এ হার তো মনিহার
৫ দিনের খেলায় মাত্র ২২ রানে জিতে দুই টেস্টের সিরিজে এগিয়ে গেল অ্যালিস্টার কুকের দল। বলা যায়, রিভিউ রিভার্স সুইংকে পুঁজি করে এ যাত্রায় বেঁচে গেল ইংল্যান্ড। দর্শকের সারি থেকে এটাই উপলব্ধি আমার।
এখন খেলা আর খেলা হয়না। খেলা হয়ে যায় যুদ্ধ। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে এটাই আমার মনে হয়েছে বারবার। মনে হয়েছে যেকোন প্রকারেই যেন জিততে চাইছে ইংল্যান্ড। হ্যাঁ, জয় তাদেরই হলো বটে।তবে টাইগার যে সত্যিকারেরই বাঘ, এটা টের পেয়েছে হাড়ে হাড়ে।বাংলাদেশের জন্য সমীহ আদায়ের মতো অর্জন এসেছে এ টেস্ট ম্যাচ থেকে। তাই এই হার কে হার বলবো না আমি, বলবো এ হার তো মনিহার।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেছনের ইতিহাসটা মোটেই সুখকর নয়। সাড়ে ১৪ মাস পর যারা টেস্ট খেলতে নামল, তারা কতখানি সামর্থ তা আর বলার প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশের বোলারদের ২০ উইকেট পাওয়ার সামর্থ্য নিয়েও যেখানে সংশয়ে স্বয়ং কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে। তারপরও টাইগাররা যা দেখাল, তাতে সারা বছর ধরে টেস্ট খেলুড়েরা রীতিমত হিমশিম খেল। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে দুইবার অলআউট করে নিজেদের শক্তিটা দেখিয়েছেন সাকিব আল হাসান-মেহেদী হাসান মিরাজরা। টেস্টে নিজের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটসহ মোট ৭ উইকেট নেন মিরাজ । দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট নেন সাকিবও। আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল নেন চার উইকেট। এই অর্জন কী কোনভাবে ফেলে দেওয়ার মতো? মোটেই হতে পারে না।
টাইগাররা এতটাই ভাল খেললেন যে সমস্ত বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করে তুলেছিল। স্টেডিয়ামের দিকে টেস্টের শেষদিনে চোখ পড়েছিল সবার।কিন্তু শেষ ইনিংসে ২৮৬ রান তাড়ার প্রায় অসম্ভব লক্ষ্যকে ছোঁয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ। সাব্বির পারলেন না অভিষেকেই অসাধারণ জয়ের মহানায়ক হতে । ৬৪ রানে অপরাজিত সাব্বির হতাশায় বসে পড়লেন । হঠাৎ যেন পুরো বাংলাদেশ স্থবির হয়ে পড়ল।
পঞ্চম দিনে সাব্বিরের ওপর ভর করে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ শুরুটাও ভাল ছিল । স্নায়ুর চাপ না থাকার কারণ নেই। কিন্তু ব্যাটিং আর শরীরী ভাষায় সেটির প্রভাব শুরুতে দেখা যায়নি। তাইজুল একটি চার পেলেন ব্যাটের ওপরের কাণায় লেগে কিপারের ওপর দিয়ে। বাংলাদেশ গেল একটু এগিয়ে। ৮০ ওভার পরও নতুন বল নিল না ইংল্যান্ড রিভার্স সুইংয়ের আশায়। সেই রিভার্স সুইংই জেতাল তাদের। ৮১তম ওভারের শেষ বলে তাইজুলের সিঙ্গেলের ডাকে সাড়া দিলেন সাব্বির। সিঙ্গেলটা না নিলে হয়ত ইতিহাস অন্যরকমও হতে পারত। কিন্ত পরের গোটা একটি ওভার স্টোকসে শেষ হলো দুই ব্যাটসম্যান! অস্ত্র সেই রিভার্স সুইং। সেই সঙ্গে শেষ হলো বাংলাদেশের জেগে ওঠা স্বপ্নটিও।
এই রিভার্স সুইংয়ের আশাতেই ৮০ ওভার পরও নতুন বল নেয়নি ইংল্যান্ড। সেই রিভার্স সুইংই জেতাল তাদের। হয়ত এটাও এক দুর্ভাগ্য। এমন লড়াইয়ে ভাগ্যকেও পাশে পাওয়া লাগে। কিছুটা দুর্ভাগ্য, কিছুটা আম্পায়ারের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত, কিছুটা ডিআরএস নিয়ে ভ্রান্তি; যে ভ্রান্তি রিভিউ পদ্ধতি নিয়ে এতদিন ধরে চলা প্রশ্নটাকে বাংলাদেশি সমর্থকদের মনেও গেঁথে দিয়েছে। আর সবচেয়ে বড় ভুল হয়তো নিজেদের রণকৌশলেই। সব মিলিয়ে ২ উইকেট হাতে রেখে ৩৩-এর সমীকরণ মিলিয়ে দেওয়া গেল না।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক ম্যাচ শেষে বললেন, ‘এটা সত্যিই বেশ দারুণ একটি ম্যাচ ছিল। আমাদেরকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত মাঠে লড়াই করতে হয়েছে। এটা বেশ কঠিন একটি ম্যাচ ছিল।’
টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বললেন, ‘সম্ভবত এই ম্যাচটি আমাদের পক্ষে ছিল না। ৩৩ রানের জন্য হাতে ছিল মাত্র দুটি উইকেট। তবে আমাদের খেলোয়াড়রা পুরো পাঁচ দিনে ম্যাচ নিজেদের অনুকূলে নিতে বেশ খেলেছে। ১৫ মাস পর এ ধরনের ম্যাচ নিয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।’
এত কাছে গিয়েও টেস্ট হারা! এত দিন পর খেলতে নামা দলটার কাছ থেকে কেউ হয়তো এত লড়াই আশা করেনি। খোদ কোচ হাথুরু নিজেও ভাবেননি দল জয়ের মতো অবস্থায় থাকবে। সাড়ে ১৪ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দেওয়াটাও কম কিসের!
লেখকঃ শাহ মতিন টিপু
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন