচ্ছা করলে মালিকের সঙ্গে মূলধনে শরিক হতে পারবে।
বর্তমান বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে চলছে বিরোধ এবং সংঘাত। মালিক শ্রেণি চায় কীভাবে শ্রমিকদের বেশি কাজ করিয়ে কম পারিশ্রমিক দেয়া যায়। পক্ষান্তরে শ্রমিকরা চায় ঠিকমতো কাজ না করেই পূর্ণ মজুরি আদায় করে নিতে। উভয় শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মনোভাবের ফলে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে দূরত্বের। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত পুঁজিবাদী মতাদর্শে শ্রমিক শ্রেণি গোলামের সমতুল্য। তাদের সঙ্গে খুব ভালো আচরণের প্রয়োজন নেই। অপরদিকে সমাজতন্ত্র শ্রমিকদের একটি কলের সঙ্গে তুলনা করে থাকে। তাদের মতে, শ্রমিকের দায়িত্ব শুধু কাজ করে যাওয়া। লাভ-ক্ষতি নিয়ে মাথা ঘামানো শ্রমিকের দায়িত্ব নয়। কিন্তু ইসলাম এ দুই শ্রেণির মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে সুন্দর পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। একদিকে মালিক পক্ষকে বলা হয়েছে, শ্রমজীবী মানুষ তোমাদের ভাই, সুতরাং তোমরা তাদের সঙ্গে ভাইসুলভ আচরণ কর। অন্যদিকে শ্রমিকদের তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিকমতো পালন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এতে উভয়ের মধ্যে সুমধুর সম্পর্ক বিরাজ করবে। এজন্য শ্রমিকদের অধিকার স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইসলামি শ্রমনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবাইকে ফিরতে হবে ইসলামের দিকে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন