শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

ইসিবি’র সবুজ সংকেত, লাল-সবুজের বিজয়

পুরোদস্তুর অনিশ্চয়তা থেকে আচমকা স্বস্তির পরশ। যা চলে যাচ্ছিলো বাতিলের খাতায়, তাই শেষ পর্যন্ত ফিরে এলো সুসংবাদ হয়ে। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল, নিশ্চিত করেছে ইসিবি। তিন ওডিআই আর দুই টেস্টের সিরিজ। ৭ অক্টোবর ঢাকার হোম অফ ক্রিকেটে শুরু ওয়ানডে’তে, ২৮ অক্টোবর-১ নভেম্বর একই ভেন্যুতে শেষ টেস্ট ম্যাচ দিয়ে।

মাসখানেকের লম্বা সফর, ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামেও ম্যাচ। ক্রিকেট দুনিয়ার দুই অভিজাত মোড়ল অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের পাক-ভারত উপমহাদেশের কোন দেশে খেলতে আসা মানেই মেজবানের কাঁধে শতেক হ্যাপা। নিরাপত্তা ছাড়াও পরিবেশ, খেলোয়াড়দের থাকা-খাওয়া, চলাচলের বন্দোবস্ত নিয়ে মেহমানের লম্বা ফর্দ অনুসরণ করতে গিয়ে মেজবানের জীবন ওষ্ঠাগত। যেমন এবারো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মাথার উপর ছিলো শংকার মেঘ।

জুলাইয়ের প্রথম দিন গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তেরায় জঙ্গি হামলায় দেশী-বিদেশীদের নিহত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ফেলে দিয়েছিলো একঘরে হওয়ার শংকায়। এমনকি ইসিবি’র পর্যবেক্ষক দল নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এসে দরাজ প্রশংসা করলেও, দেশে ফিরে তাদের বক্তব্য একশো আশি ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরিয়ে দেন। ক্রিকেটারদের সাথে আলাপ করে শেষ পর্যন্ত ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড সবুজ সংকেত দিয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য সিরিজ জয়ের আগেই ভিন্ন এক বিজয় ।

রাজনৈতিক অস্থিরতা,সন্ত্রাস কিংবা জঙ্গীবাদ বাংলাদেশকে যতই বিব্রত করুক, এদেশের ক্রিকেট যে সেই সব প্রতিকূলতার উর্ধ্বে তা জানে সারা দুনিয়া । এদেশে টাইগারদের বিজয় মিছিলে একাত্ম হয়ে আনন্দ করে সব মত ও পথের মানুষ। রাজনীতি, অপরাজনীতি কিংবা আর্দশিক দ্বন্দ্ব’র অশুভ আবহ উবে যায় মাশরাফি-মুস্তাফিজ, সাকিব-তামিমদের সাফল্যে। ক্রিকেট দুনিয়ার কোন কোন মোড়ল তা জানলেও মানেনা।

ইসিবি’র এই সবুজ সংকেত শুধু ইংলিশদের বিরুদ্ধেই নয়, ক্রিকেটের আরেক মোড়ল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও বিজয়। এ যেন ব্যাটের এক স্ট্রোক-প্লে’তে বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারি হাঁকানোর যুগল আনন্দ! গত অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়া সফর বর্জন করে বাংলাদেশকে কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলতে চেয়েছিলো। ২০১৬’র জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ১৬ জাতি ও ৪৮ ম্যাচের অনুর্ধ্ব-১৯ আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজন করে সেই চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই উতরেছে বাংলাদেশ। আশা করা যায় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইংল্যান্ড সিরিজ নিরাপদ ও চমৎকার আয়োজন দিয়ে আরো একবার বিজয়ী হবে আইসিসি’র সব ফরম্যাটের বৈশ্বিক ক্রিকেট আসর বসাতে দুর্দান্ত সাফল্য পাওয়া বাংলাদেশ ও তার জনগন।

তবে ইসিবি’র এই সবুজ সংকেতেও পুরোপুরি আন্তরিকতা আছে তা বলা যাচ্ছেনা। ইসিবি’র সবুজ সংকেতের আগেই ইংল্যান্ডের ওয়ানডে অধিনায়ক ইয়ুয়িন মরগ্যান জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ সফরে কোন ক্রিকেটারের আসা না আসা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, চাইলে যে কেউই নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেন। লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফের বিখ্যাত ক্রিকেট লিখিয়ে শিল্ড বেরি লিখেছেন, ক’জন ক্রিকেটার এই সফরে যেতে রাজী হবে তা নিশ্চিত নয়।

নানা অজুহাতে ইংলিশ, কিউই, সাউথ আফ্রিকান কিংবা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের দেশের হয়ে উপমহাদেশে অনুষ্ঠেয় সিরিজ বর্জন করার ঘটনা নতুন নয়। এবারো তেমন কিছু ঘটবেনা তা বলা যাচ্ছেনা। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, আইসিসি’র নতজানু নীতি সবচেয়ে বেশী দায়ী। অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর বাতিল করলেও, ফিফার চোখ রাঙ্গানিতে সেদেশের ফুটবল দলকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে’র ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশে আসতে হয়েছে। সকারু’রা বাংলাদেশ পর্ব এড়াতে পারেনি ফিফা’র ভয়ে। কিন্তু আইসিসি এমনই এক নখদন্তহীন বাঘ যাকে নিয়মিত বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পারে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড।

আবার বাণিজ্যিক স্বার্থহানির আশংকায় শুধু আইসিসি নয়, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড’কে কুর্নিশ করে অভ্যস্থ ইসিবি ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। উপমহাদেশীয় ক্রিকেট ভেন্যু’র নিরাপত্তা ইস্যু যে কতটা সুবিধাবাদিতা তা পরিস্কার অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা কিংবা নিউজিল্যান্ড’র ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার আম্পায়ারদের দু’মুখো আচরণে। জাতীয় দলের হয়ে উপমহাদেশে খেলতে প্রায়ই গাইগুই করে মেজবানকে বিব্রত করেন মরগ্যান, স্টিফেন স্মিথ, ওয়ার্ন, গিলক্রিস্ট, ক্রিস গেইল কিংবা আম্পায়ার সায়মন টোফেল’রা।

এদেরই আরেক রূপ আইপিএল কিংবা বিপিএল’র আসরে। ডলার-পাউন্ডের লোভে এরাই আবার উপমহাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুঃসহ গরম’কে উপেক্ষা করে দিনের পর দিন খেলে যায় টানা ক্রিকেট। কেউ কেউ উপমহাদেশীয় পোষাক পরে দর্শক মনোরঞ্জনে সর্বস্ব উজার করে দেয়। বাংলাদেশ সফরে নিরাপত্তা নিয়ে শংকা থাকলেও এবছর বিপিএল ও ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে বিভিন্ন ক্লাব ও ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে খেলে গেছেন রাভি বোপারা, ক্রিস জর্ডান, ড্যারেন স্টিভেন্স, জসুয়া কব, মঈন আলি’র মতো ইংলিশ,  ব্র্যাড হজ’র মতো অস্ট্রেলিয়ান এবং ডি-কক ও রবিন পিটারসেনের মতো সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটার। মিকি আর্থার, গ্রাহাম ফোর্ড, শেন জার্গেনসনের মতো কোচরা কোচিং করিয়েছেন ক্লাব আর ফ্রাঞ্চাইজির দেয়া ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।

শেষ করার আগে একটি ধারণার কথা শেয়ার করি। বাংলাদেশ সফরে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের সম্মতি’র পেছনে থাকতে পারে অনেক হিসাব-নিকাশ। বাংলাদেশ সফর শেষ করে নভেম্বরে ভারত সফরে যাবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো নয় বলেই ইসিবি’র নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল এ মাসে ভারত ও বাংলাদেশ সফর করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে না বলে দিলে ইসিবি’র পক্ষে ভারত সফরের যৌক্তিকতা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যেতো।

আর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে চটানো যে আর্থিক দিক দিয়ে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা সেই বিবেচনাবোধ ইংলিশদের সবার চেয়ে বেশীই আছে। সেক্ষেত্রে আগামী জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠেয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বর্জনের হুমকিও দিতে পারতো ভারত। সেই বর্জনের ডাকে ভারতের পাশে যদি বাংলাদেশও দাঁড়িয়ে যায় তাহলে নির্ঘাৎ আর্থিক ক্ষতির আশংকা।

ব্রিটেন ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোতে বসবাসকারি বাংলাদেশীর সংখ্যা কয়েক লাখ, যাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রিয় দলের ম্যাচ দেখতে হাজির হবে গ্যলারিতে। এদের হারানোও কম ক্ষতির নয়। এই সব হিসাব করেই হয়তো ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাজি হয়েছে। মাঠের পারফরম্যান্সে নিজেদের বাণিজ্যিক মূল্য বাড়িয়েই ‘টিম-টাইগার্স’কে’ টিকে থাকতে হবে ক্রিকেটের স্বার্থপর দুনিয়ায়। এভাবেই হয়তো একসময় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারতের মতো মোড়লদের সঙ্গে সমমর্যাদায় বাংলাদেশ প্রভাবশালী ও মাঠের পারফরম্যান্সে সফর ক্রিকেট জাতিতে পরিণত হবে।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?