কারও কাছে তিনি গাছবাবা, কারও কাছে বেতাল বাবা, গাছের কোটরেই টানা ১৬ বছর ধরে সংসার..
কারও কাছে তিনি গাছবাবা আবার কারও কাছে বেতাল বাবা। এইসব নামগুলো এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে তার আড়ালে আসল নামটাই হারিয়ে গেছে বয়স ৪৫ বছরের মানুষটির। আসল নাম হল জিগার লোহার। তিনি কোনও ফরেস্ট রেঞ্জার বা বন দপ্তরের কোনও কর্মী নন। গাছের উপরেই তার সংসার।
গাছের উপর থেকেই তিনি দেখেছেন বণ্যপ্রাণীদের জীবনযাপন। দেখেছেন রাতের বেলায় গাছের তলা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে চিতা। একটু দূরে বাইসন একটু জিরিয়ে নিচ্ছে। আর অজগর মনে হয় এই শীতে শীতঘুম দিয়েছে। নইলে অন্যসময় সেও তো এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়।
এমন অনেক কিছুই তিনি দেখে আসছেন। আগে ভয় করত। এখন ব্যাপারটা গা সওয়া হয়ে গেছে। জঙ্গলের প্রানীরাও বোধ হয় বুঝে গেছে, এই নিরীহ মানুষটা আর যাই করুক তাদের কোনও ক্ষতি করবে না। আর তিনিও বুঝে গেছেন, এতদিন যখন কিছু হয়নি, তখন আর ভয় পেয়ে লাভ নেই। ওরাও আমাকে কিছু করবে না।
এপারে ছোট্ট বনবস্তি আর ওপারে ভারত–ভুটান সীমান্ত। একসময় এখানে কে এল ও জঙ্গিদের আনাগোনা ছিল। তাই অস্থায়ীভাবে তৈরি হয়েছিল এসএসবি ক্যাম্প। সেই ক্যাম্প এখন স্থায়ী চেহারা নিয়েছে। সেখান থেকে একশো মিটার গেলেই দেখা মিলবে বিশাল এক বটগাছের। এমন বটগাছ হয়ত অনেক আছে। কিন্তু এই গাছের বিশেষত্ব হল, এই গাছের কোটরেই বাসা বেঁধেছেন একজন মানুষ। নেহাত শখে একদিন বা দুদিনের নয়, এই গাছের উপরেই টানা ১৬ বছর কেটে গেল তার জীবন।
আগে বাড়িতে থাকতেন। পারিবারিক অশান্তিতে ঘর ছাড়তে হয়। অনেকদিন বেপাত্তাই ছিলেন। আবার ফিরে এলেন। এবার আর সমতলে নয়। একেবারে বাসা বাঁধলেন গাছের কোটরে। মাটি থেকে প্রায় দেড় তলা উপরে। দিনের বেলায় মাঝে মাঝে নামেন। আশপাশের এলাকায় টুকটাক ভিক্ষে করেন। এখান ওখান যদি খাওয়া জুটে যায়, তাহলে তো ভালই। তারপর আবার উঠে পড়েন গাছের মাথায় তার আশ্রয়স্থলে।
জিগার লোহার জানান, ‘সে তো আছেই। আগে ভয় করত। কিন্তু এখন আর তেমন ভয় করে না। অভ্যাস হয়ে গেছে। বছর খানেক আগের কথা। একটা জরুরি কাজে নিচে নেমেছিলেন। সন্ধ্যা নাগাদ গাছে উঠতে গিয়ে দেখেন, তার বাসায় এক অজগর। অনেক কষ্টে সেই অজগরকে সরিয়ে নিজের বাড়ি দখলমুক্ত করলেন। তারও আগে, তখন তার মাচা ছিল কিছুটা নিচে। এক হাতি মাঝে মাঝেই শুঁড় গলিয়ে দিত। বাধ্য হয়ে, আরও কিছুটা উঁচুতে মাচাটা তৈরি করে সে। ”
বছর পাঁচ আগের কথা। তার গাছে থাকার কথা শুনে এগিয়ে এলেন কালচিনির বিডি ও। ইন্দিরা আবাস যোজনায় তার জন্য একটা বাড়ি করে দিলেন। সেই বাড়িতে মাত্র দুদিন ছিলেন। তারপর ফিরে গেলেন সেই গাছে। পাকা বাড়ি ছেড়ে আবার গাছে ফেরার প্রসঙ্গে জিগার বলেন, ‘ধুর, এখন আর বাড়ি–ঘর ভাল লাগে না। তার থেকে আমার গাছই ভাল। ওখানে অনেক নিশ্চিন্তে থাকি। নিশ্চিন্তে ঘুমায়। অভ্যাস হয়ে গেছে। ’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন