রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

এক হৃদয়স্পর্শী হজের গল্প

হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সাঈদ জেদ্দাহ এয়ারপোর্টের ওয়েটিংরুমে বসে ছিলেন। তার পাশে আরো একজন ছিলেন, তিনিও হজ সম্পন্ন করেছেন।
মানুষটি বললেন, আমি একজন ঠিকাদার হিসেবে কাজ করি এবং আল্লাহ আমাকে ১০তম হজ পালন করার সৌভাগ্য দিয়েছেন। সাঈদ বললেন, হজ মাবরুর! আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন এবং গুনাহ সমূহ ক্ষমা করুন।

মানুষটি মুচকি হাসলেন এবং বললেন আমিন। এরপর বললেন , আপনি কি এর আগে হজ করেছেন?
সাঈদ বলতে ইতস্ততঃ করলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন, ওয়াল্লাহি! এটা অনেক দীর্ঘ গল্প। আমি চাইনা আমার কথায় আপনার মাথা ব্যাথা হোক! লোকটি বললেন, দয়া করে আমাকে বলুন, আমাদের এখন কিছুই করার নেই, আমরা শুধুই অপেক্ষা করছি।
সাঈদ হাসলেন, বললেন “হ্যা, অপেক্ষা দিয়েই আমার গল্পের শুরু!
হজে যাবার জন্য আমি অনেক বছর যাবত অপেক্ষা করছিলাম। ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে ৩০ বছর একটা প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করার পর আমি হজের জন্য যথেষ্ট টাকা জমাতে পেরেছিলাম। যেদিন আমি টাকা তুলতে গিয়েছিলাম সেইদিনই হঠাৎ এক মায়ের দেখা পেলাম যার প্যারালাইজড সন্তানের চিকিৎসা আমি করেছিলাম।আমি তার মুখে চিন্তার ছাপ দেখতে পাচ্ছিলাম।
তিনি বললেন, ‘আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুন ভাই সাঈদ। এটা আমাদের হাসপাতালে শেষদিন।’
আমি তার কথা শুনে অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তিনি আমার চিকিৎসায় খুশি নন।তাই তিনি তার সন্তানকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
মহিলাটি বললেন, ‘না ভাই সাঈদ, আল্লাহ সাক্ষী যে আপনি আমার ছেলের সাথে পিতার মত আচরণ করেছেন এবং চিকিৎসা দিয়ে তাকে সাহায্য করেছেন যখন আমরা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’
এরপর তিনি বিষন্নভাবে চলে গেলেন।
পাশে থাকা মানুষটি কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বললেন, ‘ব্যাপারটা অদ্ভুত! যদি তিনি আপনার চিকিৎসায় সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন আর তার ছেলের উন্নতিও হচ্ছিল, তবে কেন তিনি চলে গিয়েছিলেন? সাঈদ বললেন, সেটা আমিও ভেবেছিলাম।তাই কি ঘটেছে তা জানার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে বলেছিল যে ছেলেটার বাবার চাকরি চলে গিয়েছিল, তাই তার ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাতে পারছিলেন না।’
পাশে বসা মানুষটি বললেন, আল্লাহ ছাড়া কারো কোন শক্তি,সামর্থ্য নেই। তাদের কত দুর্ভোগ! আপনি কিভাবে ব্যাপারটার গতি করেছিলেন? সাঈদ বললেন, আমি ম্যানেজারের কাছে গেলাম এবং হাসপাতালের খরচে ছেলেটার চিকিৎসা করাতে যুক্তিতর্ক করলাম।কিন্তু সে তৎক্ষণাৎ সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল এবং বলল, ‘এটা একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান, দাতব্য সংস্থা না।’ আমি পরিবারটির জন্য দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে অফিস ত্যাগ করলাম।
তখন হঠাত আমার পকেটে হাত রাখলাম, সেখানে আমার হজের জন্য প্রস্তুতকৃত টাকাগুলো ছিল। আমি আমার জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ালাম তারপর মাথা উপরের দিকে তুলে আমার রবকে বললাম, ‘ও আল্লাহ! আপনি জানেন আমি কেমন অনুভব করছি! আপনার ঘরে যাওয়া ও হজ করা এবং আপনার রাসূলের মসজিদে যাওয়ার চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয় কিছুই নেই। আপনি জানেন আমি সারাটি জীবন এই মূহূর্তের জন্য কাজ করেছি।কিন্তু আমি এই দরিদ্র মহিলা ও তার সন্তানকে নিজের উপর প্রাধান্য দিচ্ছি।তাই আপনার অনুগ্রহ থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না।’ আমি হিসাবের ডেস্কে গেলাম এবং ছেলেটার চিকিৎসার জন্য আমার কাছে থাকা সমস্ত টাকা দিয়ে দিলাম।যা পরবর্তী ছয়মাসের জন্য যথেষ্ট ছিল। আমি হিসাবরক্ষককে অনুনয় করে বললাম যেন মহিলাটিকে বলা হয়, বিশেষ অবস্থার কারণে চিকিৎসার খরচ হাসপাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে।
হিসাবরক্ষক এর দ্বারা প্রভাবিত হলেন, তার চোখে পানি এসে গেল। বললেন ‘বারাক আল্লাহ ফিক।’ পাশে বসা মানুষটি বললেন, আপনি যদি আপনার সমস্ত টাকা দান করে থাকেন,তাহলে আপনি কিভাবে হজে এলেন?
সাঈদ বললেন, সেদিন বিষন্ন মনে ঘরে ফিরে এলাম, হজ্জে যাওয়ার সুযোগ হারানোর কারনে। কিন্ত আমার মন আনন্দে ভরে উঠেছিল এই কারনে যে আমি এক মহিলা ও তার সন্তানের দুঃখ দূর করেছিলাম।
আমি সেই রাতে ঘুমাতে গেলাম অশ্রুসিক্ত অবস্থায়। স্বপ্নে দেখলাম আমি কাবা ঘর তাওয়াফ করছি এবং মানুষেরা আমাকে সালাম দিচ্ছিল। তারা আমাকে বলেছিল, ‘হজ মাবরুর, হে সাঈদ! কারন তুমি পৃথিবীতে হজ্জ করার আগেই নভোমণ্ডলে হজ করেছ।’
আমি তাৎক্ষণিকভাবে জেগে উঠলাম এবং অবর্ণনীয় আনন্দ অনুভব করলাম।সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রশংসা করলাম এবং তার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ছিলাম।
যখন ঘুম থেকে জেগে উঠলাম আমার ফোন বেজে উঠল।হাসপাতালের ম্যানেজার ফোনেটি করেছিলেন।
তিনি আমাকে বললেন, ‘ হাসপাতালের মালিক এ বছর হজ্জে যেতে চাচ্ছেন এবং তিনি ব্যক্তিগত থেরাপিস্ট ছাড়া সেখানে যাবেন না। কিন্তু তার থেরাপিস্টের স্ত্রী গর্ভবতী এবং তিনি গর্ভাবস্থার অন্তিম পর্যায়ে পৌছেছেন। তাই সে তার স্ত্রীকে ছেড়ে যেতে পারে না।’
আপনি কি আমার একটা উপকার করবেন?
আপনি কি তাকে তার হজ্জে সংগ দিতে পারেন?
আমি শুকরিয়ার সিজদা করলাম। আপনি যেমন দেখছেন, আল্লাহ তার ঘরে যাওয়ার জন্য আমাকে কবুল করলেন কোন অর্থব্যয় ছাড়া।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী আমাকে কিছু দিতে জিদ করলেন। আমি তখন তাকে সেই মহিলা আর তার ছেলের গল্প তাকে শুনালাম।
তিনি নিজ খরচে ছেলেটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চাইলেন।আর নিঃস রোগীদের জন্য হাসপাতালে একটা দানবাক্সের কথা ভাবলেন। তার উপর তিনি ছেলেটির বাবাকে তারই একটা কোম্পানিতে চাকরি দিয়েছিলেন।
এমনকি তিনি সে টাকাগুলোও ফেরত দিয়েছিলেন যা আমি ছেলেটার চিকিৎসার জন্য দিয়েছিলাম। আপনি কি আমার রবের অনুগ্রহের চেয়ে বড় অনুগ্রহ আর দেখেছেন? সুবহানআল্লাহ!
পাশে বসা মানুষটি তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন আমি কখনো আজকের মত লজ্জা অনুভব করিনি। আমি একবছর অন্তর হজ পালন করতাম আর ভাবতাম আমি মহৎ কোন কাজ করছি। আর ফলাফলস্বরূপ আল্লাহর কাছে আমার অবস্থান উন্নত হবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আপনার হজ আমার হাজার হজ্জের সমতুল্য।
আমি আল্লাহর ঘরে গিয়েছিলাম, কিন্তু আল্লাহ তার ঘরে আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন। আল্লাহ আপনার হজ কবুল করুন!

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?